আজ ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

হতে পারে ১০ চুক্তি-সমঝোতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে আজ দিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সফরে দুই দেশের মধ্যে ১০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই ও নবায়ন হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, শেখ হাসিনা ও সফরসঙ্গী দলের আজ বেলা ২টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটযোগে দিল্লির পালাম বিমানবন্দরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার কথা। দুদিনের এ সফর শেষে আগামীকাল স্থানীয় সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটযোগে ঢাকার উদ্দেশে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দিল্লি গিয়েছিলেন। তার এবারের সফর চলাকালে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা, যোগাযোগ বা সংযুক্তি ও জ্বালানিসংক্রান্ত বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আগামীকাল। দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকের পর দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনা, স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় এমওইউ ও চুক্তি বিনিময় এবং দুই নেতার প্রেস বিবৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা হতে পারে। পাশাপাশি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি, সীমান্ত হত্যা পুরোপুরি বন্ধের মতো বিষয়ও আলোচনায় আসতে পারে। এর আগে গত মে মাসে ঢাকা সফরে আসা ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয়মোহন কোয়াত্রার সঙ্গে আলোচনার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘ভারত তিস্তার প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী। এর ধারাবাহিকতায় ভারতের পক্ষ থেকে তিস্তার ব্যাপারে নতুন একটি প্রস্তাবও আসতে পারে।’

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সেপা (সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি) সংক্রান্ত আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেয়ার কথা রয়েছে। সেপা সই হলে দুই দেশের বাণিজ্যে ভারসাম্য আসার পথ সুগম হতে পারে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে ঋণচুক্তি বাস্তবায়নের গতি ত্বরান্বিত করা নিয়ে যৌথ ঘোষণা আসতে পারে। এছাড়া গুরুত্ব পেতে পারে জ্বালানি এবং কানেক্টিভিটিও। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২২ জুন দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর ১০টিরও বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অন্তত ১০টি চুক্তি ও এমওইউ সই হতে পারে। চারটির মেয়াদ শেষে নবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে। এসব চুক্তি ও এমওইউর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি, সংযুক্তি, অর্থনীতিসহ সহযোগিতার নানা খাত।

সফরের শুরুর দিন আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। আগামীকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীকে নয়াদিল্লির ফোরকোর্টে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেয়া হবে। সেখানে তিনি সশস্ত্র সালাম গ্রহণ ও গার্ড অব অনার পরিদর্শন করবেন। এছাড়া রাজঘাটে অবস্থিত মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল বিকালে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে তার সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর পুনরায় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন তিনি। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে তার একান্ত সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ছাড়াও শেখ হাসিনার সফরসঙ্গীদের মধ্যে থাকতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, ডাক, টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু প্রমুখ। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন। প্রতিনিধি দলে সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে থাকতে পারেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান, রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর প্রমুখ। এছাড়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক এটিএম রকিবুল হক ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তার সফরসঙ্গী হতে পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন