নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে রেকর্ড

বণিক বার্তা ডেস্ক

দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত কপ২৮ সম্মেলনের বাইরে জীবাশ্ম জ্বালানিবিরোধী বিক্ষোভ ছবি: রয়টার্স

জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে বিশ্বজুড়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ব্যবহার গত কয়েক বছরে নতুন প্রাণ পেয়েছে। এ বিষয়ে দেশগুলোর রয়েছে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা, যার খানিকটা এরই মধ্যে পূর্ণ হয়েছে। তা সত্ত্বেও ২০২৩ সালে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে। ফলে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ ৪০ গিগাটন ছাড়িয়ে গেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বৈশ্বিক জ্বালানি খাতবিষয়ক সংস্থা এনার্জি ইনস্টিটিউট। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের এমন ঊর্ধ্বগতি জলবায়ু বিজ্ঞানীদের আশাহত করবে। কেননা এর আগে ধারণা করা হয়েছিল ২০২৩ সালে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছবে। এরপর জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক অর্থনীতির আকার কমতে থাকবে। কিন্তু নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক অর্থনীতির সম্প্রসারণ এখনই থামবে কিনা অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ অঞ্চল ভেদে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ অবকাঠামো নির্মাণে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এনার্জি ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট জুলিয়েট ড্যাভেনপোর্ট বলেন, ‘গত এক বছরে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৫০৫ এক্সাজুলে পৌঁছেছে। বর্তমানে বিশ্বের প্রতিটি দেশই জ্বালানির জন্য মুখিয়ে আছে। ফলে প্রতিবেদনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।’

রেকর্ড কার্বন নিঃসরণের বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোয় শিল্প-কারখানা থেকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শিগগিরই সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছতে পারে। অর্থাৎ এরপর কমতে থাকবে। অন্যদিকে একই সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় কয়লা, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে।

বিশ্বজুড়ে বায়ু ও সৌর বিদ্যুতের মতো পরিবেশবান্ধব জ্বালানির উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছে এনার্জি ইনস্টিটিউট। তা সত্ত্বেও প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার সামান্যই কমেছে। ২০২৩ সালে সামগ্রিক জ্বালানি ব্যবহারে এর পরিমাণ ছিল ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগের বছরের ৮২ শতাংশ থেকে সামান্য কম।

গ্লোবাল এনার্জি রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী বায়ু ও সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন ১৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৭৪৮ টেরাওয়াট ঘণ্টায় পৌঁছে। তবে প্রকৃতি থেকে উত্তোলিত প্রচলিত জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির তুলনায় এটি যথেষ্ট নয়। গত বছর এ ধরনের জ্বালানির ব্যবহার ২ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৬২০ এক্সাজুলে পৌঁছেছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী গ্যাসের চাহিদা স্থির রয়েছে। কিন্তু কয়লার চাহিদা ১ দশমিক ৬ শতাংশ ও জ্বালানি তেলের চাহিদা ২ শতাংশ বেড়ে প্রথমবারের মতো দৈনিক ১০ কোটি ব্যারেলে উন্নীত হয়েছে।

জ্বালানি খাতের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেপিএমজির জ্বালানি ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগের যুক্তরাজ্যপ্রধান সিমন ভার্লে বলেন, ‘এ বছর নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদাও বেড়েছে। ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদা আরো এক বছর কার্যত ৮০ শতাংশের ওপর অপরিবর্তিত থাকল।’

এনার্জি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী প্রধান নিক ওয়েথ বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তরের ধীরগতি এ খাতের বৈচিত্র্যকরণের ধারণাকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমরা দেখছি, উন্নত দেশগুলোয় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এর ব্যবহার বাড়ছে।’

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার গত বছর ৮ শতাংশ বেড়েছে, যা দেশটির মোট জ্বালানি চাহিদা প্রবৃদ্ধির সমান। ২০২৩ সালে ভারতের মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৮৯ শতাংশই ছিল জীবাশ্ম জ্বালানি। দেশটিতে কয়লার ব্যবহার এই প্রথম সম্মিলিতভাবে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মোট কয়লা ব্যবহারের চেয়েও বেড়েছে। একই সময়ে চীনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে ৭ শতাংশ। এছাড়া বিশ্বের মোট কয়লা উত্তোলনের অর্ধেকেই করেছে এশিয়ার বৃহত্তম এ অর্থনীতি।

অন্যদিকে ইউরোপে জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদা ক্রমাগতভাবে কমছে। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। ফলে অঞ্চলটিতে শিল্প বিপ্লবের পর প্রথমবারের মতো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ৭০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে রাশিয়া থেকে ইউরোপে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানি ধসে পড়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে অঞ্চলটিতে গ্যাসের চাহিদা ৭ শতাংশ কমেছে, আগের বছর কমেছিল ১৩ শতাংশ। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিস্তৃত পরিসরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত নিয়ে পরিকল্পনা করেছে। এ কারণে ধারাবাহিকভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলো সম্প্রসারণ হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন