মে মাসে প্রযুক্তি খাতে কর্মী ছাঁটাই কমেছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : সংগৃহীত

প্রায় দুই বছর ধরে কর্মী ছাঁটাই অব্যাহত রয়েছে বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে। শুরুটা হয় ২০২২ সালের শেষের দিকে কভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর। এরপর ২০২৩ সাল জুড়েই ছিল কর্মী ছাঁটাইয়ের মচ্ছব। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এ ধারা বজায় ছিল। তবে মে মাসে খাতটিতে কর্মী ছাঁটাই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

গুগল থেকে শুরু করে তোশিবা, বড় বড় প্রায় সব কোম্পানিই লোকবল কমিয়েছে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মী ছাঁটাই বিশ্লেষণকারী কোম্পানি লেঅফস ডট এফওয়াইআইয়ের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের মে মাসে ৩৯টি কোম্পানি ৯ হাজার ৭৪২ কর্মী ছাঁটাই করেছে। যেখানে এপ্রিলে ৫০টি কোম্পানি থেকে চাকরি হারিয়েছেন ২১ হাজার ৪৭৩ কর্মী। এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে কর্মী ছাঁটাই কমেছে ৭৫ শতাংশ।

গত ১৬ মে সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, জাপানি ইলেকট্রনিকস কোম্পানি তোশিবা অভ্যন্তরীণভাবে প্রায় চার হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, নতুন মালিকানার অধীনে কোম্পানির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার বিষয়টি। তবে কোম্পানিটি প্রায় এক হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেছে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ডভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাকেশন রেন্টাল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ভাসাকা প্রায় ৮০০ কর্মীকে বরখাস্ত করেছে।

তথ্যমতে, চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩০৪টি প্রযুক্তি কোম্পানি পুরো খাতজুড়ে প্রায় ৮৯ হাজার ১৯৩ জন কর্মী ছাঁটাই করেছে।

২০২৪ সালের মে মাসের ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে বৈশ্বিক পরিবহন খাত। খাতটির একাধিক কোম্পানি বড় আকারের ছাঁটাইয়ের ঘোষণা করেছে। এদের মধ্যে৷লুসিড মোটরস, রিভিয়ান ও ফিসকার মতো শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর নাম রয়েছে।

লেঅফস ডট এফওয়াইআই’র প্রতিবেদন বলছে, মে মাসে মার্কিন লাক্সারি ভেহিকল কোম্পানি লুসিড মোটরস ৪০০ কর্মী ছাঁটাই করেছে, যা তাদের মোট কর্মশক্তির ৬ শতাংশের সমান। মার্কিন ইভি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিভিয়ান মে মাসে দুই দফা কর্মী ছাঁটাই করেছে। আরেক মার্কিন অটোমেকার ফিসকার ইনকরপোরেশন এ খাতের চাকরি কমাতে অবদান রেখেছে। যদিও মে মাসের ছাঁটাইয়ের নির্দিষ্ট সংখ্যা জানায়নি কোম্পানটি। তবে মাসটিতে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি কর্মীকে ফিসকার কর্তৃপক্ষ ‘গোলাপি স্লিপ’ পাঠিয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কর্মী ছাঁটাইয়ের নানা কারণ থাকতে পারে। তবে সাধারণ কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে কোম্পানির পুনর্গঠন, ব্যয় সংকোচন, নতুন কোনো ক্ষেত্র চালু করতে অর্থ কিংবা সম্পদের পুনঃবণ্টন, কোম্পানির কৌশল পরিবর্তন, মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দা এবং যুদ্ধ ও মহামারীর প্রভাবের মতো ঘটনা।

বৈশ্বিক বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, অনিশ্চিত অর্থনৈতিক অবস্থার মুখে প্রযুক্তি শিল্পে ছাঁটাইয়ের প্রবণতা চলছে। এছাড়া ডিজিটাল বিজ্ঞাপনদাতাদের ব্যয় হ্রাস এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের ব্যয় নিয়ন্ত্রণও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে।

এদিকে বর্তমানে বিপুল ছাঁটাইয়ের আরেকটি বড় কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা চিহ্নিত করছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই)। এআই খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। এতে তৈরি হয়েছে অর্থের সংকট। কিন্তু বিনিয়োগকৃত খাত থেকে এখনই আয় আসছে না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে কর্মী ছাঁটাই এবং তা করেই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে তারা। একই সঙ্গে সমস্যা আরো প্রকট করেছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।

প্রসঙ্গত, কভিড-১৯ মহামারীর সময় বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষ ঘরে থেকে কাজ করেছে। এতে প্রযুক্তির চাহিদা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বিপুল কর্মী নিয়োগ দিয়েছিল বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। কিন্তু এখন চাহিদা কমে যাওয়ায় কর্মীদের বিদায় করা হচ্ছে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন