ইউএনওর নিষেধাজ্ঞা অমান্য

নওগাঁয় কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তিতে স্থাপনা নির্মাণ

আরমান হোসেন রুমন, নওগাঁ

নওগাঁ শহরে পৌরসভার জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে ব্যাক্তি মালিকানাধীন স্থাপনা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

নওগাঁয় প্রায় কোটি টাকা মূল্যের সরকারি সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে লিটন ঘোষ নামে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। জেলা শহরের গোস্তহাটির মোড়-শৈলগাছী ইজিবাইকস্ট্যান্ডের সামনে পৌরসভার খাসজমিতে এক মাস যাবত স্থাপনা নির্মাণকাজ চলমান রেখেছেন ওই প্রভাবশালী। সম্প্রতি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মানববন্ধন করা হলে নির্মাণকাজ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় উপজেলা প্রশাসন। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এখনো চলছে নির্মাণকাজ। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে জানা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্র গোস্তহাটির মোড় থেকে চারটি শাখা সড়ক বিভিন্ন বাজার এলাকায় প্রবেশ করেছে। গোস্তহাটির মোড়-শৈলগাছী ইজিবাইকস্ট্যান্ডের পাশেই রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চেম্বার অব কমার্স ভবন। শহরের ব্যস্ততম সড়ক হওয়ায় এখানকার জমির মূল্যও সবচেয়ে বেশি। বর্তমান ইজিবাইকস্ট্যান্ডের পার্শ্ববর্তী ওই সম্পত্তিতে নব্বইয়ের দশকে বৃহৎ আকারের একটি গাছের নিচে নিয়মিত পৌরসভার ডিমের বাজার তরকারি বাজার বসত। পরবর্তী সময়ে ২০০২ সালের দিকে খুচরা তরকারি বাজার অন্যত্র স্থানান্তর করা হলে গাছ কেটে সেখানে টিন দিয়ে দোকানপাট তৈরি করে দখলে নেন প্রভাবশালী লিটন ঘোষ। দীর্ঘ ২০ বছর যাবত ওই দোকানগুলো থেকে নিয়মিত ভাড়াও আদায় করেন লিটন। বর্তমানে টিনের দোকানগুলো ভেঙে জমিটি স্থায়ীভাবে দখলে নিতে ইটের গাঁথুনি দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। শহরের ভেতরে  খাসজমিতে এক মাস ধরে প্রকাশ্যে স্থাপনা নির্মাণকাজ চলমান থাকলেও নীরব ভূমিকায় রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। মোটা অংকের টাকায় রফাদফার মাধ্যমে সরকারের কোটি টাকা মূল্যের খাসসম্পত্তি লিটনকে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে পৌরমেয়র স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। নির্মাণকাজ বন্ধে সম্প্রতি সচেতন এলকাবাসী মানববন্ধন করলে বিষয়টি নজরে আসে উপজেলা প্রশাসনের। বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলা ভূমি অফিসের নায়েবকে পাঠিয়ে স্থাপনা নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গতকাল সকাল হলেই আবারো শুরু হয় নির্মাণকাজ।

স্থানীয় বাসিন্দা ফজলে মাহমুদ চাঁদ, এমরুল হোসেন, গোলাম মোস্তফা, শাহানুর আকন্দ লিখনসহ অনেকেই বলেন, খাস জমিতে একসময় পৌরসভার বাজার ছিল। বাজার অন্যত্র স্থানান্তরের পর জমিটি করে দখল করে নেন লিটন। এখানকার চা স্টলসহ আশপাশের দোকানগুলো থেকে দৈনিক ২০০-৫০০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হয়। জমিটি স্থায়ীভাবে দখল করতে এক মাস ধরে পাকা স্থাপনা নির্মাণকাজ শুরু করেছেন তিনি। ইউএনও অফিস থেকে লোক এসে নিষেধ করলেও ক্ষমতার দাপটে তিনি নির্মাণকাজ চলমান রেখেছেন।

জেলা শহরের কালিতলা মহল্লার স্থায়ী বাসিন্দা নান্টু মণ্ডল বলেন, পাকিস্তান আমলে জমিসহ আশপাশের সব জমিতে পতিতালয় ছিল। পরে তাদের উচ্ছেদ করা হলে এসব জমি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। তার মধ্যে জমিটি বর্তমানে নওগাঁ পৌরসভার খাস সম্পত্তির মধ্যে পড়েছে। যার মূল্য কমপক্ষে কোটি টাকা। অথচ এত মূল্যবান সম্পদ রক্ষায় পৌর কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে এগিয়ে আসছে না। মেয়র কাউন্সিলরদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে। শহরে একের পর এক মূল্যবান খাসজমি বেদখল হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে সরকারের সব সম্পত্তিই ব্যক্তিমালিকানাধীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

খাসজমিতে স্থাপনা নির্মাণ বিষয়ে লিটন ঘোষ তার স্ত্রী প্রশান্তি ঘোষের কাছে জানতে চাইলে সম্পত্তিটি নিজেদের মালিকানাধীন বলে দাবি করেন। তারা বলেন, পাকিস্তান আমল থেকেই জমিটি পৈতৃক সূত্রে ভোগদখল করে আসছি। কিছু দোকানপাট করে নিয়মিত সেখান থেকে ভাড়া উত্তোলন করি। পৌরসভাকে ম্যানেজ করেই স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। এখানে কতটুকু জমি ব্যক্তিমালিকানা এবং কতটুকু খাস সেটা পৌরসভা বুঝবে। তারা এসে দেখেও গেছেন।

পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক মজনু বলেন, ওই স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি মেয়র অবগত। তিনি ঘটনাস্থলে যেতে গিয়েও যাননি। একজন কাউন্সিলরের একার পক্ষে স্থাপনা নির্মাণকাজ বন্ধ করা সম্ভব নয়। মেয়রের নির্দেশনা পেলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

বিষয়ে নওগাঁ পৌরভবনে গিয়ে জানতে চাইলে মেয়র নজমুল হক সনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, কে বা কারা কোন সম্পত্তি দখল করছে এটা দেখার মতো বাড়তি সময় আমার হাতে নেই। পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে সারা দিন ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হয়। এসব দেখভালের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের দেয়া হয়েছে। জমিটি আদৌ পৌরসভার কিনা? সেটিও আমার জানা নেই।

নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা ইমাম উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, খাসজমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি জানার পর সেখানে ভূমি অফিসের নায়েবকে পাঠিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্পত্তিটির দাবিদারদের আগামীকাল রোববার ভূমি অফিসে কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। এর পরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজ চলমান রাখলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন