প্যারিস চুক্তির আওতায় কোনো প্রোটোকল সই করার আগে আলোচকদের কৌশলী হতে হবে যাতে দেশের স্বার্থ সর্বোচ্চ আদায় করা যায়। জাতিসংঘের আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে (কনফারেন্স অব পার্টিস-কপ২৭) এজেন্ডা হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে বাংলাদেশকে জোরালো অবস্থান নিতে হবে। অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্সের বাইরে এবং ঋণবহির্ভূত কাঠামোর আওতায় অভিযোজন অর্থায়ন বাড়ানোর জন্য সরকারকে সোচ্চার হতে হবে। জলবায়ু অর্থায়নের নামে ধনী দেশগুলো যে জলবায়ু প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিতে ঋণ মওকুফ পদ্ধতি তৈরি করেছে, বাংলাদেশকে তার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে।
কোস্ট ফাউন্ডেশন, এন অর্গানাইজেশন ফর সোশিও-ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (এওএসইডি), সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিডিপি), সেন্টার ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল), ইকুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপের যৌথ আয়োজন ‘কপ২৭: সরকারি অবস্থান ও নাগরিক সমাজের মতামত’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ইকুইটিবিডির রেজাউল করিম চৌধুরী।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি (সাতক্ষীরা-২) এবং খুলনা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আলী আকবর টিপু।
বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, সিপিআরডির মো. শামসুদ্দোহা, এওএসইডি-খুলনার শামীম আরেফিন, সিএসআরএলের জিয়াউল হক মুক্তা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এম আহসানুল ওয়াহেদ, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের শিরিন সুলতানা লিরা, কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের আফসারি বেগম এবং আবুল বাশার। ইকুইটিবিডি থেকে সৈয়দ আমিনুল হক সেমিনারের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
আমিনুল হক বলেন, কপ২৭ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উন্নত দেশগুলো তাদের পূর্ববর্তী সব প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের চেষ্টা করছে এবং প্যারিস চুক্তির মূল নীতিগুলো এড়িয়ে যেতে চাইছে। তারা ‘নিট জিরো’ বা শূন্য নির্গমন, নতুন সমষ্টিগত এবং পরিমাণকৃত লক্ষ্যের মতো নতুন ধারণাগুলোকে অর্থায়নের চেয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর প্রস্তাবিত এসব ধারণা প্রকৃতপক্ষে অসার ও অস্পষ্ট। তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখার যে কথা প্যারিস চুক্তিতে বলা হয়েছে তার সঙ্গে এসব ধারণা অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
তিনি নতুন আর্থিক ধারণা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোয় বারবার যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তার আলোকে একটি বাস্তব এবং কর্মমুখী আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যা ধনী দেশগুলোর প্রস্তাবিত নতুন এ আর্থিক নীতিতে নেই।
মোস্তাক আহমেদ রবি এমপি বলেন, আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার এবং নাগরিক সমাজ উভয়েরই বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনায় ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখা এবং অভিযোজনের জন্য জলবায়ু অর্থায়নের ব্যাপারে সব সময়ই সোচ্চার ভূমিকা রাখছেন।
বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে বাংলাদেশের উচিত তাপমাত্রা বৃদ্ধির সীমা ১.৫ ডিগ্রিতে রাখার লক্ষ্যে প্যারিস চুক্তির আওতায় শূন্য কার্বন নির্গমন বিষয়ে একটি আইনি বাধ্যবাধকতাসমৃদ্ধ প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করতে জোরালো ভূমিকা রাখা।