দলীয় নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী

ষড়যন্ত্রের কারণে আগামী নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন ছবি: পিআইডি

নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে আগামী নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জের হবে বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের সেভাবে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। গণভবনে গতকাল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষের জীবন যখন একটু উন্নত হয়, তখন এ দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার আছে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সব জায়গায় বদনাম করে বেড়ায়, মিথ্যা বলে বেড়ায়। আর কিছু আছে বিদেশী অনুদানের টাকা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দেয়। ‌যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করেনি, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, লুটপাট করেছে, নারী ধর্ষণ করেছে, নির্যাতন করেছে; তারাই সারাক্ষণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে যাচ্ছে। স্বাধীনতার সময় যারা আমাদের সমর্থন করেনি, তাদের কাছেই তাদের সব আত্মীয়তা। এটা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্য।’

নির্বাচনে কারচুপি করা বিএনপির অভ্যাস মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ভোট চুরি করা, এটাই তাদের রেকর্ড। গণতন্ত্র হরণ করা, এটাই তাদের রেকর্ড। তো ওদের মুখে এখন আবার আমরা গণতন্ত্র শুনি। যারা মিলিটারি ডিক্টেটরের হাতে তৈরি দল, তাদের কাছে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। তাদের কাছে ভোটের কথা শুনতে হয়। চুরি করা যাদের অভ্যাস, সেই চোরদের কাছে বাংলাদেশের জনগণ কী শুনবে, কী দেখবে?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেকোনো দুর্যোগে-দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগই কিন্তু মানুষের পাশে থাকে। এটাও প্রমাণিত, যেকোনো সময় আওয়ামী লীগ মানুষের কাছে থাকে। দেশের বাইরে গেলে সবাই বাংলাদেশের উন্নয়ন বিষয়ে আমাকে বলে—আপনার ম্যাজিকটা কী? আমি বলি—ম্যাজিক কিছু নাই ওখানে। আমার শক্তিশালী সংগঠন আছে। আর আমাদের সংগঠনের শক্তিশালী নীতিমালা আছে। আমাদের একটা লক্ষ্য আছে, একটা পরিকল্পনা আছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে, জনগণকে নিয়ে উন্নয়নের কাজ করি বলেই আমরা সাফল্য আনতে পেরেছি।’

আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়ে দলটির প্রধান বলেন, ‘আমাদের সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী। সংগঠনটা যেন আরো মজবুত থাকে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

গণভবনে গতকাল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘পরিবারসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে জোরপূর্বক গুম, হত্যা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করে বিএনপি। পিতৃহত্যার বিচার চাওয়ার ও বিচার পাওয়ার কোনো অধিকার তার ছিল না। ‌এটি ছিল মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আজকে আমরা ন্যায়বিচার না পাওয়ার পরিস্থিতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।’

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘আমাদের সরকার বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করেছে, যাতে মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই স্বল্প সময়ের মধ্যে বিচার পেতে পারে। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় বিচার কার্যক্রম ভার্চুয়ালি করা হয়েছে, যাতে মানুষ ঘরে বসে স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার পেতে পারে।’ চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে বিদ্যুতের কারণে জনগণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

একই দিন পরিবেশ মেলা ২০২৩, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২৩-এর উদ্বোধনের অংশ হিসেবে গণভবনে তিনটি চারা রোপণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষায় বৃক্ষরোপণ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমি গাছ লাগিয়েছি। আমি আশা করি, বাংলাদেশের সবাই (জনগণ) এটি (গাছ লাগাতে) অনুসরণ করবেন। বাংলাদেশ যাতে আরো সুন্দর, সবুজ ও উন্নত হয় সেজন্য ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ‌আমি চাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যেন কোনো ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। তাই সবাইকে গাছ লাগাতে বলছি।’

বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পরিপ্রেক্ষিতে ফলমূল, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনের জন্য প্রতিটি স্থানে গাছ লাগাতে এবং প্রতিটি এলাকাকে উৎপাদনের আওতায় আনতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের জনগণকে সংকট থেকে রক্ষা করতে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে। আমি দেশের প্রতিটি জনগণকে তিনটি গাছ লাগাতে অনুরোধ করতে চাই। যদি তা সম্ভব নাও হয় তবে অন্তত একটি গাছ লাগান।’

শিক্ষার্থীদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণেও গাছ লাগাতে উৎসাহিত করে প্রধানমন্ত্রী জানান, তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৮৪ সালে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, ১৯৮৫ সালে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করে এবং বাংলাদেশ কৃষক লীগকে কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অন্তত তিনটি বনজ, ফলদ ও ভেষজ চারা রোপণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিগত বছরের মতো এবারো আষাঢ় মাসের প্রথম দিনে আওয়ামী লীগ বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু করবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। 

এ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন