নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতার দুয়ার খুলছে —ভারতের রাষ্ট্রপতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : সংগৃহীত

ভারত সফরে দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে গতকাল সন্ধ্যায় এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। তাদের সাক্ষাতের বিষয় তুলে ধরে বিবৃতি দিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, যা দেশটির প্রেস ব্যুরো অব ইনফরমেশনের (পিআইবি) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু খুবই উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেছেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ দ্রুত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে এবং নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতার দুয়ার খুলছে। এগুলো দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা নিরূপণে ভূমিকা রাখবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শুক্রবার দুইদিনের সফরে ভারতে যান। এর আগে গত ৯ জুন তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি ভবনে তখন দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ হয়। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বলেন, ‘নিয়মিত এসব যোগাযোগ গভীর বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতিফলন, যা শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে।’

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করায় তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। সাক্ষাতে দুই নেতা আন্তরিকতার সঙ্গে ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, উন্নয়ন অংশীদারত্ব, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জ্বালানি নিরাপত্তা ও আন্তঃসংযোগসহ সব ক্ষেত্রেই সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের প্রতিফলন বলে অভিহিত করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। গতকাল তিনি তার অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সফর ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর (বন্ধুত্ব) গভীরতা প্রতিফলিত করে।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আরো লেখেন, ‘ভারত সরকারের নতুন মেয়াদে প্রথম রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে কতটা গুরুত্ব দেয়া হয় তা প্রমাণ করে। সত্যিকারের ভালো প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলগুলোকে সুসংহত এবং নতুন ভিত্তি তৈরি করছে। ভারতের নেবারহুড ফার্স্ট, অ্যাক্ট ইস্ট, এসএজিএআর এবং ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির সংযোগস্থলে বাংলাদেশ রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে হওয়া সমঝোতা স্মারক ও নথি সইয়ের প্রসঙ্গ টেনে জয়শঙ্কর আরো বলেন, ‘যে নথিতে সই করা হয়েছে, তাতে বন্ধনের ব্যাপ্তি প্রকাশ করে। সমুদ্র থেকে মহাকাশ, ডিজিটাল, সবুজ ও স্বাস্থ্য, সামরিক, রেল ও দুর্যোগ—মানবীয় উদ্যোগের সব ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অংশীদারত্ব আরো শক্তিশালী হবে।’

নরেন্দ্র মোদির নতুন সরকার গঠনের পর বিদেশী সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাই প্রথম ভারত সফর করলেন। সফরের দ্বিতীয় দিন গতকাল সকালে নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে দেয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা। রাষ্ট্রপতির গার্ড রেজিমেন্টের একটি অশ্বারোহী দল রাষ্ট্রপতি ভবনের গেট থেকে শেখ হাসিনার গাড়িবহরকে সংবর্ধনাস্থল পর্যন্ত নিয়ে যায়। পরে সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয়। গার্ড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীতও বাজানো হয়।

এরপর শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও তার সফরসঙ্গীদের পরিচয় করিয়ে দেন। পরে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে রাজঘাটে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর (মহাত্মা গান্ধী) সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।

সূচি অনুযায়ী এরপর রাজঘাট থেকে হায়দরাবাদ হাউজে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এবং দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকের পর ১০টি সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন