জাপানে ফিরছে ক্যাসেট

টাওয়ার রেকর্ডে ক্যাসেট দেখছেন একজন ক্রেতা ছবি: নিক্কেই এশিয়া

গান মুক্তি পাচ্ছে নিয়মিত। মুক্তি পাচ্ছে অ্যালবামও। কিন্তু বিশ্বজুড়ে এখন গান ও অ্যালবাম মুক্তির পুরনো প্রথা বদলে গেছে। আগে অ্যালবাম আসত ক্যাসেটে, এরপর সিডিতে। এখন সিঙ্গেল তো বটেই, অ্যালবামও মুক্তি পায় ক্লাউডে। অনেক প্লাটফর্মই আছে। এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় স্পটিফাই। কিন্তু ডিজিটাল এ যুগেও ভিন্ন চিত্র জাপানে। নতুন করে সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে ক্যাসেট। যদিও ক্যাসেটকে একটা সময় আবর্জনা হিসেবে ফেলে দিয়েছে বহু মানুষ, এখন সেই ক্যাসেট টেপই আবার আসছে নতুন করে।

টোকিওর বেশকিছু মিউজিক স্টোরে সম্প্রতি যুক্ত করা হয়েছে ক্যাসেট কর্নার। জাপানের মতো ডিজিটালাইজড দেশে নতুন করে ক্যাসেট আসার এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন সবাই। তরুণরাও ক্যাসেটের দিকে ঝুঁকছেন নস্টালজিয়া ও নতুন অভিজ্ঞতার জন্য। টোকিওতে মিউজিক স্টোরগুলোয় তরুণদের দেখা যায় ক্যাসেট খুঁজতে। কিন্তু কেন তারা ক্যাসেট খুঁজছেন? ২১ বছর বয়সী এক ছাত্র বলেন, ‘ক্যাসেট তখনই বাজাই যখন একটা গান আমি খুব মন দিয়ে শুনতে চাই। ডিজিটালের তুলনায় ক্যাসেট ভিন্ন রকম শব্দ নিয়ে হাজির হয়।’ তিনি আরো জানান, নিয়মিত স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে গান শোনার পাশাপাশি হাই স্কুল থেকে ক্যাসেট সংগ্রহ শুরু করেছেন। এখন মাঝে মাঝেই টোকিওর টাওয়ার রেকর্ড শিবুয়ায় তিনি ক্যাসেট দেখতে যান।

জাপানে এখন টাওয়ার রেকর্ডসের মতো আরো অনেক স্টোরে ক্যাসেট বিক্রি হয়। এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে নিক্কেই এশিয়া। বিক্রেতারা তাদের জানিয়েছেন, নতুন ও পুরনো উভয় ক্যাসেটেরই বিক্রি বেশ ভালো। দিন যত যাচ্ছে বিক্রি তত বাড়ছে। আর ক্রেতারাও তরুণ। সিংহভাগেরই বয়স ২০ ও ৩০-এর কোটায়। আশির দশকের পর ক্যাসেট নিয়ে এতটা আগ্রহ তারা কখনো দেখায়নি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে টাওয়ার রেকর্ডস তাদের আউটলেডে তিন হাজার ক্যাসেট টেপ নিয়ে নতুন একটি সেকশন খুলেছে। এর মধ্যে আছে নতুন ও পুরনো ক্যাসেট। চাহিদা দেখে আগের তুলনায় ছয় গুণ সংগ্রহ তারা এনেছে ক্রেতাদের জন্য। ক্যাসেট বিভাগ দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন কো তাকেদা। তিনি বলেন, ‘টিনেজার থেকে ৫০-এর কোটার ক্রেতারা আসছেন আমাদের কাছে। তবে ৩০-এর কোটার ক্রেতাই বেশি। আমার মনে হয়, নতুন প্রজন্মের কাছে ক্যাসেট একটা নতুন ধারার জিনিস। তাদের কাছে এক ধরনের সৌন্দর্য বা নান্দনিকতা নিয়ে ধরা দিয়েছে পুরনো এ মাধ্যম।’ তিনি আরো জানান যে কেবল জাপানিরাই নন, ট্যুরিস্টরাও আসেন ক্যাসেট কিনতে।

তাকেদা আরো জানান, সম্প্রতি ভিনিল রেকর্ডেরও বিক্রি বেড়েছে। কিন্তু ক্যাসেটের মূল্য ভিনিলের চেয়ে কম হওয়ার কারণে ক্যাসেটের বিক্রিই বেশি। জাপানে একটি ক্যাসেট টেপ ১ হাজার ইয়েনে বিক্রি হচ্ছে।

কেবল ক্যাসেট টেপ নিয়েও জাপানে মিউজিক স্টোর আছে। এমনই এক স্টোরের নাম ‘ওয়াল্টজ’। তারো সুনোদা ২০১৫ সাল থেকে স্টোরটি চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন শুরু করেছিলাম সে সময়ের তুলনায় পুরোপুরিই বদলে গেছে দৃশ্যপট।’ প্রথমে তারা কেবল ব্যবহৃত, পুরনো টেপ বিক্রি করতেন। এখন নতুন ক্যাসেটও বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘নতুন এ ধারাকে লক্ষ্য করে অনেক শিল্পী ক্যাসেট টেপে তাদের গান ও অ্যালবাম প্রকাশ করছেন।’

ক্যাসেট প্লেয়ারেরও নানা সংস্করণ হয়েছে নানা সময়। এর মধ্যে ওয়াকম্যান জনপ্রিয় হয়েছিল। আশির দশকের একটি পুরনো মডেল থেকে তোশিবা লাইফস্টাইল সম্প্রতি তৈরি করেছে ‘ওয়াকি’। এতে আছে ওয়্যারলেস সিস্টেম। শিবুয়ার সাইড-বি ক্রিয়েশন জানাচ্ছে, তাদের তৈরি করা ক্যাসেট টেপ ও ক্যাসেট প্লেয়ারের বিক্রি ২০১৭ সালের তুলনায় এখন ১০ গুণ।

কেবল জাপান নয়, ভারত, বাংলাদেশেও তরুণদের মধ্যে ক্যাসেট ও ক্যাসেট প্লেয়ার নিয়ে নতুন করে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তাদের অনেকেই একে দেখছেন নস্টালজিয়া বা নতুন কোনো ফ্যাশনের অংশ হিসেবে। সংখ্যায় কম হলেও টিনএজ ও টিনএজ পার করা অনেক তরুণের ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে বর্ণিল ক্যাসেট প্লেয়ার দেখা যায়। জাপানে ব্যাপারটা ঘটছে আরো বড় পরিসরে। সুনোদা বলেন, ‘ক্যাসেট আসলে শ্রোতার সঙ্গে থাকে। সে নিজেকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে পারে। নতুন প্রজন্মের জন্য ক্যাসেট এক ধরনের নান্দনিকতা ও ফ্যাশনের অংশ। আর যারা আগে ব্যবহার করেছেন, তারা আবার ক্যাসেটের মাধ্যমে নিজেদের নস্টালজিয়া জাগিয়ে তোলেন।’

নিক্কেই এশিয়া অবলম্বনে মাহমুদুর রহমান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন