আমি কিছু খুঁজি না, আমি পেয়ে যাই

সুকান্ত কুমার

প্রিল, ১৯৩৭। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ চলছে। উত্তর স্পেনের শহরতলি গোয়ের্নিকায় বোমা ফেলল জার্মান বাহিনী। ইতিহাস অনুসারে, জার্মানির নািস ইতালির ফ্যাসিস্টরা স্পেনের জাতীয়তাবাদীদের প্ররোচনায় ভয়াবহ কাজটি করে। চারদিকে ধ্বংসের ছবি। বিশ্বজুড়ে গোয়ের্নিকা নিয়ে আলোচনা। ঘটনাটির প্রতিবাদস্বরূপ ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা তুলে ধরতে ক্যানভাসে নিজের চিন্তা ছড়িয়ে দিলেন স্প্যানিশ শিল্পী পাবলো পিকাসো। কথিত আছে, গোয়ের্নিকা আঁকার সময় হঠাৎ তার স্টুডিওতে ঢুকে পড়ে জার্মান বাহিনী। ক্যানভাসের দিকে আঙুল দেখিয়ে তারা প্রশ্ন করেছিল, কে করেছে? পিকাসো উত্তর দেন, তোমরাই।

পিকাসোর সবচেয়ে মূল্যবান পাঁচটি চিত্রকর্মের মধ্যে প্রথমেই নাম আসে গোয়ের্নিকার। সাদা-কালো রঙ ছড়ানো কিউবিস্ট ধাঁচের ছবির ক্যানভাসজুড়ে যুদ্ধের ক্ষত। আতঙ্কিত মানুষ। আহত পশু। সন্তান বুকে ক্রন্দনরত মা। তার মধ্যে আলো নিয়ে অগ্রসরমাণ এক নারী। চিত্রকর্মটি দেখলে যুদ্ধের অসহায়ত্ব, ভয়াবহতা নির্মমতা অনুভব করা যায় স্পষ্টভাবে।

রঙ-তুলির বাইরে পিকাসো একজন ভাস্কর, প্রিন্টমেকার, ম্যুরালিস্ট। আমরা তাকে জানি মঞ্চের ডিজাইনার হিসেবেও। শিল্পের বিভিন্ন ধরন শৈলীর মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে তুলে ধরেছেন। ক্যানভাসজুড়ে বিভিন্ন চরিত্র, ভঙ্গি, রঙের সরল উপস্থাপন আর অভিব্যক্তি ব্যবহার করে প্রকাশ করছেন চিন্তাকে।


পিকাসোর জন্ম ১৮৮১ সালের ২৫ অক্টোবর স্পেনের মালাগা শহরে। বাবা হোসে রুইজ ব্লাসকো। মা মারিয়া পিকাসো লোপেজ। পিকাসো মাত্র ১০ বছর বয়সেই ছবি এঁকে খ্যাতি অর্জন করেন। স্প্যানিশ ফ্রান্সিসকো ডি জোয়ারবেরন, ফ্রান্সিসকো গয়া, জোয়ান গ্রিস, সালভাদর দালির মতো খ্যাতিমান শিল্পীর নামের পাশে নিজের নাম লেখান ওইটুকু বয়সেই। মাত্র ছয় বছর বয়স থেকেই অসম্ভব ভালো ড্রইং করতেন। পিকাসো নিজেই বলতেন যে ছেলেবেলায় তিনি নাকি ওল্ড মাস্টারদের মতো আঁকতেন আর বড় হয়ে শিশুদের মতো। ছবি আঁকার কাজগুলো করতেন রাতে। রাত ১০-১১টায় বসতেন ক্যানভাস নিয়ে। কাজ চলত রাতভর। একের পর এক অসাধারণ সৃষ্টি করেছেন। অসম্ভব সঞ্জীবনীশক্তি নিয়ে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত শিল্পচর্চা করেছেন।


পিকাসোর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য একেকটা পর্যায় ভেঙে আরেকটা পর্যায়ে পৌঁছানো। যেমনটা অনেক বড় বড় শিল্পীর মধ্যেও আমরা পাই না। শিল্পবোদ্ধারা বলেন, পিকাসোর সৃষ্টিশীলতা ছিল বাঁধনহারা, সবসময়ই নতুন কিছু খোঁজার চেষ্টা করতেন। পিকাসো বলতেন, আমি কিছু খুঁজি না, আমি পেয়ে যাই।


পিকাসোর আরেক বিখ্যাত ছবি উইপিং ওম্যান সে সময় প্রেমিকা ডোরা মারের সঙ্গে পিকাসোর বিচ্ছেদ ঘটছে, তিনি অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ডোরার কান্নামাখা বিকৃত মুখের ছবি আঁকলেন পিকাসো। শিল্পীর উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে দ্য ড্রিম, দ্য ব্লু রুম, ওল্ড গিটারিস্ট ইত্যাদি।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন