২০৫০ সালের মধ্যে নিট জিরো কার্বনের পরিবর্তে কার্বন নিঃসরণ একেবারেই বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয়ে চলমান জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৬) উপলক্ষে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বা এমভিসিগুলোর নাগরিক সমাজ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অতি বিপন্ন এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদানে ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ করা যেতে পারে, বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করা হবে, ঠিক সেই পরিমাণ কার্বন বিভিন্ন উপায়ে গ্রহণ করে ফেলে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের চাপ কমানোর বিষয়টিকেই নেট জিরো বলে অভিহিত করা হচ্ছে। নাগরিক সমাজ মনে করে, তথাকথিত এ পরিকল্পনা অনেককে কার্বন উদ্গীরণে উৎসাহিত করবে।
‘কপ-২৬ এবং এলডিসি এবং এমভিসিগুলোর জনগণের প্রত্যাশা ২৬’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন ভারতের পিপলস ফোরামের সৌম্য দত্ত, বাংলাদেশে থেকে মো. জিয়াউল হক মুক্তা (সেন্টার ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড), মো. শামসুদ্দোহা (সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট), শামীম আরফিন (এওএসইডি), মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাসুম (সিডিপি)। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ থেকে আমিনুল হক।
আমিনুল হক বলেন, এই কপ-২৬ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব নেতাদের প্রতিশ্রুতিগুলোর ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে একটি ক্রান্তিকালীন সময়ে। এর পরও আমি আশাবাদী, কারণ উন্নত দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসে তাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পদক্ষেপগুলো অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এমভিসি দেশগুলোকে সহযোগিতা করার অঙ্গীকার অন্তত করেছে।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো (ক) উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের ‘নেট জিরো টার্গেট’ তত্ত্ব পরিবর্তন করতে হবে, এর পরিবর্তে তাদের আবার নিজ নিজ দেশের এনডিসি (জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান) সংশোধন করতে হবে, যার লক্ষ্য হবে কার্বন নিঃসরণ মাত্রা ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনা। (খ) উন্নত দেশগুলোকে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড এবং তাদের নিজস্ব উৎস থেকে এলডিসি এবং এমভিসিগুলোর জন্য পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে, (গ) ক্ষয়ক্ষতির (লস অ্যান্ড ড্যামেজ) জন্য অর্থায়নের আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং সে অর্থায়ন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে হবে।
সৌম্য দত্ত বলেন, ‘নেট জিরো’ একটি শব্দগুচ্ছ, যা আমাদের কল্পিত ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির জাদুকরী চিন্তাভাবনাকে উপস্থাপন করে। এটি কেবল নানা উপায়ে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বনকে গ্রহণ করে ফেলার পরিকল্পনার কথা বলে। ফলে এ পরিকল্পনা ধনী দেশগুলোর কার্বন কমানোর ফলে ক্রমবর্ধমান হারে তা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে দেয়। এ কারণেই এটি সমস্যা সমাধানের একটি একটি অকার্যকর প্রস্তাব এবং সব দেশকেই নেট জিরো নিয়ে আলোচনা বন্ধ করা খুব জরুরি, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে এনে ‘শূন্য নির্গমন’ এর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।