নারী ও শিশু পাচারের বড় ট্রানজিট হয়ে উঠেছে ঝিনাইদহের যাদবপুর

নিহাল হাসনাইন

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

সীমান্তঘেঁষা গ্রাম ঝিনাইদহের যাদবপুর। এ গ্রামের দক্ষিণে সীমান্তের কিছু অংশে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় এলাকাটি চোরাচালানপ্রবণ হয়ে উঠেছে। স্বর্ণ ও মাদকের পাশাপাশি এখান দিয়ে সবচেয়ে বেশি ঘটছে নারী ও শিশু পাচারের ঘটনা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা নারী ও শিশুদের প্রথমেই নেয়া হয় এ যাদবপুরে। তাদের সেখানকার জিম্মিখানায় রেখে সুবিধামতো সময়ে সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার করা হয়।

গত দুই বছরে পাচারের আগ মুহূর্তে যাদবপুরের জিম্মিখানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ৫০ জন নারী ও শিশুকে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা গ্রামটি ঘিরে স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি হয়েছে নারী পাচারের সক্রিয় চক্র। 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে মহেশপুর উপজেলার সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে একাধিক চোরাচালান সিন্ডিকেটের তথ্য রয়েছে। তারা জানিয়েছেন, উপজেলার আট-নয়টি গ্রাম একেবারেই সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় সেখান দিয়ে স্বর্ণ, অস্ত্র, গরু, বিস্ফোরক ও মানব পাচার করা হয়। বাঘাডাঙ্গা ও রায়পুর দিয়ে ভারতীয় গরু ও মানব পাচার, বাঘাডাঙ্গা ও শ্যামকুড় সীমান্ত দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র এবং লেবুতলা ও রায়পুর সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণ পাচার হয়ে থাকে। আর যাদবপুর থেকে নারী ও শিশুদের পাচার করা হয়। সেখানে রয়েছে বেশকিছু জিম্মিখানা। এমনই একটি জিম্মিখানা থেকে পাচারের অপেক্ষায় থাকা তিন নারীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার বণিক বার্তাকে জানান, ঢাকার ডেমরা থেকে তিন নারী ৭ ফেব্রুয়ারি যাদবপুর আসেন। ভারতে কাজ দেয়ার কথা বলে মুন্নী নামক এক নারীর মাধ্যমে তারা যাদবপুর ইউনিয়নের জলুলী গ্রামে আসেন। এরপর একটি বাড়িতে তিনদিন ধরে বন্দি আছেন। এমন তথ্য জানিয়ে গত শনিবার রাত ২টায় একজন নারী ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে জরুরি উদ্ধার সহায়তার অনুরোধ জানান। তিনি জানান, তার বয়স ২৫ বছর, তার সঙ্গে থাকা অন্য দুজনের বয়স যথাক্রমে ২২ ও ৪০ বছর। যেকোনো সময় তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হতে পারে, তাই তিনি দ্রুত উদ্ধার সহায়তার অনুরোধ জানান। কলটি রিসিভ করেছিলেন ৯৯৯ কলটেকার কনস্টেবল মমিনুর রহমান। কনস্টেবল মমিন তাৎক্ষণিকভাবে ঝিনাইদহের মহেশপুর থানায় ঘটনাটি জানিয়ে দ্রুত উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।

২০২২ সালে নারী-শিশুসহ ২৬ জনকে যাদবপুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। ভারতে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, নড়াইল থেকে সংগ্রহ করে যাদবপুর জিম্মিখানায় রাখা হয়েছিল। পরে পাচারের আগ মুহূর্তে তাদের উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন