সাতক্ষীরায় ১৩৬ কোটি টাকার কুলের বাজার

গোলাম সরোয়ার, সাতক্ষীরা

লাভজনক হওয়ায় কুল চাষে ঝুঁকছেন সাতক্ষীরার চাষীরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সাতক্ষীরার কুল বা বরইয়ের বাজার দ্রুত প্রসার হচ্ছে অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে স্বল্পসময়ে অধিক মুনাফা পাওয়ায় প্রতি বছর বাড়ছে এর আবাদ তিন বছরের ব্যবধানে ফলটির অন্তত ৪০ শতাংশ আবাদ বেড়েছে জেলায় মূলত বিলাতি মিষ্টিকুল, থাই আপেল, বল সুন্দরী, কাশ্মীর আপেল, দেশী আপেল, নারকেল, টক বোম্বাই স্থানীয় টক জাতের কুল চাষ বেশি হয় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ফল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জেলায় বছরে ১৭ হাজার টন কুল উৎপাদন হচ্ছে, যার গড় মূল্য ১৩৬ কোটি টাকার ওপরে

জেলার তালা উপজেলার ভৈরবনগর এলাকার কুলচাষী পাঞ্জাব আলী জানান, আট বছর ধরে তিনি কুল চাষ করছেন অন্যের জমি লিজ নিয়ে তাতে বাগান করেছেন চাষী সাত বিঘার কুল বাগানে থাই আপেলকুল, বল সুন্দরীকুল, বিলাতি মিষ্টি, কাশমির আপেলকুল, দেশী আপেলকুল, নারকেলকুল টক বোম্বাইসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫০০টি গাছ রয়েছে এসব গাছ থেকে একনাগাড়ে গত ছয় বছর ধরে ফল পাচ্ছেন বলে জানান পাঞ্জাব আলী বছরে তিনি ১২-১৩ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেন চলতি মৌসুমেও একই পরিমাণ বাগানে কুল চাষ করেছেন এরই মধ্যে বিক্রিও শুরু করেছেন স্থানীয় পাইকারের পাশাপাশি খুলনার ব্যবসায়ীরা তার বাগান থেকে ফল নিয়ে যান

পাঞ্জাব আলী আরো জানান, গত বছর তার সাত বিঘা বাগানের কুল বিক্রি হয়েছে ১২ লাখ টাকার ওপরে আর উৎপাদন খরচ হয় জমি লিজ, সেচ, গাছের পরিচর্যা, সার কীটনাশক, ভিটামিন শ্রমিকের মজুরি বাবদ সাড়ে লাখ টাকা এতে তার লাভ হয়েছে লাখ টাকার ওপরে তবে চলতি মৌসুমে গাছে যে পরিমাণ ফলন এসেছে তাতে ১৩-১৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন কুলচাষী

জেলার কলারোয়া উপজেলার কোমরপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক লাল্টু জানান, গত পাঁচ বছর ধরে নিজের জমিতে তিনি কুল চাষ করছেন গত বছর ১০ বিঘা জমিতে আপেলকুল উৎপাদন করে লাভ করেছেন সাড়ে লাখ টাকা তিনি বলেন, অন্যসব ফসলের চেয়ে কুল চাষ খুবই লাভজনক মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন মাসেই ফল পাওয়া যায় ধান, পাট বা সরিষা উৎপাদনে এত বেশি লাভ সম্ভব হয় না তাছাড়া নিরাপত্তাঝুঁকিও কম স্কুলশিক্ষক আরো বলেন, ১০ বিঘা জমিতে তার কুল চাষ করতে লাখ টাকার মতো খরচ পড়ে সেখানে ফল বিক্রি হয় -সাড়ে লাখ টাকার চলতি মৌসুমে এক সপ্তাহ ধরে কুল বিক্রি শুরু করেছেন বাজারে দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে বর্তমানে প্রতি মণ আপেলকুল বিক্রি করছি সাড়ে - হাজার টাকা দরে

খুলনার পাইকারি কুল ব্যবসায়ী আড়তদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিতা বাণিজ্য ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী রাসেল হোসেন জানান, সাতক্ষীরার উৎপাদিত কুল বাজারে চাহিদা অনেক বেশি খুলনা বিভাগীয় শহর ছাড়াও বরগুনা, পটুয়াখালী, মাদারীপুর, বরিশাল পিরোজপুরে তিনি ফল সরবরাহ করেন প্রতি মণ আপেলকুল বিলাতি মিষ্টিকুল হাজার ৫০০- হাজার ৬০০ টাকা দরে পাইকারি কিনছেন সাতক্ষীরা থেকে প্রতি মৌসুমে সাত-আট হাজার মণ কুল কেনে তার প্রতিষ্ঠান 

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় ৯৫০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে, যা গত তিন বছরের ব্যবধানে প্রায় ৪০ শতাংশ আবাদ বেড়েছে ২০১৯ সালে জেলায় কুলের আবাদ হয়েছিল ৫৫০ হেক্টর জমিতে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ . মো. জামাল উদ্দিন বণিক বার্তাকে জানান, স্বল্পসময়ে খুবই লাভজনক কুল চাষ দ্রুত এর প্রসার ঘটছে চাষীরা খুবই আগ্রহী হচ্ছেন ফলটি চাষে তাছাড়া জেলার অনেক মৎস্য ঘেরে কুল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মৎস্য চাষীরাও তিনি বলেন, অনেক উন্নত জাতের সুস্বাদু কুল চাষ হচ্ছে জেলায় প্রতি টন কমবেশি ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় বছরে ১৭-১৮ হাজার টন কুল উৎপাদন হচ্ছে সে হিসাবে গড় মূল্য ১৩৬ কোটি টাকার ওপরে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন