... আসলে ভূমি বলে কিছু নেই

শৈশব-শিল্প

আমার ধারণা সব শিশুই ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকে। যদিও মনে নেই আমি আঁকতাম কিনা! শৈশবের দিনগুলোয় ছবি আঁকাকে কখনই সিরিয়াসলি নিইনি। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই আমি ছবি আঁকার প্রতি তীব্রভাবে আগ্রহী হয়ে উঠি। কলেজে ভর্তির পর একটা আর্ট স্কুলের খোঁজ পাই সেখানের পরিবেশ আমাকে নতুন একটা জগতের সন্ধান দেয়। সেখানে আমি নানা রকম শিল্প সম্পর্কে জানি, শিল্পী সম্পর্কে জানি। এসব জানার সঙ্গে সঙ্গে আমার জীবনের আগ্রহের জায়গাটা স্পষ্ট হয়। আমি সিদ্ধান্ত নিই যে চারুকলায় পড়ব এবং শিল্পীজীবন বেছে নেব। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে প্রিন্ট মেকিংয়ের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করি।

 

স্বাচ্ছন্দ্যের মাধ্যম

শিল্পের যেকোনো মাধ্যম আমাকে টানে। আমি আগ্রহ নিয়ে বোঝার দেখার চেষ্টা করি। যদিও আমি নিজে মিশ্র মাধ্যম, ড্রইং, তেলরঙ, ভাস্কর্য, ফটোগ্রাফি প্রিন্ট মেকিং নিয়ে কাজ করি। কিন্তু বিষয়বস্তু বোঝানোর জন্য আমি যদি মনে করি পারফরম্যান্স, ইনস্টলেশন, ভিডিও, গ্রাফিতি বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে কাজটা করলে সঠিকভাবে প্রকাশ পাবে, তবে আমি সেই মাধ্যমের সঙ্গে বোঝাপড়া গড়ে তোলার চেষ্টা করব। মূল বিষয় কাজের সঠিক ভাষা দেয়া। কাজটার মাধ্যমে আমার দর্শন স্থাপন করা।

 


প্রিয় শিল্পী-কাজ

প্রথমেই ফরাসি আমেরিকান শিল্পী লুইস বোর্জোয়ার কথা বলব। শিল্পীর সব ভাস্কর্য আমার পছন্দ। ব্রিটিশ শিল্পী ট্রেসি এমিনের জীবনযাপন কথা বলার বিষয়বস্তু আমাকে অনুপ্রাণিত করে। ভালোবাসি অস্ট্রিয়ান এক্সপ্রেশনিস্ট চিত্রশিল্পী ইগেন শিলার সমস্ত ড্রইং। ভালো লাগে ভারতের শিল্পী মিঠু সেনকে তার কাজের সমসাময়িক পন্থাগুলো। বাংলাদেশের শিল্পী এসএম সুলতানতার ভেতর-বাইরের পৃথিবী যে আলাদা নয় তা তার কাজ দেখে বোঝা যায়। এখানে একজন শিল্পীকে নির্বাচন করাটা কঠিন। তালিকা অনেক দীর্ঘ।

 

কাজ-প্রদর্শনী-পুরস্কার

আমি আমার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার পর্যায় নিয়ে কাজ করছি। ভূমি একটি প্রতীক। আসলে ভূমি বলে তো কিছু নেই। ভূমিতে মানুষ ভাগ পাবে না। রাষ্ট্র তৈরি হবে না কখনই। কেবল কাগজে কাগজে জোড়াতালি লেগে ভাবনার সৃষ্টি হবে। যে ভাবনা প্রথাগত আমি, তুমি, আমরা, তোমরার ঊর্ধ্বে। গন্ধ, আলো, বাতাস, নিঃশ্বাস এসব কিছু যেখানে মোটামুটি অর্থহীন সেখান থেকে শুরু। আমার সংগ্রহে বাবার কেনা পত্রিকার পাতা আছে। আছে ১৯৭১ সালের আগের গল্পের বইয়ের পাতা। আমার জন্ম হওয়ার আগের কোনো কবির, লেখকের লেখা। সেই শহর দেখার প্রচেষ্টা। আমার মস্তিষ্কে যে আলাদা ভাগ আছে তার ভেতরকার ভাবনা নিয়ে আমি ভাবছি। এই যে এতসব মানুষ তাদের ভাবনা থেকে আমার ভাবনার দূরত্ব কত? তাই ভাবছি।

 

আর্টক্যাম্প-রেসিডেন্সি

আমি নেপালের আর্টিস্ট রেসিডেন্সি, দক্ষিণ কোরিয়ার জিওনবুক মিউজিয়াম অব আর্ট (জিএমএ) রেসিডেন্সি এবং জাপানের স্যান্ডউইচ কিয়োটোয় ভাস্কর কোহেই নাওয়ার সঙ্গে কাজ করেছি। অংশ নিয়েছি স্পেনের বার্সেলোনায় আর্ট রেসিডেন্সিতে।

 

গ্রন্থনা: স্নো অভ্র

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন