তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ছবি: বিসিবি

টি-২০ ফরম্যাটে আটবারের মুখোমুখিতে কখনই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তিনবারের দেখায় ফল যায় প্রোটিয়াদের পক্ষেই। সেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবারের মতো হারানোর অপূর্ব সুযোগ এলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ। তীরে এসে তরী ডুবল টাইগারদের। নিউইয়র্কে সোমবার রাতে ১১৪ রান তাড়া করতে নেমে স্নায়ুক্ষয়ী লড়াই শেষে বাংলাদেশ হেরেছে ৪ রানে।

 

তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব, অভিজ্ঞ তাসকিন আহমেদসহ পুরো বোলিং ইউনিট দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে ব্যাটিং শক্তিধর প্রোটিয়াদের ২০ ওভারে ১১৩ রানের বেশি করতে দেয়নি। বোলিং ইউনিট দুর্দান্ত পারফর্ম করে বাংলাদেশকে জয় তুলে নেয়ার দারুণ এক মঞ্চ গড়ে দিলেও ব্যাটাররা সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি।

 

জমে ওঠা লো-স্কোরিং ম্যাচে শেষ দুই বল থেকে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৬ রান। ২০তম ওভারের পঞ্চম বলে বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার কেশভ মহারাজের বলে ছক্কার আশায় দারুণভাবে হিট করেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ। যদিও মাহমুদউল্লাহ ও গোটা বাংলাদেশ দল, সেই সঙ্গে টাইগার সমর্থকদের হৃদয় ভেঙে দিয়ে বলটা লং-অনে একেবারে সীমানার কাছ থেকে তালুবন্দি করেন প্রোটিয়া দলনায়ক এইডেন মার্করাম!

 

তীরে এসে তরী ডোবার ‘পারফেক্ট’ চিত্র ফুটে উঠল এই বলে। বলটি কয়েক ইঞ্চি এদিক-ওদিক হলেই ছক্কা হয়ে যেত, আর জয়ের উল্লাসে ভাসতো বাংলাদেশ। অথচ মাহমুদউল্লাহকে ছক্কা পাওয়ার বদলে বিমর্ষ বদনে ফিরতে হলো সাজঘরের দিকে। তিনি মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েও থাকলেন। বিশ্বাস করতে যেন কষ্ট হচ্ছিল তার। দল জেতেনি, তাই ২৭ বলে ২০ রানের লড়াকু ইনিংসটি তার বিফলেই গেল। শেষ বলে নতুন ব্যাটার তাসকিন নিতে পারলেন মাত্র ১ রান। বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়াল ১০৯/৭।

 

মাহমুদউল্লাহর আগে দেশকে আক্ষেপে পুড়িয়েছেন তাওহীদ হৃদয়ও। শ্রীলংকার বিপক্ষে ২০ বলে ৪০ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে দলকে জেতানো এই ব্যাটার আজও ৩৪ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলে দলের জয়ের আশা জাগান। যদিও ১৮তম ওভারের প্রথম বলে কাগিসো রাবাদার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। বাংলাদেশ তখন জয় থেকে মাত্র ২০ রান দূরে। এরপর জাকের আলী অনিক (৮), রিশাদ হোসেন (০), তাসকিন (১) শুধুই হতাশার গল্প লিখলেন।

 

নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলতি বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত ভেন্যু। এখানে আগের ম্যাচগুলোতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে আগে ব্যাটিং করা দলগুলো। ব্যতিক্রম শুধু ভারত, যারা ১১৯ রানের পুঁজি নিয়েও পাকিস্তানকে হারিয়েছে।

 

এর আগে তরুণ পেসার তানজিম সাকিব শুরুতেই আগ্রাসী বোলিংয়ে নাস্তানাবুদ করেন প্রোটিয়াদের টপ অর্ডারে। সঙ্গে তাসকিনও আগুন ঝরানো বোলিং করেন। এ দুজন নেন ৫টি উইকেট।

 

তানজিম ও তাসকিনের আগুণে বোলিংয়ে ২৩ রানে ৪ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। এরপর ডেভিড মিলার ও হেনরিখ ক্লাসেন পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৭৯ বলে ৭৯ রান করেন বিপর্যয় সামাল দিয়ে দলকে ভালো সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান। শেষটা অবশ্য ভালো হয়নি তাদের। এই জুটি ভাঙার পরের ১৫ বলে উঠেছে মাত্র ১১ রান, এ সময় পতন হয় আরো একটি উইকেটের। ২০ ওভারশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১১৩/৬।  

 

তানজিম ১৮ রানে তিনটি, তাসকিন ১৯ রানে দুটি ও রিশাদ হোসেন ৩২ রানে একটি উইকেট নেন। অভিজ্ঞ বামহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে প্রোটিয়াদের ভীষণ চাপে রাখেন। যদিও ব্যাটিং ব্যর্থতায় বোলারদের জন্য দিনটি স্মরণীয় করে রাখা হলো না।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১১৩/৬। বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১০৯/৭। ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ রানে জয়ী। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন