শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত গাড়ি সীমিত করার পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্বালানি সাশ্রয় কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পরিবহনে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সীমিত করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। লক্ষ্যে এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমানো স্কুলের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে স্থায়ী সুপারিশ প্রণয়নে কাজ করছে কমিটি। উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু জ্বালানি সাশ্রয় কৃচ্ছ্রসাধন নয়, ঢাকার যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সীমিত করে আনা জরুরি।

দেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী ঢাকা। উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য যেমন ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তেমনি প্রাথমিক, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দেশের অন্য সব শহরের চেয়ে ঢাকায় বেশি। স্বভাবতই ঢাকার মোট জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। মহানগরীতে শিক্ষার্থীদের বিপুল উপস্থিতি প্রভাব ফেলে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায়ও।

রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই কোটি ট্রিপের প্রয়োজন পড়ে। জাইকার তথ্য বলছে, মোট ট্রিপের ১৮ শতাংশই ব্যবহার হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবকদের যাতায়াতে। ট্রিপের একটা বড় অংশ হয় ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে। স্কুল শুরু ছুটির সময় ঢাকার বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্যে তৈরি হয় যানজট।

পৃথিবীর উন্নত শহরগুলোয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয় এলাকাভিত্তিক। নির্দিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের জন্য স্কুলও অনেকটা নির্দিষ্ট করে দেয়া থাকে। এতে স্কুলে যাতায়াতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের যানবাহনের ট্রিপ সীমাবদ্ধ থাকে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই। স্কুল-কলেজের ট্রিপ শহরের প্রধান সড়কগুলোয় প্রভাব ফেলে না। রাজধানী ঢাকার ক্ষেত্রে হয়েছে এর উল্টোটি। এখানকার বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই কোনো না কোনো ব্যস্ত সড়কের পাশে। ফলে ঢাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক যত ট্রিপ হয়, তার সিংহভাগই চলে আসে ব্যস্ততম সড়কে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কোনো পরিবহন পরিকল্পনা বা নীতিমালা গড়ে না ওঠাকে ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক . হাদিউজ্জামান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, প্রথমত, ঢাকার বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে। দ্বিতীয়ত, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন অনেকটা কোচিং-নির্ভর। ফলে একজন শিক্ষার্থী স্কুলে যাতায়াতের জন্য দুবার এবং কোচিংয়ে যাতায়াতের জন্য আরো দুবার ট্রিপ উত্পন্ন করছে। এতে সড়কে আরো বেশি চাপ পড়ছে। কিন্তু চাপ সমন্বয়ের জন্য এখনো আমরা কোনো নীতিমালা গড়ে তুলতে পারিনি।

২০১০-১১ সালের দিকে বলা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সকাল ৮টায় আর অফিস-আদালত ৯টা বা ১০টায় শুরু হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর অফিস-আদালত শুরু এবং শেষের সময়টা ধাপে ধাপে করা হবে। ফলে সড়কে চাপ কমে আসবে। কিন্তু অতিসম্প্রতি জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে অফিসের সময়সূচি সকাল ৮টায় এগিয়ে আনা হয়েছে। এখন একই সঙ্গে অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুরু হচ্ছে। চাহিদা ব্যবস্থার যে একটা নিয়মের কথা তখন বলা হয়েছিল, সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে কিন্তু তা আর কাজে আসছে না, বলেন তিনি।

অধ্যাপক হাদিউজ্জামানের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সীমিত করতে সবচেয়ে জরুরি হলো একটি আদর্শ নীতিমালা। নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সঠিক পূর্বপ্রস্তুতি। একই সঙ্গে নীতিমালাটি দক্ষভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

ঢাকায় শিক্ষার্থীদের পরিবহনে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে স্কুল বাস চালু করতে কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, অনেক স্কুলে একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়। ফলে অসংখ্য ব্যক্তিগত গাড়ি একই সময়ে রাস্তায় নামে চলাচল করে। ঢাকায় স্কুল বাস চালু হলে যানজট ব্যাপক হারে কমে যাবে। ফলে দূষণ কার্বন নিঃসরণও কমবে। বিষয়টি নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে কথা হয়েছে। শিক্ষকরাও এতে একমত পোষণ করেছেন। তবে এটি বাস্তবায়নে অভিভাবকদের সদিচ্ছাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন