‘... দেখেছ তো, কোথায় পৌঁছে গিয়েছে কাজটা!’

ঋতু সাত্তার

গ্যালারিতে পারফর্মরত শিল্পী ঋতু সাত্তার

শিল্পী হিসেবে সমসাময়িক বড় শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলাটা অনেক সময় বেশ কঠিন। কারণটা আসলে বহুবিধ। সমসাময়িক বলে আপনি সময়ের বিচারে শিল্পীকে দেখেন এবং কাজের অভিজ্ঞতার জায়গা থেকেও দেখেন। নানা রকম পছন্দ-অপছন্দের জায়গা থেকেও দেখেন। শিল্পীদের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জনই সাধারণত মুখ্য হয়। বড় শিল্পী বা গুরুত্বপূর্ণ আর্টিস্টের সঙ্গে কাজ করাটা সবসময় খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়।

আমাকে আজকে যাকে নিয়ে লিখতে বলা হয়েছে তিনি পারফরম্যান্স আর্ট নিয়ে জীবনের প্রথম থেকে কাজ করেছেন। পেইন্টিংয়ের ছাত্রী হলেও সেই শুরু থেকেই তিনি পারফরম্যান্সের মজা পেয়ে গিয়েছিলেন। তার যে জীবনী ওয়াক থ্রো ওয়ালস তিনি লিখেছেন তা পড়লে মনে হয় যেন এক অনুসন্ধিত্সু মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন ইন্সপিরেশনের খোঁজে। কত রকম মানুষ, কত রকম জায়গা আর কত রকম অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করেছেন। আজ যখন আমার মতো নবীন অভিজ্ঞতাগুলো পড়ি, নিজের চাওয়া বা ইচ্ছেগুলোকে আবার ঝালাই করে নিতে পারি।

২০১৮ সালে মারিনা আব্রামোভিচ ইনস্টিটিউট বা মাই-এর একটি বৈশ্বিক ওপেন কল হয়। ওপেন কল থেকে বাছাইকৃত আটজন পারফরম্যান্স আর্টিস্ট নিয়ে মাই একটি সাতদিনব্যাপী কর্মশালা করে মারিনা আব্রামোভিচ মেথড নিয়ে এবং তারপর শুরু হয় পারফরম্যান্স। আমি এখনো নানাভাবে কর্মশালার অভিজ্ঞতা মনে করি বা অনুসরণ করি। সাতদিনের কর্মশালায় শুধু পানি গ্রিন টি ছিল আমাদের খাবার। আমরা কারো সঙ্গে কোনো কথা বলতাম না। সারা দিন নানা রকম এক্সারসাইজ, আমরা যেটাকে এন্ডরেন্স পারফরম্যান্স বলি সে রকম নানা রকম চর্চা চলতে থাকত। সকালে একটা যৌথ সাঁতার হতো, যে অভিজ্ঞতা আমাদের মতো দেশে বড় হয়ে ভাবাই যায় না।

আমি সাধারণত এন্ডরেন্স পারফরম্যান্স করি মানে লম্বা সময় ধরে একটি কাজ যেখানে শ্রম মনকে চ্যালেঞ্জ করা যায়। তবে কর্মশালার পর আমার যে পারফরম্যান্স অভিজ্ঞতা হয় তা এপিক বা পেছনের সব অভিজ্ঞতাকে ছাপিয়ে যায়। আটজন শিল্পীকে সিলেক্ট করা হয়েছিল অভিজ্ঞতার নিরিখে নয়, বরং আইডিয়ার নিরিখে। মাইয়ের পলা, এরন, বিলি যেভাবে একটি অ্যাকশনকে ভেঙে ভেঙে বুঝতে চাইতেন সেটা ভীষণ কাজে দিয়েছিল। তার ওপর ছিলেন মারিনা আব্রামোভিচ নিজে। প্রতিদিন পারফরম্যান্স শেষে এবং শুরুতে কথা বলতেন প্রত্যেকের পারফরম্যান্সের সেদিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে। না, কোনো ভাসা ভাসা কথা নয়, গঠনমূলক উদ্দীপনামূলক। কথা বলার পরিপ্রেক্ষিতেই আমি পারফরম্যান্স শুরু হওয়ার প্রথম সপ্তাহ পরে পুরো কাজটা আবার ভাবি এবং বলা যায় অনেকখানি পরিবর্তন নিয়ে আসি।

ব্যাংকক আর্ট বিয়েনালে ২২ দিন পারফরম্যান্স করেছি, প্রতিদিন ঘণ্টা করে। বিরতি থাকত শুধু সোমবার। তারপর আবার মঙ্গল-রোববার প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পারফরম্যান্স করতাম। মারিনার শরীর খারপ ছিল। তাই আমাদের শেষ পারফরম্যান্সের দুদিন আগে তিনি নিউইয়র্ক চলে যান। যেদিন শেষ হয়, নিউইয়র্কে তখন রাত ২টা বা ৩টা। ফোনে বললেন, কাজটা আবার করো। চালিয়ে যেয়ো। দেখেছ তো, কোথায় পৌঁছে গিয়েছে কাজটা! কথা সত্যি, আমি কাজের শুরুতে দর্শকের সঙ্গে আই কন্টাক্ট করতে চাচ্ছিলাম না। ডিজাইনের অংশ ছিল। কিন্তু শেষ সপ্তাহে যখন ধীরে ধীরে পাবলিক কানেকশন হলো, সে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা।

মারিনা তার বইটা সাইন করে আমাদের সবার ঠিকানায় পাঠিয়েছিলেন। আমি এখনো যখন মনে করি মারিনার সঙ্গে কথা বলতে চাই, আমি জানি যে শি ইজ দেয়ার অনলি ফোনকল অ্যাওয়ে।

 

ঋতু সাত্তার: থিয়েটার শিল্পী, পরিচালক পারফরম্যান্স আর্টিস্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন