হত্যা মামলার আসামি খুন, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খুলনা

ছবি: বণিক বার্তা।

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক শেখ আনসার উদ্দিন হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। পাভেল একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনের ভাতিজা। নিহত আনসার পাভেলের চাচা জাকির হোসেন হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।

খানজাহান আলী থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, আনসার উদ্দিন হত্যার ঘটনায় তার ছেলে শেখ তানভীর বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় পাভেলসহ ২৩ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারভুক্ত দুজন আসামিকে গ্রেফতার এবং সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পূর্বশত্রুতার জেরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

ওসি কামাল বলেন, শুক্রবার আনসার উদ্দিন খানজাহান আলী থানা এলাকার শিরোমণি পূর্বপাড়ার বায়তুল মামুর জামে মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে তার ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। বেলা সোয়া ২টার দিকে মসজিদের পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেলে তিন দুর্বৃত্ত তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। তাদের ছোড়া গুলি আনসারের বুকের বামপাশে বিদ্ধ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ আনসার উদ্দিনকে পাশের পরিত্যক্ত একটি টিনের ঘরের মধ্যে থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।

ওসি কামাল বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে আনসার উদ্দিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। ওইদিন বিকালেই দিঘলিয়ার লখোহাটি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এদিকে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে আনসার উদ্দিনের একমাত্র ছেলে ও মামলার বাদী শেখ তানভীর বলেন, স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে পূর্বশত্রুতার জেরে তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের স্বজনরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করছেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বারাকপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেলের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন, শেখ আনসার উদ্দিনকে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রভাব রয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আনসার এলাকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃত্ত করেন এবং ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। বারাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের পদও পান। এরপর প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়ান ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা গাজী জাকির হোসেনের পরিবারের সঙ্গে। বাজার কমিটির নির্বাচন, ইউপি নির্বাচন সব দ্বন্দ্বেই উঠে আসে তার নাম।

২০২০ সালের শুরুর দিকে বারাকপুর বাজার কমিটির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ আনসার। ওই বছরই করোনাকালীন চাল দেওয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনকে লাঞ্ছিত করে আনসারের লোকজন। একই বছর জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন স্থানীয় নারীরা। এসবের পেছনে আনসারের হাত ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বারাকপুর ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আনসার উদ্দিন। সেই সময় তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গাজী জাকিরের কাছে পরাজিত হন। ভোটের আগে প্রচারণার সময় দুইপক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকদফায় সংঘর্ষ বাঁধে। ভোটের দিন দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন পাঁচজন।

পরে ২০২২ সালে এক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেন। এ খুনের সঙ্গে আনসার উদ্দিনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে জাকিরের পরিবার।

এদিকে, আনসার উদ্দিনের ছেলে শেখ তানভীর বলেন, বাইরে বাবার কোনো শত্রু ছিল না। বারাকপুর বাজার কমিটির নির্বাচন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে যে দ্বন্দ তৈরি হয়েছে সেই পূর্বশত্রুতার জেরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।


দিঘলিয়া থানার ওসি রিপন কুমার সরকার বলেন, চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেন হত্যাসহ শেখ আনসার উদ্দিনের বিরুদ্ধে দিঘলিয়া থানায় সাতটি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো থেকে তিনি জামিনে ছিলেন। ২০২০ সালের পরই মামলাগুলো হয়েছে। মোটামুটি সবগুলো মামলাই গাজী জাকির হোসেন ও তার স্বজন বা সমর্থকদের করা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন