মেলার মাধ্যমে আমরা দর্শককে ছাপচিত্র সম্পর্কে জানাতে চাই

প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীরা ছবি: সালাহউদ্দিন পলাশ, ডানে ছবি: অপু নন্দী

চিত্রকলায় ছাপচিত্র একটি আধুনিক মাধ্যম। বিশেষত আধুনিককালে চিত্রকলাকে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে এনে দিতে এ মাধ্যম বেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। রাজধানীর কলাকেন্দ্রে ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে ‘১২তম কিবরিয়া ছাপচিত্র মেলা’, চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ মেলার প্রস্তাবক ও আয়োজক হিসেবে শুরু থেকে যুক্ত আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক ড. রশীদ আমিন। ছাপচিত্র মেলার নানা দিক নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন এ শিল্পী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারিহা আজমিন

কিবরিয়া ছাপচিত্র মেলা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। বছর চলছে দ্বাদশ আসর। ছাপচিত্র নিয়ে বিশেষ আয়োজনের যাত্রাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকা আর্ট সেন্টারে, ধানমন্ডি / থেকে। আর্ট সেন্টারের একটি অংশ হিসেবে কিবরিয়া প্রিন্টমেকিং স্টুডিও গড়ে তোলা হয়। প্রথম দুই-তিন বছর আমরা সেখানেই মেলা করেছিলাম। তরুণ শিল্পী যারা ছাপচিত্র নিয়ে কাজ করছে বা যারা নতুন বিষয় নিয়ে পাস করেছে, হয়তো জায়গা পাচ্ছে না, তাদের কাজের একটি সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমাদের কিবরিয়া প্রিন্টমেকিং স্টুডিওর যাত্রা। নিয়ে আমাদের ২০১১ সালের দিকে আলোচনা হয়। আমরা ভেবেছি কীভাবে ছাপচিত্র সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষকে আরো জানাতে পারি। কারণ সত্যি বলতে আমাদের দেশের মানুষ খুব বেশি জানে না প্রিন্টমেকিং নিয়ে। মাধ্যমটিকে আরো বেশি ছড়িয়ে দিতে এবং তরুণদের আরো বেশি উৎসাহী করতে মেলার আয়োজন করা হয়। আমাদের ছাত্রদের মধ্যে যারা ছাপচিত্র নিয়ে কাজ করে তাদের একটি মিলনমেলা হয়েছিল ২০১১ সালের শেষের দিকে। সেখানে ভারতের শান্তিনিকেতন থেকে অধ্যাপক . নির্মলেন্দু দাস উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছাপচিত্র নিয়ে গবেষণা করেন। সেখানেই আমি ছাপচিত্র নিয়ে মেলা হতে পারে বলে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারপর সবার সম্মতিতে কিবরিয়া স্যারের নামে কিবরিয়া ছাপচিত্র মেলার পরিকল্পনা হয়েছিল।

আমাদের মূল লক্ষ্যই ছিল তরুণ শিল্পীদের ছাপচিত্র আঁকার সুযোগ করে দেয়া। বিভিন্ন পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপচিত্র বিভাগসহ ব্যক্তি উদ্যোগে যে প্রিন্টমেকিং স্টুডিওগুলো আছে তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়া। আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে চিঠি দিয়ে ২০১২ সালে কিবরিয়া ছাপচিত্র মেলা শুরু হয়েছিল। প্রথম মেলায় আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলাম। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে অংশ নিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, খুলনা, ইউডা চারুকলা বিভাগসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। প্রচুর দর্শক ভিড় করেছিল। বেশকিছু ছবি বিক্রিও হয়েছিল। বলা যায় সাফল্যের সঙ্গে মেলা শেষ হয়েছিল। এর ফলে তখন সবাই খুব উৎসাহ পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল প্রতি বছর চাইলে  আমরা মেলা করতে পারি। এভাবে কিববিয়া ছাপচিত্র মেলার যাত্রা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়নুল গ্যালারিতে বেশ কয়েকবার আমরা মেলা করেছি। এরপর কলাকেন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়।

ছাপচিত্র তৈরির কৌশল মূলত কেমন? বাংলাদেশে শিল্পমাধ্যমটির উৎকর্ষ সম্পর্কে জানতে চাই।

চিত্রকলার একটি অংশ ছাপচিত্র। চিত্রকলায় যে বিষয়টি হয় শিল্পী সরাসরি ক্যানভাসের ওপর রঙ দিয়ে ছবি আঁকেন। আর ছাপচিত্রে ভিন্নতা হচ্ছে বিভিন্ন সারফেসে ছবি এঁকে উপরিভাগের উপকরণ লাগানো অংশ দিয়েই ছবি তৈরি করা হয়। ছাপচিত্রের সুবিধা হলো ইচ্ছা করলেই ১০-২০টি ছাপ শিল্পী নিতে পারেন। আরো কিছু পদ্ধতি আছে এচিং, ড্রাইপয়েন্ট নামে।

চিত্রকলার ছবি একটি কপি হয়, কিন্তু ছাপচিত্রে সুবিধা হচ্ছে অনেকগুলো আসল কপি পাওয়া যায়। শিল্পী নিজের হাতেই করেছেন এমন একটি কাজের বেশকিছু কপি পাওয়া যায়। তবে শিল্পীর ইচ্ছে অনুযায়ী একটি নির্দিষ্টসংখ্যক ছবি ছাপানো হয়। এর বেশি কপি অন্য কেউ যদি করতে চায় তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে দর্শক সংগ্রাহক জানতে পারেন তিনি যে ছবিটি দেখছেন তার কয়টি কপি আছে। আবার অনেকগুলো কপি থাকার কারণে খুব সুলভ মূল্যে আমরা বিক্রিও করতে পারি।

ছাপচিত্রে আমাদের তরুণ শিল্পীদের আগ্রহ কেমন?

আমাদের তরুণ শিল্পীদের আগ্রহ অনেক বেশি। বাংলাদেশের ১৯টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ব্যক্তিমালিকানাধীন বেশকিছু স্টু্ডিও আছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আগরতলা গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফট। তাদের ছাপচিত্র বিভাগ অংশ নিয়েছে। তরুণরা এখানে বেশ উৎসাহ নিয়েই আসছে। কারণ মেলার মধ্য দিয়ে তাদের কাজগুলো দেখাতে বিক্রি করতে পারছে। ছবি খুব যে বিক্রি হচ্ছে এমন নয়। তবে আমাদের মেলা আরো বেশ কিছুদিন আছে, তাই আরো ভালো হবে বলেই আমরা আশা করছি।

এবারের আয়োজনে কয়টি প্রতিষ্ঠান কতজন শিল্পী অংশ নিচ্ছেন?

যে প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাপচিত্র বিভাগ আছে বলা যায় তারা সবাই অংশ নিয়েছে। যেমন, আগরতলার একটি প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ফাইন আর্টস বিভাগ আছে সবাই মেলায় যোগ দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়াও সফিউদ্দিন প্রিন্টমেকিং স্টুডিও, বেঙ্গল আর্টস, কসমস আর্ট গ্যালারিসহ আরো কিছু নতুন প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে।   

দর্শকের সাড়া কেমন?

দর্শক আসছে দেখছে। সুলভ মূল্যে মেলা থেকে ছবি সংগ্রহ করতে পারছে। আমাদের একটি উদ্দেশ্য আছে, কিরবিয়া ছাপচিত্র মেলার পেছনে আমরা দর্শকদের ছাপচিত্র সম্পর্কে জানাতে চাই। সেই সঙ্গে চাই শিল্পবোধ জাগ্রত এবং জনরুচি তৈরি করা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন