নয়াপল্টনের কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি বিএনপি নেতাকর্মীরা

শনিবারই সমাবেশ হবে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর নয়াপল্টনে গতকাল বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থান ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রবেশ করতে পারেননি। এমনকি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও প্রবেশে বাধা দেয় পুলিশ। পরে বিকালে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফিরে যান তিনি। পুলিশের দাবি, অনুসন্ধান শেষ হওয়ার আগে ক্রাইম সিনে কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। পরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামীকাল সমাবেশ হবেই বলে ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল। 

এদিন বেলা পৌনে ১১টার দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজধানীর নাইটিঙ্গেল মোড়ে এলে পুলিশ কর্মকর্তারা তার গাড়ি আটকে দেয়। সময় মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। মির্জা ফখরুল গাড়ি থেকে নেমে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন, আমি আমার পার্টি অফিসে যেতে চাই। স্যার সম্বোধন করে ওই কর্মকর্তা বলেন, গতকাল বিকালে রাতে যেভাবে আমাদের পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। পরে সেখানে অভিযান পরিচালনা করেছি, যে পরিমাণ ককটেল-বোমা উদ্ধার হয়েছে, সেটি মুহূর্তে আমাদের কাছে ঘটনাস্থল, যেটিকে আমরা আইনের ভাষায় বলি প্লেস অব অকারেন্স। সো এটা আমরা ক্রাইম সিন হিসেবে বিবেচনা করছি। ক্রাইম সিন হিসেবে আমাদের সিআইডি, বোম ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা সেখানে কাজ করছেন। সো মুহূর্তে কেউ সেখানে যেতে পারবে না।

সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব সরকার গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ক্রাইম সিনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি অফিসে কারো প্রবেশাধিকার নেই। পরে বিএনপি মহাসচিব বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পল্লবী নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মকবুল হোসেনের মরদেহ দেখতে যান এবং তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেন।

দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশে বাধা পাওয়ার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি বিএনপি মহাসচিব। আমাকে আমার পার্টি অফিসে যেতে দেয়া হলো না এবং তারা যে কথাগুলো বলছে, এটা সর্বৈব মিথ্যা। আমাদের ওখানে কোনো বিস্ফোরক ছিল না। নাথিং ওয়াজ দেয়ার। তারা নিজেরা এসব করেছে, আপনারা তা দেখেছেন।

সমাবেশ হবেই জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ১০ তারিখের সমাবেশ যেন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। এর দায়দায়িত্ব থাকবে সরকারের। এখন কোথায় হবে সমাবেশ জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা জানিয়েছি। আবার জানাব।

তিনি বলেন, অবিলম্বে বিএনপি অফিসকে খুলে দেয়ার জন্য, আমাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানাচ্ছি। যাদের গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মুক্তি দেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি এবং যে নিহত হয়েছে, তাকে বিনা কারণে যে হত্যা করা হয়েছে, সেটার প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব। বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পুলিশ দাবি করছে, বিএনপি কার্যালয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গিয়েছে এবং অনেক পাওয়া গিয়েছে, কয়েক বস্তা নাকি পাওয়া গিয়েছে। তারা উদ্ধারের তল্লাশি চালানোর জন্য ক্রাইম সিন ঘোষণা করেছে। অথচ আইন হচ্ছে কোনো বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালাতে হয় সেই বাড়ির মালিককে সঙ্গে নিয়ে। নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকতে হবে। সাধারণত ধরনের তল্লাশি চালাতে হলে সার্চ ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে হয়। এক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি। উপরন্তু আমাদের কার্যালয়ে ঢুকতে না দিয়ে পুলিশ ঘণ্টা বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে ভাংচুর করেছে, বোমা রেখেছে, এসব বিস্ফোরক নাটক তারা তৈরি করেছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশি অবরোধ থাকলেও শনিবার নয়াপল্টনেই সমাবেশ হবে। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, আমরা আমাদের সমাবেশ অনুষ্ঠান করবই। এর জন্য চেয়েছিলাম নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। এখন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সমাবেশটাকে শান্তিপূর্ণভাবে করার ব্যবস্থা করা। আমরা অবশ্যই আমাদের সমাবেশস্থলে যাব।

এদিকে বিকাল ৪টার দিকে নয়াপল্টনের সড়ক খুলে দেয় পুলিশ। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এর আশপাশে সতর্ক অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরা। পাশাপাশি বিএনপি নেতাকর্মীরা যাতে এলাকায় অবস্থান নিতে না পারেন, সেজন্য কিছুক্ষণ পরপর টহল দিতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতেও বিনা বাধায় নয়াপল্টনে মিছিল মহড়া করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। অবশ্য এর আগে নয়াপল্টন এলাকায় সড়ক বন্ধ থাকার সময় নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি সমাবেশ সফল করতে মিছিল স্লোগান দেন দলটির নেতাকর্মীরা। তখন পুলিশ মিছিলকারীদের ধাওয়া দিয়ে চারজনকে আটক করে। একপর্যায়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীরা বুধবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। তারা কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। বিপুলসংখ্যক পুলিশও সতর্ক অবস্থায় ছিল আশপাশের সড়কে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে বিকালে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোয়াত সদস্যদেরও দেখা যায়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে নয়াপল্টন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘণ্টা খানেক সংঘর্ষের পর বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকে তল্লাশি চালায় পুলিশ। প্রায় ঘণ্টার সেই অভিযানে তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবীর রিজভী, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস রয়েছেন।

এদিকে গতকাল রাত ১১টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিএনপি সমাবেশের বিকল্প স্থান হিসেবে কমলাপুরের কথা জানিয়েছে। তবে ডিএমপি পরামর্শ দিয়েছে মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠের।

সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের তিন মামলায় আসামি দুই হাজার: পল্টনে পুলিশের ওপর হামলা বেআইনি সমাবেশ এবং বিস্ফোরক মজুদের অভিযোগ এনে তিন থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। ৫৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় দেড়-দুই হাজার মানুষকে এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল এসব মামলা করে পুলিশ।

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা সূত্রে জানা যায়, পল্টন, মতিঝিল শাহজাহানপুর থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি কার্যালয়ে বিস্ফোরকসামগ্রী সংরক্ষণ পুলিশের ওপর হামলা এবং নাশকতার অভিযোগে পল্টন থানায় করা মামলার আসামি ৪৫০ জন। মামলায় গ্রেফতার আসামির মধ্যে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, আমান উল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস রয়েছেন। মতিঝিল থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া শাহজাহানপুর থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে ২০০-২৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি দেখানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন