ব্যাংক কর্মীদের বেতন কাঠামোর জন্য সময় চায় বিএবি-এবিবি

দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, সেটি বাস্তবায়নে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা শীর্ষ নির্বাহীরা বাড়তি সময় চেয়েছেন। গতকাল গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা সময় চান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে দাবি পর্যালোচনার আশ্বাস দিলেও প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নে তাগাদা দেয়া হয়েছে। তাই আপাতত বেতন কাঠামো নিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে কোনো সংশোধনী আসছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

২০ জানুয়ারি জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের এন্ট্রি পর্যায়ে একজন কর্মকর্তাকে সর্বনিম্ন ২৮ হাজার টাকা বেতন দিতে হবে। শিক্ষানবিশকাল শেষে ওই কর্মকর্তার সর্বনিম্ন বেতন হতে হবে ৩৯ হাজার টাকা। ব্যাংকের নিরাপত্তা কিংবা পরিচ্ছন্নতা কর্মীদেরও সর্বনিম্ন বেতন ২৪ হাজার টাকা দিতে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে কর্মী ছাঁটাই পদোন্নতি বিষয়েও বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যেই নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়।

প্রজ্ঞাপনটি জারির পর বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান শীর্ষ নির্বাহীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। নিয়ে মঙ্গলবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করেন বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) আর গতকাল দুই সংগঠনের প্রতিনিধিরা গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকের শুরুতে ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের জারীকৃত প্রজ্ঞাপনটি পড়ে শোনান। তিনি প্রজ্ঞাপনের প্রতিটি লাইনের ব্যাখ্যাসহ পড়ে শোনালে বেসরকারি একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, আমরা শুনেছি আপনার আগ্রহে প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছে। তখন ওই চেয়ারম্যানের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন গভর্নর ফজলে কবির। গভর্নর বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমি প্রজ্ঞাপনটি জারি করতে বলেছি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ অন্য কর্মকর্তারা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন।

ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছেরের বক্তব্য শেষ হলে অন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংক এমডিরা প্রজ্ঞাপনটি না বুঝেই হইচই করেছেন। প্রজ্ঞাপনের যেসব ব্যাখ্যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুনলাম, তাতে আমরা সন্তুষ্ট।

আলোচনার শেষ পর্যায়ে প্রজ্ঞাপনের শর্তগুলো সংশোধনের পরিবর্তে বাস্তবায়নের জন্য বিএবি এবিবির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সময় চাওয়া হয়। তখন গভর্নর ফজলে কবির বিষয়টি পর্যালোচনার আশ্বাস দেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

বৈঠক শেষে বিএবির চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রজ্ঞাপনটি দিয়েছে তাতে আমাদের বা ব্যাংকের কী উপকার হতে পারে, প্রজ্ঞাপনটি বাস্তবায়ন করলে দেশের আর্থসামাজিক কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা এসব বিষয়ে বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়েছে। গভর্নর আমাদের সব কথা শুনে একটি সুন্দর সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। প্রজ্ঞাপনটিকে কীভাবে বাস্তবমুখী, ফলপ্রসূ করা যায় আমরা সেই চেষ্টা করব। তবে আমরা গভর্নরকে বলেছি, হঠাৎ করে মার্চে এটি বাস্তবায়ন করতে গেলে এলোমেলো হতে পারে। আরেকটু সময় নিয়ে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বসে আরো বিশদ আলোচনা করতে আমরা অনুরোধ করেছি। আমরা চাই যাদের বেতন বাড়ানোর কথা তারাও যেন ভালো থাকে, ব্যাংকও যেন ভালো থাকে।

নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, কর্মীদের বেতন নির্ধারণ নিয়ে আমরা পুনরালোচনার দাবি জানিয়েছি। বিবেচনা নয়, আরো স্বচ্ছতার সঙ্গে সহজে কীভাবে করা যায় সে দাবি জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে যে নির্দেশনাগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলো স্পষ্ট করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যাতে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা বুঝতে পারেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে এটি ছিল না যে কোনো অদক্ষ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে হবে। এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই দেয়া হবে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় একজন লোক দক্ষ হলে তার পদোন্নতি হবেই। কাজেই আমাদের বোঝার ভুল আছে, হয়তো কোথাও লেখার ভুলও থাকতে পারে। আমি মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিষয় পর্যালোচনা করে আমাদের আবারো ডাকবে।

প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, বিএবি এবিবির চেয়ারম্যানসহ প্রতিনিধি দল গভর্নর মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। তারা ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের বিভিন্ন শর্ত নিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্যসহ শর্তগুলোর বিস্তারিত বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে বিএবি এবিবির পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপনটি বাস্তবায়নের সময়সীমা কিছুটা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। গভর্নর মহোদয় বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন। আশা করছি, বৈঠকের পর প্রজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু শর্ত নিয়ে কোনো পক্ষের মধ্যেই ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার কাছে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর প্রস্তুতি নিয়ে বেতন-ভাতার প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছে। তাই কোনো পক্ষের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে প্রজ্ঞাপনের কোনো শর্ত শিথিল করা হবে না। তবে বাস্তবায়নের সময়সীমার বিষয়ে কিছুটা শিথিলতা দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো কোনো শর্ত পরিপালনের জন্য আগামী বছর পর্যন্ত সময় দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন