বাংলাদেশ
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ চাষ করে বিগত সময়ে উদ্ভাবিত অনেক ধানের চেয়ে দেড় গুণ বেশি ফলন পাচ্ছেন কৃষক। ব্রি ধান ৮৯ ও ৯২-এর ফলনও প্রায়
একই রকম পাওয়া যাচ্ছে। তিন জাতের নতুন এসব ধান চাষ করে বিঘাপ্রতি ফলন পাওয়া গেছে ৩৩ মণ। গাজীপুরের
কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে সোমবার বিকালে রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের উদ্যোগে ফসল কর্তন ও মাঠ দিবস
অনুষ্ঠনে এ তথ্য জানান
গবেষক ও কৃষক।
ব্রির মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর বলেন, ‘ধান চাষে অতিরিক্ত পরিমাণে পানি লাগে, কিন্তু নতুন জাতের এসব ধান চাষে তুলনামূলক পানি কম লাগে। চাল চিকন ও লম্বা হয়। ফলে বোরো সিজনে এ জাতের ধান চাষ করলে কম পানিতে বেশি ফলন পাওয়া যাবে এবং দাম বেশি মিলবে। তাছাড়া কম সময়ে পেকে যাওয়ায় এবং রোগবালাই কম হওয়ায় চাষীরা এ ধান চাষে আকৃষ্ট হচ্ছেন। এ বছর অন্যান্য জাতের ধানে বিভিন্ন পোকার আক্রমণের খবর পাওয়া গেলেও এ জাতের ধানে তা হয়নি। পোকার আক্রমণ না হওয়ায় এ ধান চাষে খরচও কম। আবার অন্যান্য ধান চাষে বিঘাপ্রতি যেখানে ১৮-২০ মণ পাওয়া যাচ্ছে, নতুন জাতের এ ধান উৎপাদন করা যাচ্ছে ৩০-৩৩ মণ পর্যন্ত।’
শাহজাহান কবীর বলেন, ‘প্রতি বছর আমাদের দেশের জনসংখ্যার সঙ্গে ২০-২২ লাখ লোক যোগ হচ্ছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে খাবারের নিশ্চয়তা দিতে হলে অবশ্যই ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানগুলো চাষ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
স্থানীয় কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমি প্রবাসে থাকার কারণে কৃষিকাজ করতাম না। মনে ধারণা ছিল কৃষি অলাভজনক। ব্রি ধান ৮৯, ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ আমার সেই ধারণা বদলে দিয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর প্রবাসে নয়, দেশেই কৃষিকাজে মনোযোগী হয়ে নতুন জাতের ধান চাষ করব।’
স্থানীয় মুক্তারপুর ইউনিয়নের ধনপুর গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক আলম মিয়া বলেন, ‘আমার বয়সে এ জাতের ধানের মতো ফলন পাইনি। বাম্পার ফলন পাচ্ছি। ব্রি ধান ৮৯, ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ জাতের চাল চিকন। এ তিন জাতের ধান চাষে পানিও কম লাগে, কীটনাশক লাগে না বললেই চলে। ফলনও অনেক বেশি হয়।’
কৃষক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমার পাঁচ বিঘা জমিতে আগে ব্রি ধান ২৮ ও ২৯ চাষ করতাম। তাতে বিঘাপ্রতি ১৮-২০ মণ ধান মিলত। নতুন জাতের ধান চাষে ৩০-৩২ মণ ধান উৎপাদন করতে পারছি। অর্থাৎ আগের চেয়ে আমি এখন বিঘাপ্রতি ১০-১২ মণ বেশি ধান উৎপাদন করতে পারছি। তাছাড়া খরচও কম লাগছে। রোপণের দেড় মাসের মধ্যেই আমরা এ ধান ঘরে তুলতে পারছি।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্রির পরিচালক (প্রশাসন) ড. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলোর ফলন আগের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান ২৮ ও ২৯-এর তুলনায় অনেক বেশি। এগুলো যদি ভালোভাবে পরিচর্যা করা যায় তাহলে অন্তত অনেক ধানের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। তাই পুরনো জাতগুলো বাদ দিয়ে নতুন জাতের ব্রি ধান ৮৯, ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ চাষ করতে হবে।’
মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের প্রধান ইব্রাহীমের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন ব্রি বিজ্ঞানী সমিতির সভাপতি ড. আমিনা খাতুন, ব্রি’র রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. খায়রুল কায়েস, এবিএম জামিউল ইসলাম, বীর জাহাঙ্গীর সিরাজী ও কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম।