১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে শেখ হাসিনা

বঙ্গোপসাগরে বিমানঘাঁটির বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকার প্রস্তাব এসেছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে আয়োজিত ১৪ দলের বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দেন ছবি: পিআইডি

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্র ছিল বাংলাদেশে নির্বাচনই হতে দেবে না। তবে দেবে, আমার ক্ষমতায় আসতেও অসুবিধা হবে না, যদি আমি বঙ্গোপসাগরে কাউকে বিমানঘাঁটি করতে দিই। এটা কোনো এক সাদা চামড়ার দেশের প্রস্তাব। আমি একই জবাব দিয়েছি, আমি স্পষ্ট বলেছি, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। দেশের অংশ ভাড়া দিয়ে বা কারো হাতে তুলে দিয়ে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না। জনগণ চাইলে ক্ষমতায় আসব, না চাইলে আসব না।’

গণভবনে গতকাল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকের শুরুতে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার যুদ্ধ ঘরে-বাইরে সব জায়গায়; চক্রান্ত এখনো আছে। পূর্ব তিমুরের মতো বাংলাদেশের একটি অংশ নিয়ে; তারপর চট্টগ্রাম, মিয়ানমার...এখানে একটা খ্রিস্টান দেশ বানাবে, বঙ্গোপসাগরে একটা ঘাঁটি করবে। তার কারণ বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। এ জায়গার ওপর অনেকেরই নজর। সেটা আমি হতে দিচ্ছি না, এটাও আমার একটা অপরাধ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে বিমানঘাঁটি বানিয়ে কার ওপর হামলা চালাবে? যদি একটা দেশকে দেখানো হয়, সেটা তো না। আমি জানি আরো কোথায় যাবে। যে কারণে আমাদের সব সময় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, আরো হবে। কিন্তু এটা পাত্তা দিই না, সোজা কথা। দেশের মানুষ আমাদের শক্তি, মানুষ যদি ঠিক থাকে আমরা আছি।’ 

বাংলাদেশের উন্নতি অনেকের পছন্দ হচ্ছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে খাদ্য উৎপাদন করি, খোদ এক বড় দেশ বলে ফেলল, “এত খাদ্য উৎপাদনের দরকার কী? আমাদের তো যথেষ্ট আছে, আমরা তো দিতে পারি।” আমি বললাম, হ্যাঁ ওই আশায় আমি বসে থাকব!’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের একটা অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে দেখলাম, সেখানেও মূল্যস্ফীতি বিরাট সমস্যা।’

রিজার্ভের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, আমাদেরও। কারণ করোনার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, আমদানি-রফতানি সব বন্ধ ছিল। তখন বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারেনি। টাকাটা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে, তাই আমাদের রিজার্ভটা বেড়ে গিয়েছিল। তারপর যখন সবকিছু চালু হলো তখন খরচ বেড়ে গেল।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা না নিলে দেশ এগিয়ে নিতে পারব না। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আমাদের বিরোধী ছিল, এখনো তারা একটুও বদলায়নি। এটা হচ্ছে বাস্তবতা, এটা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপৎকালীন সময়ের খাদ্য মজুদ থাকলে রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। রিজার্ভ নিয়ে বলতে বলতে মানুষকে এত সচেতন করে দিয়েছি, সবাই এখন রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে, জিডিপি নিয়ে কথা বলে, এটা ভালো লক্ষণ। এখন মূল্যস্ফীতি কমাতে পারলে মানুষের স্বস্তি হতো। উৎপাদন যথেষ্ট হচ্ছে, কোনো অভাব নেই।’

সমালোচকদের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৪৪ টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে প্রায় ৩৪টি চালু আছে। সবাই কথা বলে, টকশোতেও কথা বলে, সারা দিন সমালোচনা করে। এত সংবাদপত্র, এত কথা বলার পরে, সব কথার শেষ কথা, কথা বলতে দেয়া হয় না। টেলিভিশনে সবাই যখন কথা বলে, আমরা তো গলা টিপে ধরি না, তা সত্য-মিথ্যা যা হোক।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে যে যার মতো সমালোচনা করছে, অপবাদ দিচ্ছে।’ 

১৪ দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের মতামত শুনব, আলোচনা করব। ভবিষ্যতে আমরা কীভাবে এগোতে পারি, সেদিকে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ছাড়া দেশের মানুষের কোনো কল্যাণ হবে না। গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, দুর্নীতিবাজ যদি বিদেশের মাটিতে রোজই আন্দোলন, সরকার উৎখাতের নানা রকম হুমকি-ধমকি দেয়, যতক্ষণ জনগণ সঙ্গে আছে ততক্ষণ সেটা কেয়ার করি না। দেশে জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ যেন করতে না পারে, যারা করবে তাদের ছাড় নেই। যতই মুরব্বি ধরুক, এদের আমরা ছাড়ব না।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন