গবেষণার তথ্য

আন্তঃসামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির সেরা সময় দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিআইডিএস আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। পাশে অধ্যাপক ড. শ্যামল চৌধুরী ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

মানুষের মধ্যে ধৈর্য, আত্মসংযম ও পরার্থপরতার মতো আন্তঃসামাজিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সেরা সময় হচ্ছে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। বিশেষ করে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যেই ধৈর্য ও আত্মসংযমের বিকাশ ঘটে বেশি। আর পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পরার্থপরতার বা পরোপকারিতার গুণটি বিকশিত হয়। শিশুদের এসব দক্ষতা তাদের শিক্ষাগত ফলের ক্ষেত্রেও ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভালো করার জন্য কার্যকর। তাই সরকারি কিংবা পারিবারিকভাবে এসব দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিশুদের পেছনে বিনিয়োগের সেরা সময় এটাই। 

প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। যদিও এসব দক্ষতা শেখানোর কোনো ব্যবস্থা দেশের বিদ্যমান সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত নেই। কিন্তু ভারতসহ বিশ্বের ১০০টি দেশে প্রাথমিক স্কুলের সিলেবাসে এসব দক্ষতা শেখানো হচ্ছে। 

গতকাল সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত সেমিনারে এসব বিষয় উঠে আসে। সেমিনারে ‘‌ফরমেশন অব স্যোসিও-ইমোশনাল স্কিলস অ্যান্ড দেয়ার ইফেক্টস অন এডুকেশনাল অ্যাটেইনমেন্ট’ শীর্ষক গবেষণাপত্র তুলে ধরেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শ্যামল চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।

মূল আলোচনায় ড. শ্যামল চৌধুরী বলেন, ‘শিশুদের আন্তঃসামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কোন পর্যায় থেকে পারিবারিকভাবে বা সরকারি বিনিয়োগ বেশি দরকার সেটি দেখার জন্যই গবেষণাটি করা হয়। শিশুদের মধ্যে শূন্য থেকে ৩৬ মাস বয়স পর্যন্ত মানসিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। আর ১০ বছরের মধ্যে বুদ্ধিমত্তার মতো কগনেটিভ দক্ষতা গড়ে ওঠে।’ 

গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে মাত্র একদিন ৪০ মিনিটের একটি ক্লাসের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে পরার্থপরতা ৯ শতাংশ পর্যন্ত ও ১১ শতাংশ আত্মনিয়ন্ত্রণ দক্ষতা বেড়েছে। আর ধৈর্যের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য দেখা যায়নি। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উন্নতি দেখা গেছে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তিনটি দক্ষতার ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা দক্ষতা উন্নয়নে এগিয়ে ছিল। তবে পরার্থপরতার গুণটি পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় একই মাত্রায় বেড়েছিল। ফলে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই বেশি উপযুক্ত হিসেবে এ গবেষণায় উঠে এসেছে।’

প্রশ্নোত্তর পর্বে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানতে চান যে বর্তমান সিলেবাসে এসব দক্ষতা শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা আছে কিনা। জবাবে ড. শ্যামল চৌধুরী বলেন, ‘২০১৯ সালে গবেষণাটি চলাকালীন দেশের বিদ্যমান সিলেবাসে এসব দক্ষতা শিক্ষা দেয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তবে অল্প বিনিয়োগে সিলেবাসে এটা যুক্ত করতে পারলে বড় ধরনের রিটার্ন পাওয়া যাবে। বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে এটা সিলেবাসে যুক্ত আছে। এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও এসব দক্ষতার প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘এসব দক্ষতা থাকলে কর্মস্থলেও ভালো করার সুযোগ থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের দিকে তাকালেও বিষয়টি আমরা অনুধাবন করতে পারি। অল্প বয়সে তার মায়ের মৃত্যু হলেও তিনি কঠোর নিয়ম-কানুনের মধ্যে বাসার অন্য লোকজনের মাধ্যমে লালিত-পালিত হয়েছিলেন। আর এখন আমাদের দেশেও চরম দারিদ্র্যের দিন শেষ। তাই সামনে প্রাথমিক শিক্ষায় এসব দক্ষতা নিশ্চিত করাটাই এখন চ্যালেঞ্জ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন