কোটাবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে

নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

তৃতীয় দিনের মতো গতকাল শাহবাগ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের চলমান আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। আন্দোলনকারীরা গতকাল রাজধানীর শাহবাগ এলাকা অবরোধ করে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ দেখান। একই দাবিতে এদিন আরো বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও অবরোধ করেন। 

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা গতকাল শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এর আগে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দুপুর সোয়া ১২টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। সেখানে আগে থেকেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য অবস্থান নিলেও আন্দোলনকারীদের কোনো বাধা দেননি। পরে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্লোগান, বক্তব্য ও প্রতিবাদী সংগীত পরিবেশন করে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষার্থীরা। 

দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা সড়ক অবরোধের কারণে শাহবাগ ও আশপাশ এলাকায় দেখা দেয় তীব্র যানজট। ফার্মগেট, পল্টন, মগবাজার, সায়েন্স ল্যাবসহ ঢাবি এলাকার আশপাশের সব সড়কেই বন্ধ থাকে যান চলাচল। তবে অ্যাম্বুলেন্স এলে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য জায়গা করে দেন শিক্ষার্থীরা। 

আন্দোলনকারীরা তিনদিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হোসেন জানান, তাদের পরবর্তী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন-অফলাইনে গণসংযোগ, আগামীকাল বেলা ৩টায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ এবং রোববার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন। 

এদিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডে সকালে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পরে বেলা পৌনে ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ নগরীর উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সমন্বিতভাবে আজ আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে সকাল ১০টা থেকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক ও ঢাকা-রাজশাহী রেলপথ অবরোধের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। 

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালে দেয়া হাইকোর্টের রায় বাতিলের দাবিতে গতকাল দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কের উভয় লেনে যানজট সৃষ্টি হয়। আধা ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলমগীর কবীরের অনুরোধে তারা অবরোধ তুলে নেন।

একই দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় তারা অবস্থান নেন। পরে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ৩০-৪০ মিনিট ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এর আগে বুধবারও কোটা বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে তারা আধা ঘণ্টার মতো বিক্ষোভ করেছিলেন।

আন্দোলনে অংশ নেয়া চবি শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ‘কোটার মাধ্যমে চাকরি দিয়ে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। অযোগ্যরা চাকরি নিচ্ছে। এটা আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ। আগামীতে মেধাবী সমাজ গড়তে আমরা কোটা প্রথার বিলুপ্তি চাই।’

বৈষম্য দূর করা মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল উল্লেখ করে শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটার ফলে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে এবং যোগ্যরা বঞ্চিত হচ্ছেন। সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বিলোপ করার জন্য আমরা এ আন্দোলন করে যাচ্ছি।’

রেলপথ অবরোধ করে গতকালও আন্দোলন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা শহরের কেআর মার্কেট হয়ে আবদুল জব্বার মোড়ের দিকে যান। সেখানে রেলপথ অবরোধ করলে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকা পড়ে। প্রায় ২ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা সরে গেলে বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন