নারী জাগরণের মাধ্যমেই সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হবে —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারী জাগরণের মাধ্যমেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নারী জাগরণের মধ্যেই আমাদের সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে বাংলাদেশকে একটি উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। নারী জাগরণের মধ্য দিয়েই ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য ডেল্টা প্ল্যানও করে দিলাম, যাকে ভিত্তি করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গতকাল বেগম রোকেয়া দিবসে বেগম রোকেয়া পদক-২০২২ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারপ্রধান কথা বলেন।

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য পাঁচ বিশিষ্ট নারীর হাতে বেগম রোকেয়া পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। তারা হলেন রহিমা খাতুন, অধ্যাপক কামরুন নাহার বেগম, অ্যাডভোকেট ফরিদা ইয়াসমীন, . আফরোজা পারভিন নাসিমা বেগম। তাদের প্রত্যেককে একটি করে স্বর্ণপদক, লাখ টাকার চেক সনদ দেয়া হয়। মহিলা শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সারা দেশে ডিজিটাল সেন্টার ফ্রিল্যান্সারদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্টের মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যেখানে উদ্যোক্তা একজন নারী এবং একজন পুরুষ, সেখানে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে দেশের নারী সমাজ। এর মাধ্যমে স্বল্পশিক্ষিত একজন নারীও ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করতে পারে।

নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সারা দিন ফেসবুক না দেখে তারা যদি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেয়, ফ্রিল্যান্সিং করে, তাহলে ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করা যায়। একটি প্রত্যন্ত ইউনিয়নে বসেও কিছু শিক্ষা নিয়ে দেশ-বিদেশে অর্থ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে, যেটা অনেক ছেলেমেয়ে করেও যাচ্ছে।

কম্পিউটার প্রযুক্তি শিক্ষা একেবারে জেলা উপজেলাভিত্তিক করে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, গ্রামে গ্রামে সুবিধার জন্য তথ্য এপিএ সার্ভিস চালু করেছে এবং এর মধ্য দিয়ে বেগম রোকেয়ার প্রায় স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কারণ দেশের সংসদে স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা সংসদ উপনেতাচারজনই নারী। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের সংসদ উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরী কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে শূন্যস্থান পূরণ আমরা একজন নারীকে দিয়েই করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবাই যোগ্য (নারী-পুরুষ) কাউকে আমি অযোগ্য বলছি না। কিন্তু আমাদের সমাজকে তো উৎসাহিত করতে হবে। সেটাই আমার লক্ষ্য। সেটিই আমরা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আজ আমাদের নারীদের শিক্ষা, নারীদের জাগরণ, নারীদের যতটুকু অর্জন এর পেছনে বেগম রোকেয়ার অবদান রয়েছে। তিনি যদি সেই অচলায়তন ভেঙে নিজে শিক্ষা গ্রহণ করে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে আমরা আজ যে যেখানে আছি, কেউ থাকতে পারতাম না। বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন ছিল মেয়েরা জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হবে। নারীরা সব দায়িত্ব নেবে। তিনি যে আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন, আমরা কিন্তু ধীরে ধীরে তা অর্জনের পথে।

নারী অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান, নৌ, সেনাবাহিনী, আগে বর্ডার গার্ডে কোনো মেয়ে ছিল না। সব জায়গায় মেয়েদের সুযোগ করে দিয়েছি। জাতির পিতা পুলিশে কিছু মেয়ে নিয়োগ দিয়ে গিয়েছিলেন। আমি দেখলাম কোনো ডিসি-এসপি পদে মেয়েদের স্থান নেই। বলা হতো, মেয়েরা পারবে না। সচিব নেই। মেয়েদের স্থান অনেক নিচে। সিনিয়রিটির ক্ষেত্রে একসঙ্গে তালিকা করা হতো। আমি বলেছি, মেয়েদের আলাদা লিস্ট চাই। সব জায়গায় ফাইট করে আনতে হয়েছে। তার পরও তারা সচিব পর্যায়ে উঠতে পারে না। প্রশাসনে একটি ব্যবস্থা আছে, রাষ্ট্রপতির কোটায় ১০ শতাংশ অফিসার নিয়োগ দেয়া যায়। আমি সেই কোটা ধরে প্রথম মেয়ে নিয়োগ দিলাম। আমার অফিসে সচিব হিসেবে প্রথম নিয়োগ দিলাম। এভাবে দরজা খুলে দিয়েছি। প্রথম এসপি যখন করতে গেছি, প্রচণ্ড বাধা। মেয়েরা এসপি হবে সেটা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছিল। আমি বলেছি, হ্যাঁ, মেয়েরাই এসপি হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের নারীরা যারা বাইরে কাজ না করে শুধু সংসারে কাজ করে, সেখানেও অনেক কাজ। এটাও তাদের কর্মক্ষেত্রে শ্রম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অনেকে গবেষণা করেন, মেয়েরা কোথায় কোথায় কাজ করছে, যেখানে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়, সেই জায়গাকে কর্মক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয় না। আমার মনে হয় এটা ঠিক নয়।

হিজড়া জনগোষ্ঠী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা তো কোনো অপরাধ করেনি। এরা তো বাবা-মায়েরই সন্তান। বাবা-মাকে ফেলে দিয়ে তাদের রাস্তায় চলে যেতে হবে কেন? তাদের কোনো জীবন-জীবিকার কিছু থাকবে না, এটা তো হতে পারে না। শুধু নারী অধিকার বলে অনেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। কখনো শ্রেণীর কথা কেউ চিন্তা করেননি। আমরা সংবিধানে তাদের স্বীকৃতি দিয়েছি। তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকবে, লেখাপড়া শিখবে, চাকরি পাবে, কাজ-প্রশিক্ষণ পাবে, একটা সুস্থ জীবন তারা পাবে। প্রতিটি ফরমে নারী-পুরুষের সঙ্গে থার্ড জেন্ডার আমরা লাগিয়ে দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যেক মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। শুধু আমাদের দেশ নয়, উন্নত দেশগুলো আরো খারাপ অবস্থায় আছে। সে জন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি, যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, সেখানে যে যা পারেন উৎপাদন করেন। বিদ্যুৎ, পানি, তেল ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হোন। সবাই সঞ্চয়ী হোন যেন আন্তর্জাতিক বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা এসেছে, সেটা যেন আমাদের দেশে আসতে না পারে। আমাদের নিজেদেরই সে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেটা আমরা এরই মধ্যে নিয়েছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন