চারটি বিশেষায়িত কর ইউনিট চালু করছে এনবিআর

নজরুল ইসলাম

ছবি: বণিক বার্তা

চারটি বিশেষায়িত কর ইউনিট চালু করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে তিনটি ইউনিট আগামী সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করবে। এজন্য জনবল নিয়োগ চলমান রয়েছে। অফিস ভাড়া নেয়া হয়েছে। চলছে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বিশেষায়িত চারটি ইউনিট হলো ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিট, উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট, কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট (আইটিআই) এবং আন্তর্জাতিক কর ইউনিট। এরমধ্যে আন্তর্জাতিক কর ইউনিটের কাজ শুরু হতে আরো সময় লাগবে। বাকি তিনটি ইউনিট আগামী সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করবে।

উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিটের অফিস নেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকার কাকরাইলের আঞ্জুমান টাওয়ারে। এই ইউনিটে জনবল থাকবে ৫৫ থেকে ৬০ জন। বর্তমানে বিভিন্ন কর অঞ্চল উৎসে কর আদায় করে থাকে। পর্যায়ক্রমে উৎসে কর আদায় করবে এ ইউনিট। আয়কর বিভাগের বৃহৎ একটি অংশ আদায় হয় উৎসে কর থেকে। 

তবে এ ইউনিট সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এই ইউনিট উৎসে কর আদায় করবে নাকি সমন্বয় করবে তা এখনো ঠিক হয়নি।’

কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটে জনবল থাকবে ৭২ জন। তবে এ ইউনিটের অফিসের ঠিকানা এখনো প্রকাশ করেনি এনবিআর।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘করদাতার কর ফাঁকি ও আয়কর কর্মকর্তার কারণে হওয়া করফাঁকি সবই উদঘাটন করবে কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কাজ করবে এ ইউনিট।’

এই প্রসঙ্গে কর বিভাগের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কর পরিদর্শন পরিদপ্তর কর বিভাগের শৃঙ্খলা নিয়ে কাজ করে। কর বিভাগের দাপ্তরিক নিরীক্ষা করে থাকে। তার মাঝে করফাঁকি পেলে সেটাও উদঘাটন করে। আর কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট সরাসরি করফাঁকি উদঘাটন করবে। তাদের কাজ হবে গোয়েন্দাভিত্তিক।’

ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের জন্য অফিস ভাড়া করা হয়েছে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট ভবনে। এ ইউনিটের জনবল ১৬২ জন। আগস্ট মাস থেকে নতুন অফিসে যাওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে কর অঞ্চল-১৫ এর অফিসে অস্থায়ী কার্যালয়ে কাজ চলমান। একজন কর কমিশনার এ ইউনিটের প্রধান হবেন। এছাড়া একজন অতিরিক্ত কর কমিশনার ও সিস্টেম অ্যানালিস্ট থাকবেন।

ইউনিটের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘করদাতাদের যেন আয়কর অফিসে আসতে না হয়। বাসায় বসে রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। প্রাপ্তি স্বীকারপত্রও বাসায় বসে প্রিন্ট করে নিতে পারেন। যেকোনো তথ্য জানতে পারেন। আমরা সে ব্যবস্থাই নিচ্ছি।’

কর বিভাগের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে আয়কর ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ডিজিটাল হবে। অটোমেশনের আওতায় চলে আসবে কর ব্যবস্থা। করদাতারা আরামে কর দিতে পারবেন। একটি সিস্টেমে আয়করের সব সেবা দেয়া যাবে। এতে ভোগান্তি বা হয়রানি থাকবে না।’

চারটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, দেশের জনসংখ্যা ও করদাতার তুলনায় কর আদায় কর্মকর্তা কম। এছাড়া উপজেলা পর্যায়েও বিজনেস হাব বেড়েছে। এনবিআর এখনো সনাতনী পদ্ধতিতে কর আহরণ করে থাকে। বিশেষায়িত কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। টিআইএনধারী সবাই কর দিচ্ছেন না। কোনো কোনো কর অঞ্চলে একজন কর্মকর্তার বিপরীতে ৩০ হাজার রিটার্ন দাখিল হয়। স্বল্প কর্মচারী নিয়ে এগুলো সামাল দেয়া যায় না। এছাড়া সরকার মনে করছে দেশে ব্যবসার ব্যাপক প্রসার হয়েছে। বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়ি ও ফ্ল্যাটের ক্রেতাও বেড়েছে। দেশের বাইরে টাকা পাচারের অভিযোগও নিয়মিত উঠছে। অথচ এদেরকে ধরার সক্ষমতা আয়কর বিভাগের নেই। এদিকে এনবিআর সেবাও বাড়াতে চায়।

এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জানিয়েছে, দামি গাড়ি, ফ্ল্যাট ও বাড়ি মালিকদের করের আওতায় আনতে ডাটা ব্যাংক তৈরি করছে আয়কর বিভাগ। কর ফাঁকি দেয়া ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য ডাটাবেজের আওতায় আনা হচ্ছে। এসব তথ্য নিয়ে কাজ করবে কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট।   

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিটের ঘোষণা দেন। ২০২৪ সালে এসে সেটির বাস্তবায়ন হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন