উন্নয়ন শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধির সূচক নয় জীবনমানের গুণগত পরিবর্তনেরও বিষয়

. নিয়াজ আসাদুল্লাহ মালয়েশিয়ার মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক। দায়িত্ব পালন করছেন সেন্টার ফর পভার্টি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (সিপিডিএস) উপপরিচালক হিসেবে। কাজ করেছেন রিডিং ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের ভিজিটিং ফেলো, ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের ভিজিটিং প্রফেসরিয়াল ফেলো, ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব লেবারের রিসার্চ ফেলো, এসকেওপিইতে (ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন, ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড) ভিজিটিং রিসার্চার হিসেবে। তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি বিআইডিএসের সিনিয়র ফেলো ছিলেন। চলমান মহামারী বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, সামাজিক নিরাপত্তা, অসমতা, কর্মসংস্থানসহ নানা বিষয় নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা

করোনার অভিঘাতে আমাদের কিছু সামাজিক সূচকের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকালে বাংলাদেশ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। আজ ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে তা বেশকিছু ক্ষেত্রে ঝুঁকির মুখে। করোনা-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ কেবল বাংলাদেশকেন্দ্রিক নয়, অন্য অনেক উন্নয়নশীল দেশও বহু অর্থনৈতিক সামাজিক ঝুঁকির মুখোমুখি। কিন্তু বাংলাদেশের মতো এত জনবহুল দেশে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে গত ৫০ বছরে অর্জিত সামাজিক অগ্রগতির প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে করোনা সংকট এর তাত্পর্য একটু ভিন্ন বলতে হয়। এক অর্থে বাংলাদেশের উন্নয়নের স্থায়িত্ব একটি পরীক্ষার মুখে পড়েছে, ইংরেজিতে যেটিকে বলা হয় রেজিলিয়েন্স টেস্ট আমরা দুর্যোগের সময় সাম্প্রতিক সময়ে অর্জিত সামাজিক অগ্রগতি কীভাবে ধরে রাখতে পারছি, তার মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান হবে আমাদের উন্নয়ন কতটা টেকসই। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, দুটি বিষয় নিয়ে আমি বিশেষভাবে আশঙ্কাগ্রস্ত। একটা হলো শিক্ষা, বিশেষ করে প্রাথমিক মাধ্যমিক ক্ষেত্রে নারীশিক্ষায় অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে পারছি কিনা। আরেকটি হলো, নারী উন্নয়ন বা কর্মক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণের হার স্থিতিশীল থাকছে কিনা। পাশাপাশি অগ্রগতি না হওয়া বা পিছিয়ে থাকা সামাজিক সূচকগুলোয় আরো অবনতি হয়েছে কিনা এবং করোনা-পরবর্তী সময়ে বিদ্যমান সংকট বাড়ছে কিনা। যেমন বাল্যবিবাহ, খাদ্যনিরাপত্তা তরুণদের কর্মসংস্থান। প্রতিটি বিষয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সামগ্রিকভাবে এগুলো মানব উন্নয়নের সূচক। একই সঙ্গে এগুলো সবই টেকসই উন্নয়নেরও মাত্রাভিত্তিক নির্দেশক। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা কেবল সামষ্টিক অর্থনীতির কিংবা জিডিপির প্রবৃদ্ধির বিষয় নয়, এটি একই সঙ্গে মানুষের জীবনের গুণগত মানের পরিবর্তনেরও গল্প। এসব বিষয় নিয়ে উন্মুক্ত আলাপ হওয়া দরকার।

দারিদ্র্য বিমোচনে আগের সাফল্যের পেছনে বেসরকারি সংস্থা অর্থাৎ এনজিওগুলোরও ভূমিকা ছিল। এখন এনজিওগুলোর বৈদেশিক অর্থায়ন কমে আসছে। অবস্থায় দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারব কি?

সংবাদমাধ্যমে এসেছে যুক্তরাজ্য সরকার উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের এনজিও খাতে অর্থায়ন কমিয়ে আনবে। একদিক থেকে চিন্তা করলে এটি উন্নয়ন প্রক্রিয়ারই একটি বাস্তবতা। কোনো দরিদ্র দেশ উন্নত দেশগুলোর হাত ধরে প্রাথমিকভাবে এগিয়ে যায়। একসময় উন্নয়নের ধারা বেগবান হলে সবাই প্রত্যাশা করে টেকসই পথে নিজস্ব সম্পদ সঞ্চালন করে দেশটি এগিয়ে যাবে, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের খাতায় নাম লেখাবে। আন্তর্জাতিক ঋণ বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা কমবে, সেটিই প্রত্যাশিত। আমাদের এনজিও খাতে প্রস্তুতির অভাব ছিল। বহু বছরের সাহায্যপ্রাপ্তি এক ধরনের পরনির্ভরশীল মানসিকতারও সৃষ্টি করেছে। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম যে বৈদেশিক সহায়তা প্রবাহ সামনেও অব্যাহত থাকবে। জায়গায় চিন্তার ঘাটতি ছিল এবং তাতে পরিবর্তন আসা দরকার। সাহায্যনির্ভর মানসিকতা একার্থে আমাদের বেসরকারি উন্নয়ন খাতের একটি দুর্বলতা। দেশ বিভিন্ন খাতে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন সত্ত্বেও সামাজিক পরিবর্তনে নিয়োজিত দেশীয় উন্নয়ন সংস্থার অনেকগুলোই রয়ে গেছে সাহায্যনির্ভর। আমাদের এনজিও খাতে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন অবকাঠামো এখনো পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। সাহায্যনির্ভর অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে রেরিয়ে এসে বাংলাদেশ আজ প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করছে। ঋণগ্রহীতা থেকে আমরা এখন ঋণদাতার তালিকায়। করোনার প্রভাব অনেক স্বল্প আয়ের দেশগুলোয় অনেক বেশি পড়েছে। যেখানে দারিদ্র্যের হার আরো বেশি, সেখানে আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজনটাও আরো বেশি। এমন এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এবং এনজিও খাতের  নিজের পায়ে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই।

সরকার যেহেতু দাবি করছে বাংলাদেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, আমাদের মাথাপিছু আয় ভারত পাকিস্তানের চেয়ে বেশি, সেহেতু নিশ্চয়ই আমাদের খরচের সামর্থ্যও বেড়েছে। কিন্তু সম্পদ সঞ্চালনের সামর্থ্যের ক্ষেত্রে তারতম্য লক্ষ করা যাচ্ছে। একইভাবে বেসরকারি সংস্থা, যারা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছিল, সেখানেও কাজের স্বচ্ছতা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একটা তারতম্য ছিল।

এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। অনেক এনজিও মুনাফাভিত্তিক একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। কিছু এনজিও লাভজনক একাধিক খাতে (আবাসন, ব্যাংকিং, তৈরি পোশাক, তৈরি খাদ্য, পোলট্রি) সক্রিয়। ধরনের বাজারমুখী কর্মকাণ্ড এক অর্থে আমাদের এনজিও খাতে আত্মনির্ভরশীলতার বহিঃপ্রকাশ, যা কিনা অনেক আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ আছে, যা উপেক্ষিত রয়ে গেছে। আমরা মাথাপিছু আয় বাড়ানোর পাশাপাশি অন্য বিষয়গুলোয় খুব একটা দৃষ্টিপাত করিনি। মাথাপিছু আয় শুধু ক্রয়ক্ষমতা বা জীবনমানের একমাত্র সূচক নয়, এটি অর্থনৈতিক সামর্থ্য সক্ষমতারও একটা নির্দেশক। সেই সাপেক্ষে যদি ব্যবস্থাপনা দেশ পরিচালনাসংক্রান্ত সূচকে উন্নতি না হয়, তাহলে পুরো অর্জনটাই প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়। আমরা বলছি অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বর্ধিত মাথাপিছু আয়ের দেশ হিসেবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা, দরিদ্র লোকের পাশে দাঁড়ানোর সামর্থ্য প্রভৃতির সাপেক্ষে অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয়। করোনা সংকটকালে দুর্বলতাগুলো আরো সুস্পষ্ট হয়েছে। সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে বলে দাবি করছে। কিন্তু সেই সাহায্য জনগণের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে আসার প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য বিমোচনে কোনো প্রভাব পড়বে কী?

একটু পেছনের দিকে যেতে চাই। দারিদ্র্য বিমোচনের ধারা কিন্তু আশির দশক থেকেই শুরু হয়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ত্বরান্বিত হয়েছে। ওই সময় একটা সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে দারিদ্র্যকে দেখা হতো। যেমন স্বাস্থ্যগত সমস্যা দূর হলে শ্রমজীবী মানুষের আয় ক্ষমতা বাড়বে। কিন্তু স্বাস্থ্য সমস্যায় জর্জরিত থাকলে তা হবে না। অমর্ত্য সেনের ভাষায়, এটি সামাজিক সাহায্যভিত্তিক উন্নয়ন। অন্যটি হলো আয়নির্ভর উন্নয়ন; এর অর্থ হলো, সামষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ব্যক্তি আয় বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে এবং বর্ধিত আয়ের ফলে পরবর্তী ধাপে মানব উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। আশি নব্বইয়ের দশকের বড় অংশই ছিল বৈদেশিক সহায়তাতাড়িত উন্নয়ন। তখন বাংলাদেশ এত সম্পদশালী ছিল না। ফলে বড় সহায়তা এসেছে আন্তর্জাতিক সাহায্য থেকে। তখন আরেকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কম খরচে সামাজিক সমস্যাগুলো মোকাবেলা বা মানবসম্পদ উন্নয়নে আমাদের এনজিওগুলোর অবদান। তখন সৃজনশীল উপায়ে আন্তর্জাতিক সাহায্যের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের জন্য বেসরকারি খাতে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক উদ্ভাবন হয়েছে। সামাজিক উদ্ভাবন বৈদেশিক সহায়তার যথাযথ ব্যবহার এবং দুই ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রীয় সম্মতি সহযোগিতাএসব মিলিতভাবে বাংলাদেশের মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। অল্প ব্যয়ে অর্জিত মানব উন্নয়ন পরবর্তী সময়ে আয়সংক্রান্ত দারিদ্র্য বিমোচন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছে। এমডিজি-পরবর্তী সময়ে সংকটটা একটু অন্য রকম। এখন কম খরচে সমস্যা সমাধানের পথটি সংকুচিত হয়ে এসেছে। আশি নব্বইয়ের দশকে আমাদের সামাজিক অর্থনৈতিক যে সমস্যাগুলো ছিল, তার তুলনায় এখনকার সমস্যাগুলো ভিন্ন। যেমন ধরুন সাম্প্রতিক সময়ের চ্যালেঞ্জ নতুন দরিদ্র। একাধিক বেসরকারি সংস্থার জরিপে বলা হয়েছে যে করোনা মহামারীতে বিপুলসংখ্যক মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছে। এখন দ্রুত সাহায্য সহায়তা দিয়ে তাদের দারিদ্র্যসীমার ওপরে না আনতে পারলে এটা দীর্ঘস্থায়ী আর্থসামাজিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। একটি দীর্ঘস্থায়ী হতদরিদ্রের মধ্যে থাকা পরিবার এবং করোনা সংকটে সাময়িক দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ে যাওয়া পরিবারদুটির ক্ষেত্রে সাপোর্ট ম্যাকানিজম ভিন্ন হবে। উদ্বেগের বিষয় এই যে আমাদের বেসরকারি সংস্থা প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পরে একটা নির্দিষ্ট সময়ে এত ব্যাপকসংখ্যক জনগোষ্ঠী এত অল্প সময়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে নামেনি। অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য নতুন। সেটিও আরেকটা দিক। এক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে, সরকারের ব্যবস্থাপনা সামর্থ্য কতটা? নতুন যারা দরিদ্র হলো, তাদের কোন পথে সাহায্য করা যায় এবং সাহায্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারের সক্ষমতা কতটুকু প্রভৃতি চ্যালেঞ্জ তো আছেই।

এক্ষেত্রে সমাধান কী হতে পারে?

একটি সমাধান হতে পারে ইউনিভার্সেল বেসিক ইনকাম গ্রান্ট’—সর্বজনীন ন্যূনতম আয় সহায়তা। এর মানে সংকটকালে সবাইকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়মিতভাবে হস্তান্তর করা। এর বেশ জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এটি প্রয়োগ করেছে। জাপানের এক ধনকুবের এটি বাস্তবায়নে কয়েক বিলিয়ন ডলার দান করেছেন। চীনও এটা নিয়ে চিন্তা করছে। থাইল্যান্ড বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে। এটাকে যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে এখানে অর্থায়নের বিষয়টি সামনে চলে আসে। তার সঙ্গে রয়েছে পূর্বশর্তসামাজিক খাতের সুশাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা। সেক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান আন্তর্জাতিক অর্থায়ন পরিবেশের প্রেক্ষাপটে এনজিওগুলোর পক্ষে ধরনের বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে যা হতে পারে তা হলো পারস্পরিক সহযোগিতা (কোলাবরেশন) সরকারের অর্থায়ন এবং এনজিওগুলোর দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা একসঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই সবকিছু মিলিয়ে বলতে গেলে একক কোনো সহজ সমাধান নেই।

ইউনিভার্সেল বেসিক ইনকাম গ্রান্ট চালু করার মতো আর্থিক সক্ষমতা সরকারের রয়েছে কি?

এটা আসলে সরকারের দায়বদ্ধতা, যা একটি উন্নয়নশীল সংবেদনশীল রাষ্ট্র থেকে প্রত্যাশিত। সরকার যেহেতু দাবি করছে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়েছে, সেহেতু সংকটের সময় নাগরিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তায়। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ যথেষ্ট শক্তিশালী। তাছাড়া সরকার প্রদত্ত সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকে অর্থনৈতিক সংকটের বড় রকম প্রভাব দৃশ্যমান নয়। সেক্ষেত্রে সামাজিক সংকট মোকাবেলায় দ্বিধাদ্বন্দ্ব, অসংগতি বা অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার অজুহাত কাম্য নয়। মহামারীকালীন সামষ্টিক প্রবৃদ্ধির দাবি সঠিক হলে রাষ্ট্রের ব্যয় ক্ষমতারও সম্প্রসারণ হচ্ছে, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ এমনটি প্রত্যাশা করে। কাজেই সংকটকালে নাগরিকদের নগদ অর্থসহায়তা দিয়ে সাময়িকভাবে এটি মোকাবেলাকে বোঝা হিসেবে দেখলে চলবে না। মহামারীকালীন সামষ্টিক প্রবৃদ্ধির অর্জন যদি সত্য হয়, তবে সে দাবির জনসম্পৃক্তি থাকা বাঞ্ছনীয়। আমাদের কৃষক, রেমিট্যান্স যোদ্ধা পোশাক শিল্পের কর্মী বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টারই ফল আমাদের আজকের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। সংকটকালীন মুহূর্তে তারা উপেক্ষিত হোক, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা নীতিগত ঘাটতি এবং স্ব-উদ্যোগের অভাব সরকারপ্রদত্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়নসংশ্লিষ্ট সূচকগুলোকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এসব কারণে সরকারি পরিসংখ্যান নিয়ে সংশয় এবং সন্দেহ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই বিভ্রান্তি বিতর্কের সৃষ্টি করছে।

করোনায় ব্যবসায়ীদের যেভাবে সমর্থন জোগানো হয়েছে ঠিক ততটা গুরুত্ব সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

বাজেট প্রণোদনা প্যাকেজগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সেখানে বড় বৈষম্য রয়ে গেছে। সরকার বলছে, তারা জনগণবান্ধব। কিন্তু নীতি পরিকল্পনাগুলো দেখলে দাঁড়াচ্ছে সরকারের মহামারীকালীন নীতি অনেকটাই একপেশে ব্যবসায়ীবান্ধব। বিষয়টি একেবারেই প্রত্যাশিত নয়। উচ্চ আয়ের মানুষ আর বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের নিজস্ব পুঁজি আছে, বিশ্বায়নের কারণে আন্তর্জাতিক মূলধন বাজারে তাদের প্রবেশগম্যতা আছে। সুতরাং তাদের বাস্তবতাটা একেবারেই ভিন্ন। আর্থিক বিশ্বায়নের যুগে মহামারী ধনী-দরিদ্র গোষ্ঠীর বৈষম্য আরো প্রকট করছে। বিষয়ে মালয়েশিয়ার ধনী গোষ্ঠীর ওপর আমার গবেষণা তা- বলছে। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। করোনার আগে কয়েক দশক ধরে উচ্চহারের যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তার একটা বড় ফসল উচ্চবিত্তরা ঘরে তুলেছে। আজ অতীব ধনী গোষ্ঠীরই সরকারের পাশে দাঁড়ানোর কথা। সে জায়গাটায় এক রকম বৈপরীত্য কাজ করছে। আমরা দেখছি উল্টোটাব্যবসায়ীদের কাছে সরকার জিম্মি, যেটা নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে এক ধরনের ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা নির্দেশ করে। সংকট যতই খারাপের দিকে যায় ততই কোনো না কোনোভাবে জনগণের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। উচ্চ আয়ের মানুষ প্রতিষ্ঠিত বড় ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকার আরো বেশি ঝুঁকে পড়ছে। আজ ক্ষমতাসীন সরকার কার প্রতিনিধিত্ব করছে, তা নিয়ে জনমনে একটি সংশয় কাজ করছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনৈতিক মাঠ নানাভাবে বিভাজিত। করোনা সংকটের সময় অর্থনৈতিক সামাজিক নীতির তারতম্যের বাড়তি একটা কারণ হতে পারে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ঘাটতি।

এখানে আরেকটি বিষয় যোগ করতে চাই, যা  বিশ্বব্যাংকের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও একই অবস্থা। এককভাবে বৈশ্বিক মোট নতুন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শতাংশই আজ ভারতের। তাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট আমাদের চেয়ে খুব বেশি ভিন্ন নয়। সেটি বিবেচনায় নিলে আমাদের দেশে মহামারীকালীন নতুন দরিদ্র বেড়েছেবেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দাবি ফেলে দেয়ার মতো নয়। এখানে মনোযোগ দেয়া উচিত। এখন পর্যন্ত বিষয়গুলো নিয়ে উন্মুক্ত আলাপ হচ্ছে না; বরং আমি দেখছি উল্টো। যখন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা থিংক ট্যাংক তথ্যগুলো তুলে ধরছে, সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিকল্প তথ্য-উপাত্ত না দিয়ে সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করছেন। সেটিও একটা রাজনৈতিক সংকটের প্রতিফলন। দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে চিন্তা করলে দেখা যাবে প্রস্তাবিত নীতিগুলো একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আসছে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো যেখানে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কর বাড়িয়ে বা ধনীদের ওপর সম্পদ কর আরোপের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে হস্তান্তর করছে, সেখানে বাংলাদেশ উল্টো পথে হাঁটছে। করোনার মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী খারাপ অবস্থায় আছে আর শিল্পগুলো বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করছে। অনেক শিল্পপতি আরো বিত্তবান হচ্ছে। আবার তাদেরই বেশি ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে, করছাড় দেয়া হচ্ছে। আমাদের প্রতিবেশী ভারত এর প্রমাণ, গত এক বছরের বেশি সময়ে দরিদ্রতার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি ৩৮ জন ভারতীয় ব্যবসায়ী নব্য ধনীর (বিলিয়নেয়ার) কাতারে যোগ দিয়েছেন। সরকারের প্রণোদনা নীতি আগামী দিনগুলোয় বাংলাদেশও একই রকম নতুন অর্থনৈতিক বৈষম্যের সৃষ্টি করবে। সেই বিবেচনায় যখন দরিদ্র জনগণের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয় না, তখন সরকারের সদিচ্ছা জনপ্রতিনিধিত্ব ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে।  

করোনার কারণে কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার খবর মিলছে। সরকারের করণীয় কী?

এটা সত্যিই আশঙ্কার বিষয়। কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী করোনাকালে বেকারত্বের হার বেড়েছে। কিন্তু এটিও সত্য যে পরিস্থিতি সাময়িক। কারণ যখন সংকট আসে তখন ব্যক্তি খাতের নিয়োগকর্তারা চাহিদার সংকোচন বিবেচনায় উৎপাদন কমিয়ে আনেন। তারই অংশ হিসেবে শ্রমের চাহিদাটাও কমে। খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এটা প্রত্যাশিত যে সংকটের সময়ে বেকারত্বের হার বাড়বে। তবে যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে এটা পুনরুদ্ধার না করতে পারলে বা দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্ব বড় শঙ্কার। এতে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ যেহেতু দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভর  করে, সেহেতু এর সঙ্গে খাদ্যনিরাপত্তা, অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার ইস্যুও যুক্ত। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল, শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় অপ্রতুল। সেটাকে বিবেচনা করলে অবশ্যই নতুন বেকারত্ব চিন্তার বিষয়।

করোনা মহামারী পর্বোত্তর বিভিন্ন গবেষণা থেকেই একটা প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে বারবার উঠে এসেছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বিবেচনায় আমরা কি যথেষ্ট পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি কিনা। প্রাসঙ্গিকভাবে নারীদের কথাই ধরা যাক। আগের ১০ বছরে পোশাক শিল্পের বাইরে ব্যাপক আকারে তাদের কর্মসংস্থানে তেমন অগ্রগতি নেই। একইভাবে এটাও সত্য যে বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছে এমন একটি সময়ে যখন আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর পেশাজীবীদের জন্য বাংলাদেশ খুবই আকর্ষণীয় শ্রমবাজার। মহামারী পর্বোত্তর সময়ে ২০১৯ সালের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে তরুণদের বেকারত্বের হার ১২ শতাংশ। ফলে এখানে একটা বড় প্রশ্ন চলে আসছে, আমাদের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, তা কার জন্য? উন্নয়নের সুফল কারা পাচ্ছে এবং কোথায় যাচ্ছে? প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক যে গ্র্যাজুয়েট পাস করে বের হচ্ছেন, তাদের ভবিষ্যৎ কী? এসব প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। মহামারীতে বাংলাদেশে শ্রমবাজারের বিদ্যমান ঘাটতিগুলো আরো প্রকট হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়গুলো অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ চিন্তার দাবি রাখে। সেক্ষেত্রে সরকারকে একটা স্বচ্ছ জায়গায় আসতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তরুণদের আশ্বস্ত করতে হবে যে বেকারত্বের বৃদ্ধি সাময়িক এবং কীভাবে তাদের চাকরির বাজারে ফিরিয়ে আনা হবে, সে বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। 

করোনার মধ্যেও অনেকের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। সারা বিশ্বে অসমতাও বাড়ছে। বাংলাদেশেও একই অবস্থা। করোনা কি মানবিক বিশ্ব গড়াকে আরো কঠিন করে তুলল?

আমি বিষয়টি একটু অন্যভাবে দেখি। করোনা সমাজের বিদ্যমান বৈষম্যগুলো আমাদের আরো পরিষ্কার করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে আমি মালয়েশিয়ার উদাহরণ দিতে চাই। একটা গবেষণা প্রকল্পের আওতায় আমরা ১০ হাজার উচ্চ আয়ের মানুষের ওপর গবেষণা করেছি, ইংরেজিতে যাদের আমরা বলি মিলিয়নেয়ার জানতে চেয়েছি করোনার সময়ে তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্তগুলো কেমন ছিল। চীনের উহানে যখন প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে এবং পুরো বিশ্ব জানল তখন শেয়ারবাজারে হালকা ধস নামে। এর একটি সাময়িক নেতিবাচক প্রভাব উচ্চবিত্তদের ওপর পড়ে। কিন্তু ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মিলিয়নেয়ারদের মাসিক বিনিয়োগ হারের তথ্যে একটা লক্ষণীয় ধরন দেখলাম যে ফেব্রুয়ারির পর থেকে মূলধন বাজারের আর্থিক সম্পদে তাদের ধারাবাহিক বিনিয়োগ বেড়েছে। অতিবিত্তবানদের সম্পদের পোর্টফোলিওটা ভিন্ন ধরনের। এর একটা বড় অংশই আন্তর্জাতিক সম্পদ। জাপানের স্টক মার্কেট হতে পারে কিংবা ইউরোপ-আমেরিকার স্টক মার্কেট হতে পারে। অতত্রব, নিজ দেশের অর্থনীতিতে ধস নামলেও সংকটের সময় সম্পদ সুরক্ষিত থাকে। বিশ্বায়নের সুবাদে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার ব্যবহার করে সমাজের বিত্তশালীরা মহামারীর সময়েও তাদের সম্পদের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারছে। বাংলাদেশে একজন নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ধরনের বিশেষ সুবিধা নেই। করোনার সময় পুঁজিবাজারে প্রযুক্তি বা কমোডিটি স্টকসবগুলোয় সূচকের ঊর্ধ্বগতি লক্ষণীয় ছিল। এর পুরো সুফলটা চলে গেছে উচ্চবিত্ত মানুষের কাছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে (যেমন সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া) পুঁজিবাজারের আয় করযোগ্য নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব পুঁজিবাজারের অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির কারণে অঞ্চলের বিত্তশালীরা আরো উদ্যোগী হয়ে এসব খাতে খরচ করেছেন। এজন্য করোনার সময়ে নিম্নবিত্ত ক্ষতিগ্রস্ত কর্মসংস্থান হারালেও উল্টোটা হয়েছে উচ্চবিত্ত মানুষের ক্ষেত্রে। ধনীদের সম্পদ বেড়েছে।

সরকারি নীতির রকম অসমতা বাংলাদেশেও নতুন বৈষম্যর সৃষ্টি করছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে করোনার সময় কালো টাকা সাদা করার হার বেড়েছে। আবার একই সময়েও দেশ থেকে ব্যাপক পুঁজি পাচার হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী জানেন না কারা টাকা বের করে নিয়ে যাচ্ছেন, কোথায় যাচ্ছেন। এটা আবারো একটা দায়বদ্ধতার প্রশ্ন সামনে আনে। যেখানে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে সরকারের যেখানে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ নিশ্চিত করার কথা, সেখানে তারা বরং উল্টো পথে হাঁটছে। উচ্চবিত্তদের একতরফা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বর্তমান বাস্তবতায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সম্মিলিত সামাজিক ফান্ড তৈরি করা যেত, উচ্চবিত্তদের কাছ থেকে অনুদানের প্রতিশ্রুতি আদায় করা যেত। কিন্তু ধরনের পরিকল্পনা আমরা দেখিনি। বরং দেখেছি উল্টো, উচ্চবিত্ত শ্রেণীর জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। নিম্নবিত্তদের জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু তারা প্রণোদনা পাচ্ছে না বা পায়নি কিংবা কতটুকু প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, সে ব্যাপারেও কোনো স্বচ্ছতা নেই। বিষয়গুলো সার্বিকভাবে ধনী-দরিদ্রের মধ্যকার বৈষম্য বা দূরত্ব বাড়াচ্ছে।

 

শ্রুতলিখন: হুমায়ুন কবির

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন