গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া সত্ত্বেও ২০২৩-২৪ বিপণন মৌসুমে সয়াবিন উৎপাদন পূর্বাভাস বাড়িয়েছে ব্রাজিল ক্রপ এজেন্সি (কোনাব)। সর্বশেষ প্রতিবেদনে কোনাব ব্রাজিলের সয়াবিন উৎপাদনের পরিমাণ আরো চার লাখ টন বাড়িয়েছে। ফলে চলতি বছর ১৬ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার টন সয়াবিন উৎপাদনের প্রত্যাশা করছে দেশটি। খবর রয়টার্স।
প্রতিবেদনে কোনাব সয়াবিন আবাদি জমির পরিমাণও বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। ২০২২-২৩ বিপণন বছরের চেয়ে চলতি বছর আবাদি জমির পরিমাণ বাড়বে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ মৌসুমে মোট ৪ কোটি ৫২ লাখ ৯৫ হাজার হেক্টর বা ১১ কোটি ১৯ লাখ ২৬ হাজার একর জমিতে সয়াবিন চাষের প্রত্যাশা করছে কোনাব।
বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন রফতানিকারক ও উৎপাদক দেশটিতে এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ জমিতে সয়াবিন আবাদ করা হয়েছে। তবে গত বছরের এ সময়ে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ জমিতে সয়াবিন চাষ সম্পন্ন হয়েছিল।
এ বছর দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে চাষাবাদ কার্যক্রমে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ব্রাজিলের মধ্য-উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে এ সমস্যা দেখা দেয়ায় চাষাবাদ কার্যক্রম দেরিতে শুরু হয়েছে।
তবে অনেক কৃষক কোনাবের আশাবাদী পূর্বাভাস সম্পর্কে সন্দিহান। এ বছর ২ দশমিক ৮ শতাংশ আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ার পূর্বাভাসের বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় জানিয়েছেন। তবে কোনাব বলেছে, বৈরী আবহাওয়ায় রোপণ বিলম্ব হলেও আবাদি জমির পরিমাণ কমবে না। যুক্তি হিসেবে সংস্থাটি পুনরায় রোপণের কথাও বলেছে।
এল নিনো আবহাওয়ার প্রভাবের কথা উল্লেখ করে কোনাব জানিয়েছে, শীর্ষ সয়াবিন উৎপাদনকারী মাতো গ্রোসোসহ বেশকিছু অঞ্চলে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবং উচ্চ তাপমাত্রার কারণে সয়াবিন রোপণ ব্যাহত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছু অঞ্চলে পুনরায় বীজ রোপণেরও প্রয়োজন হতে পারে। কিছু অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণেও ফলন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। যেমন দক্ষিণাঞ্চলে অত্যধিক বৃষ্টিপাত সয়াবিন রোপণ কার্যক্রমকে বিলম্বিত করেছে।
শুষ্ক ও গরম আবহাওয়ার কারণে মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে রোপণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা কৃষকের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, কোনাবের পূর্বাভাস উচ্চাকাঙ্ক্ষী। মাতো গ্রোসো অঞ্চলের এক কৃষক জানান, বৃষ্টির অভাবে তার এলাকায় চাষাবাদ কার্যক্রম থেমে আছে। এ বছর উৎপাদন ১৫ কোটি ৪০ লাখ টনের বেশি হবে না। মাতো গ্রোসোর অন্য একজন চাষী বলেন, ‘অনাবৃষ্টি কিছু এলাকায় পুনরায় বীজ রোপণ করতে বাধ্য করবে।’
ব্রাজিলের আবহাওয়া সংস্থা ইনমেট গরমের তীব্রতা বৃদ্ধির সতর্কতা জারি করেছে। তাদের ভাষ্যমতে, তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে, আগামীতে কৃষকদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হতে পারে।
কোনাবের নতুন পূর্বাভাসের প্রতিক্রিয়ায় সিক্রেডি বিশ্লেষক ফিলিপ কালিকোস্কি বলেন, ‘আবহাওয়া আরেকটি ব্যাপক ফলনের প্রত্যাশাকে হতাশ করতে পারে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে পরিমিত বৃষ্টিপাত না হলে পূর্বাভাস সংশোধন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়বে। সয়াবিন রোপণে বেশি বিলম্ব ঘটলে দ্বিতীয় ফলস ভুট্টার চাষাবাদও হুমকির মুখে পড়বে।’ তবে তিনিও রেকর্ড ১৬ কোটি ১৫ লাখ টন সয়াবিন উৎপাদনের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। কারণ মাঠ থেকে সয়াবিনের তোলার পর পরই ভুট্টার চাষাবাদ শুরু করেন কৃষক।
কোনাবের পূর্বাভাসে ২০২৩-২৪ বিপণন বছরে ভুট্টার ফলন গত বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বছর দেশটিতে খাদ্যশস্যটির প্রাক্কলিত উৎপাদন ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৯০ লাখ টন। ভুট্টা আবাদি জমির পরিমাণ ৫ শতাংশ কমে আসবে আর এতে ফলনও কমবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।