চীনের বিকল্প হয়ে ওঠার পথে ভারতের অগ্রযাত্রা

বণিক বার্তা ডেস্ক

অন্ধ্র প্রদেশের হিন্দুপুর শহরের টেক্সপোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজের এক টেক্সটাইল কারখানা। নিটিং মেশিন পরিচালনা করছেন এক কর্মী ছবি: রয়টার্স

ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি মুহূর্তে সর্বোচ্চে রয়েছে। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতি। এমন একটি সময়ে ভারত সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে যখন বিশ্বের উৎপাদকরা চীনের বিকল্প কিছু খুঁজতে শুরু করেছেন। আর সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করতে চান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। লক্ষ্যে ভারত সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটের ২০ শতাংশ ব্যয় করছে মূলধনি বিনিয়োগে। বিনিয়োগের পরিমাণ দেশটির এক দশকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এর আগে বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ হিসেবে চীনকে অতিক্রম করেছে ভারত। এখন মোদি সরকারের লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক দিক দিয়েও চীনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া। আর কাজে যদি তিনি সফল হন তাহলে পূর্বসূরিদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন তিনি। তবে লক্ষ্য অর্জনে নিজের দেশের কিছু ত্রুটির সঙ্গে লড়াই করতে হবে নরেন্দ্র মোদিকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি।

ভারতের অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ইনফোসিস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা নন্দন নীলকানি বলেন, ভারত এখন বিপুল পরিবর্তন প্রক্রিয়ার চূড়ায় রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পুরনো অনেক কিছুই দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে।

সরবরাহ চেইনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বরং ভারতের জন্য অনুকূল হয়েছে। কারণ জিরো কভিড নীতির কারণে চীননির্ভরশীলতা কমাতে শুরু করেছে অনেক কোম্পানি। বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানির নেয়া চায়না প্লাস ওয়ান কৌশলের বড় সুবিধাভোগী হতে পারে ভারত ভিয়েতনাম। এরই মধ্যে অ্যাপলের মূল তিন তাইওয়ানিজ সরবরাহকারী মোদি সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা পেয়েছে। এর মাধ্যমে স্মার্টফোনের উৎপাদন রফতানি বাড়ানো হবে। এরই মধ্যে গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরে আইফোনের দ্বিগুণ চালান গেছে।

চীন জার্মানির মতো উৎপাদন সক্ষমতার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ধীরগতির হয়ে পড়ায় স্বাভাবিকভাবেই নতুন উৎপাদন ক্ষেত্র খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে। কারণ বিশ্ব অর্থনীতির চাকা সচল রাখাই গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক মরগান স্ট্যানলির পূর্বাভাস বলছে, চলতি দশকে ভারতের বার্ষিক উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি এমন জায়গায় পৌঁছবে যে ৪০ হাজার কোটি ডলারের বেশি আয় করতে সক্ষম এমন তিনটি দেশের একটি হবে দেশটি।

নীলকানি বলেন, এখন মানুষ বিনিয়োগের সবচেয়ে ভালো স্থানটি খুঁজে বের করতে চায়। অথচ গত ১৫ বছরেও ভারতের বিষয়ে আগ্রহ দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ অবশ্য নতুন নয়। ২০১৪ সালেই তিনি মেক ইন ইন্ডিয়া শীর্ষক প্রচার শুরু করেন। যা অনেকটা ছিল চীন, সিঙ্গাপুর বা দক্ষিণ কোরিয়া তাইওয়ানের অনুকরণ। দেশগুলো উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশের কাতারে উঠেছিল। দেশগুলো বিশ্ব চাহিদার কথা মাথায় রেখে পণ্য উৎপাদন করত। লক্ষ্য পূরণে উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোরও দিয়েছিল ভারত। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির ভাষণে নরেন্দ্র মোদি বলেন যে ভারত বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ২৫ বছরের মধ্যে ভারত উন্নত দেশে পরিণত হতে চায়।

তবে লক্ষ্য পূরণে ভারতে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা কিছু ব্যবস্থার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদিকে লড়াই করতে হবে। যার অন্যতম হলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। ক্ষমতা গ্রহণের সময় অবশ্য এসব প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। কথা ছিল, ভারত হবে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য দুর্নীতিমুক্ত দেশ। এসব লক্ষ্য শতভাগ পূরণ না হলেও অবকাঠামো খাতে এগিয়েছে ভারত। বিস্তৃত হয়েছে সড়কপথে যোগাযোগ, আকাশে অভ্যন্তরীণ পথে যাত্রী সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের লাখো মানুষকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের আওতায় আনা গেছে। তবে একই সময়ে সম্পদে বৈষম্য বেড়েছে বলেও একটি পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।

নরেন্দ্র মোদি সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সঞ্জীব স্যানাল বলেন, ভারত সরকার এখন নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টির ওপর জোর দিচ্ছে। যেন সব ভারতীয় সমান সুযোগ পায় এবং দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে।

চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে ভারত সরকার আগামী কয়েক বছরে অনেকগুলো শিল্প খাতে হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি প্রণোদনা দিতে যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু অর্থ ব্যয় হবে উইস্ট্রন করপোরেশনের মোবাইল ফোন সেট উৎপাদনে, হন হাই প্রেসিশন ইন্ডাস্ট্রির চিপ উৎপাদনে এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সৌরবিদ্যুতের প্যানেল তৈরিতে। এর পরের ধাপ হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ উৎপাদকে পরিণত হতে উৎপাদন সক্ষমতা বা ব্যাপ্তি বাড়ানো। বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবেই ধাপে ধাপে চীনের বিকল্প হয়ে ওঠার পথে এগোচ্ছে ভারত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন