মনু নদের তীর রক্ষা বাঁধ

বর্ধিত মেয়াদ শেষেও কাজের অগ্রগতি ৪৭ শতাংশ

আফরোজ আহমদ, মৌলভীবাজার

প্রকল্পটি অনুমোদনের খবরে প্রথমে উচ্ছ্বসিত হলেও কাজে ধীরগতি শঙ্কা তৈরি করেছে নদের তীরবর্তী মানুষের মাঝে ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

বর্ষা মৌসুম এলেই ভাঙন আতঙ্কে থাকে মনু নদের তীরবর্তী বাসিন্দারা। প্রতি বছর উজানের ঢলে নদের কোথাও না কোথাও ভাঙন দেখা দেয়। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে বর্ধিত মেয়াদ শেষ পর্যায়ে থাকলেও কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪৭ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানোর আবেদন করেছে পাউবো।

নদের তীরের বাসিন্দাদের দাবি, প্রকল্পটি অনুমোদনের খবরে তাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছিল। কাজের ধীরগতি শঙ্কা তৈরি করেছে। শেষ পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দিহান তারা। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এক লাখ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবে। প্রায় দেড় লাখ মানুষ নদীভাঙনের ঝুঁকিমুক্ত হবে। এছাড়া প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বাঁধ ভেঙে বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।

তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূমি অধিগ্রহণে ধীরগতির কারণেই মূলত প্রকল্পের অগ্রগতি কম হচ্ছে। এছাড়া মামলা জটিলতা ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বাধার কারণে কয়েকটি স্থানে কাজ বন্ধ রয়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে মৌলভীবাজারে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। শহরের বড়হাট এলাকায় শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চল। বন্যার কবল থেকে শহর ও মনু নদের তীরবর্তী জনপদ রক্ষায় স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘মনু নদের ভাঙন থেকে মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া রক্ষা’ প্রকল্প হাতে নেয় পাউবো। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ২০২০ সালের জুনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। ব্যয় ধরা হয় ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মনু নদের ভাঙন রোধে সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটিতে রয়েছে ৭২টি প্যাকেজ। এরই মধ্যে ৭০টি প্যাকেজের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ৫৫টি প্যাকেজের কাজ চলমান। জেলার তিনটি উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও মৌলভীবাজার পৌরসভায় প্রকল্পের কাজ করা হবে। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৩০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধ (সিসি ব্লকের প্রতিরক্ষা কাজ), শহরের পশ্চিমাঞ্চলে আড়াই কিলোমিটার নতুন ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ, শহরের বিদ্যমান ৭৬৫ মিটার পুরনো ফ্লাড ওয়াল পুনর্বাসন ও উঁচু করা, ৮৬ কিলোমিটার পুরনো বাঁধ পুনর্বাসন, ৩৫টি স্থানে ১২ দশমিক ১১  কিলোমিটার চর অপসারণ ও ২২৮ একর জমি অধিগ্রহণ। এর মধ্যে ৩০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। নতুন ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ ও পুনর্বাসন কাজে ব্যয় হবে ৪০ কোটি টাকা এবং ৮৬ কিলোমিটার পুরনো বাঁধ পুনর্বাসনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধ ও ৮৬ কিলোমিটার পুরনো বাঁধ পুনর্বাসন কাজ হয়েছে ৪০ শতাংশ। এছাড়া ফ্লাড ওয়াল নির্মাণকাজের অগ্রগতি ১৫ ও চর অপসারণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৪৭ শতাংশ।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন জটিলতার মুখে পড়ছি। ৩০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধের জমি অধিগ্রহণ যুক্ত থাকলেও ৮৬ কিলোমিটার পুরনো বাঁধ পুনর্বাসনকাজে জমি অধিগ্রহণের সংস্থান নেই। বিনা পয়সায় সাধারণ মানুষ তাদের জমি না ছাড়ায় কাজের অগ্রগতি কম হচ্ছে। এজন্য তিন উপজেলায় তিনটি মামলাও হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে। এ সমস্যা সমাধানে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এজন্য আরো বরাদ্দ প্রয়োজন। এছাড়া কুলাউড়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের বাধার কারণে তিনটি প্যাকেজের কাজ বন্ধ রয়েছে। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে। তবে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’

জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, ‘পুরনো বাঁধ পুনর্বাসন কাজে জমি অধিগ্রহণ জটিলতার বিষয়টি নিরসনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে দিয়েছে। ওই কমিটি সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি সমাধানে তারা এখন ব্যবস্থা নেবে। প্রকল্পে অনুমোদিত জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। রাজনগরে জমি অধিগ্রহণে আমাদের কাজ শেষ করেছি। বাকি কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আমাদের কাছে কোনো কাজ আটকে নেই।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন