সাতক্ষীরায় মরে গেছে পাঁচ সহস্রাধিক রেইনট্রি গাছ

গোলাম সরোয়ার, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে মরে যাওয়া রেইনট্রি গাছের সারি ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে সাতক্ষীরার সড়ক-মহাসড়কের পাশে লাগানো পাঁচ হাজারের বেশি রেইনট্রি গাছ মরে গেছে। মরে যাওয়া এসব গাছ এখন সড়কে ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝেমধ্যে শুকনো ডাল ভেঙে যানবাহন পথচারীদের গায়ে পড়তেও শোনা যায়। জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা জানান, কয়েক কোটি টাকা মূল্যের এসব মরা গাছ সড়ক থেকে অপসারণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

মরো গাছগুলো আশাশুনি-সাতক্ষীরা, বৈকারী-সাতক্ষীরা, ভোমরা-সাতক্ষীরা, ফিংড়ি-সাতক্ষীরা, মুন্সিগঞ্জ-সাতক্ষীরা যশোর-সাতক্ষীরা সড়কে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মারা গেছে আশাশুনি-সাতক্ষীরা সড়কে।

উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ পরিবেশবিদের অভিমত, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া, খাদ্য সংকট মাটির ক্ষার বাড়ায় এসব গাছ মরে যেতে পারে।

এদিকে মরা গাছের পচনশীল অংশ ভারতে পাচার হচ্ছে। একটি চক্র মরা রেইনট্রি গাছের ছাল পোকা সংগ্রহ করে ভারতে পাচার করছে।

আশাশুনি-সাতক্ষীরা সড়কের পুরনো সাতক্ষীরা এলাকার বাসিন্দা আছের আলী আজিজুর রহমান জানান, দুই থেকে আড়াই বছরে আশাশুনি সড়কের অন্তত এক হাজারের অধিক বড় বড় রেইনট্রি গাছ মরে গেছে। কী কারণে এসব গাছ মরে গেছে তা কেউ বলতে পারে না। এসব মরা গাছের পচনশীল অংশ পোকা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে কিছুসংখ্যক লোক। শোনা যাচ্ছে মরা গাছের পচা অংশ পোকা ভারতে পাচার করা হচ্ছে।

বৈকারী-সাতক্ষীরা সড়কের ভাদড়া এলাকার ইউপি সদস্য গোলাম হোসেন জানান, সড়কের দুই পাশে অসংখ্য বড় বড় রেইনট্রি গাছ মরে গেছে। সীমান্তের লোকজন এসব গাছের ছাল পচে যাওয়া অংশে জন্ম নেয়া পোকা সংগ্রহ করে ভারতে নিয়ে যাচ্ছে। শুনেছি ভারতে প্রতি কেজি রেইনট্রি গাছের ছাল পোকার মূল্য ৮০০-৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খলিলুর রহমান জানান, জেলা পরিষদের অধীন এসব সড়কে কমপক্ষে পাঁচ হাজারের অধিক রেইট্রি গাছ মরে গেছে। এসব গাছের দাম আনুমানিক থেকে সাড়ে কোটি টাকা। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সার্ভে করে দ্রুত এসব মরা গাছ অপসারণ করা হবে।

এছাড়া সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়ক যশোর-সাতক্ষীরা সড়কেও অসংখ্য রেইনট্রি গাছ মরে গেছে। সাতক্ষীরা সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম বণিক বার্তাকে জানান, যেসব এলাকার সড়কের গাছ মরে যাচ্ছে তার অধিকাংশই সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের। খুব কমসংখ্যক গাছ মরে গেছে সড়ক জনপথ বিভাগের। তার পরও দ্রুত মুন্সিগঞ্জ সড়ক যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের মৃত বা ঝুঁকিপূর্ণ গাছ সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে তিনি সড়ক জনপথ বিভাগের অধীনে কী পরিমান রেইনট্রি গাছ মরে গেছে তার পরিসংখ্যান দিতে পারেননি।

সাতক্ষীরা সামাজিক বন বিভাগের সহকারী বনরক্ষক নুরুন্নাহার বলেন, সাতক্ষীরার অধিকাংশ সড়কের পাশে লাগানো রেইনট্রি গাছ মরে যাচ্ছে। একেকটি গাছের বয়স ২০-২৫ বছর হবে। যেহেতু এসব গাছের মালিক সামাজিক বন বিভাগ নয়, তবে কী কারণে গাছ মরে যাচ্ছে সে বিষয়ে বন বিভাগের গবেষণা কেন্দ্রে জানানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান . নাসরিন আক্তার বণিক বার্তাকে জানান, রেইনট্রি গাছ মরে যাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাটির লবণাক্ততা ক্ষার বেড়ে যাওয়া। তাছাড়া প্রত্যেক গাছের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মৌসুমি বৃষ্টি না হলে রেইনট্রি গাছ খাদ্য সংকটে পড়ে। ফলে বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মরে যেতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন