৫ কোম্পানি বৈশ্বিক প্লাস্টিক দূষণের এক-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্লাস্টিক দূষণে শীর্ষে রয়েছে খাদ্য ও পানীয় খাতের জায়ান্ট কোম্পানিগুলো ছবি: রয়টার্স

প্লাস্টিকের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে সৃষ্ট দূষণে নানাভাবে প্রভাবিত হচ্ছে পরিবেশ-প্রতিবেশ। এ দূষণ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণও। প্লাস্টিকের এমন নেতিবাচক ভূমিকা নিয়ে সাম্প্রতিক বছরে সতর্কতা বাড়লেও ব্যবহার হ্রাসে অগ্রগতি খুবই সামান্য। আশঙ্কার বিষয় এ ধরনের দূষণে বৈশ্বিক ভোক্তাপণ্য জায়ান্টগুলোর অবদান সবচেয়ে বেশি। মাত্র পাঁচটি কোম্পানিই বৈশ্বিক প্লাস্টিক বর্জ্যের এক-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। খবর দ্য হিল।

সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেখা যায়, ২০১৮-২২ সাল পর্যন্ত সংগ্রহ করা প্লাস্টিক বর্জ্যগুলোর এক-চতুর্থাংশ এসেছে পাঁচটি কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য থেকে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে মুর ইনস্টিটিউট ফর প্লাস্টিক পলিউশন রিসার্চ।

চার বছরে সংগ্রহ করা ১৮ লাখেরও বেশি বর্জ্যের মধ্যে নয় লাখেরও বেশি ব্যবহার হয়েছে পরিচিত পণ্য ব্র্যান্ডে। গবেষকরা দেখেছেন, বৈশ্বিক প্লাস্টিক বর্জ্যের বেশির ভাগের উৎস হিসেবে ৬০টিরও কম কোম্পানি। এর মধ্যে ২৪ শতাংশের উৎস হিসেবে পাঁচটি কোম্পানিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, পানীয় ও স্ন্যাকস জায়ান্ট কোকা-কোলা একাই বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডেড প্লাস্টিক দূষণের ১১ শতাংশের উৎস। এ গবেষণায় দূষণে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এটি। শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির বাকি চারটি হলো পেপসিকো, নেসলে, ড্যানোন ও আলট্রিয়া। এর মধ্যে আলট্রিয়া তামাকজাতীয় পণ্য বাজারজাত করে। বাকি শীর্ষ পাঁচের তিনটি কোকা-কোলার মতোই খাদ্য ও পানীয় জায়ান্ট।

প্লাস্টিক ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে আনুপাতিক হারে দূষণও বাড়ে বলে জরিপে দেখা গেছে। প্রতি ১ শতাংশ প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়লে দূষণে ১ শতাংশ বেশি অবদান রাখে।

প্লাস্টিক দূষণ কমানোর অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে পুনর্ব্যবহারকে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু প্লাস্টিকবিরোধী একটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে পুনর্ব্যবহারের জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছে তা পরিস্থিতির পরিবর্তনে যথেষ্ট নয়। ফেব্রুয়ারিতে ক্লাইমেট ইন্টেগ্রিটি নামের সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে জানায়, বেশির ভাগ প্লাস্টিক সম্পূর্ণরূপে পুনর্ব্যবহার হয় না। এর বদলে ভূমিতে গিয়ে জমা হচ্ছে। লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীদের পৃথক এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, প্লাস্টিক শিল্প থেকে উষ্ণায়নে ভূমিকা রাখা গ্যাসের পরিমাণ চার গুণ পর্যন্ত নির্গত হয়।

মুর ইনস্টিটিউট ফর প্লাস্টিক পলিউশন রিসার্চের গবেষণা পরিচালক ও গবেষণা দলের প্রধান লেখক উইন কাউগার বলেন, ‘প্লাস্টিক উৎপাদন ও প্লাস্টিক দূষণের মধ্যে সম্পর্ক সত্যিই আমাকে বেশি অবাক করেছিল।’

তিনি জানান, খুচরা ও গৃহস্থালি পণ্য উৎপাদনের মতো কোম্পানির তুলনায় খাদ্য ও পানীয় খাত থেকে প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ কিছুটা বেশি। খাদ্য ও পানীয় শিল্পে একক ব্যবহারের প্লাস্টিকের মোড়ক ব্যবহার করা হয়। তাই এখান থেকে বেশি বর্জ্য আসছে।

অবশ্য নিজেদের ভূমিকা নিয়ে গবেষণায় দেয়া তথ্যের বিরোধিতা করেছে আলট্রিয়া। তামাকপণ্য বাজারজাত করা প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র বলেন, ‘‌গবেষণাটি আলট্রিয়াকে ভুলভাবে পর্যালোচনা করেছে। গবেষণায় ৮০টিরও বেশি দেশের তথ্য অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আলট্রিয়ার সহযোগী সিগারেট কোম্পানি ফিলিপ মরিস ইউএসএ (পিএমআই) শুধু যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম পরিচালনা করে। সুতরাং, এ জরিপে উল্লেখিত বৈশ্বিক ব্র্যান্ডেড প্লাস্টিক দূষণের ২ শতাংশের জন্য আলট্রিয়া ও ফিলিপ মরিসের পক্ষে দায়ী হওয়া অসম্ভব।’

তামাকজাত পণ্যকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘বিলাসীপণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এগুলো আন্তর্জাতিক সীমা অতিক্রম করে না এবং বর্জ্যে অবদান রাখে না। আলট্রিয়ার এমন যুক্তির বিপরীতে মুর ইনস্টিটিউট জানায়, আলট্রিয়া ও পিএমআই দুটি পৃথক কোম্পানি। কিন্তু তারা একই ব্র্যান্ডের অধীনে অনেক দেশে ভিন্ন নামে বিক্রি হওয়া পণ্যের মালিক। এর মধ্যে রয়েছে মার্লবোরো, এলঅ্যান্ডএম ও পার্লিমেন্ট। গবেষণায় এসব ব্র্যান্ডকে আমলে নিয়ে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সে হিসেবে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে যে আলট্রিয়া ও পিএমআইকে শুধু ব্র্যান্ড নামের ওপর ভিত্তি করে আলাদা করা যাবে না।

এদিকে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার নিয়ে নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কোকা-কোলা। এ বৈশ্বিক জায়ান্টের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্যাকেজিংয়ের শতভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে প্যাকেজিংয়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান ব্যবহার করা হবে।’

পুনর্ব্যবহারের কিছু সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ সম্পর্কেও জানিয়েছে জায়ান্টটি। কোকা-কোলার মুখপাত্র জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে বিক্রি করা প্রতিটি বোতল বা ক্যান সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে কোম্পানিটি। এ সময়ের মধ্যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বা ফেরতযোগ্য প্যাকেজিংয়ের ব্যবহার ২৫ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এ সময়ে রিফিলযোগ্য বোতলের ব্যবহার বাড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন