ক্রিসমাসের আগে ব্রিটিশ বন্দরে জট

সরবরাহ বিলম্বের মুখে পড়বে ১৫০ কোটি পাউন্ডের পণ্য

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিডজনিত বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। দীর্ঘদিনের ঘরবন্দি অবস্থা শেষে সৃষ্টি হয়েছে তুমুল ভোক্তা চাহিদা। এমন পরিস্থিতিতে জটিলতা দেখা দেয় সরবরাহ চেইনে। এরই মধ্যে পণ্যজট সৃষ্টি হয়েছে যুক্তরাজ্যের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক বন্দরে। ক্রিসমাসের কেনাকাটার মৌসুমের আগে সংকট আরো ঘনীভূত হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন একটি সমীক্ষা বলছে, পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ক্রিসমাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের আমদানি করা প্রায় ১৫০ কোটি পাউন্ডের পণ্য সরবরাহ বিলম্বের মুখোমুখি হবে।

এপির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ বন্দরে চলমান পণ্যজট ক্রিসমাসের ছুটির সময়গুলোয় খেলনা খাবারের মতো পণ্যের ঘাটতি তৈরি করতে পারে। কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাজ্যের জ্বালানি তেল গ্যাস স্টেশনে দীর্ঘ সারি এবং সুপারমার্কের তাকগুলো খালি হয়ে পড়েছে। ঘাটতি ব্রিটিশ অর্থনীতির পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ব্রিটিশ বৃহত্তম বাণিজ্যিক বন্দর পূর্ব ইংল্যান্ডের ফিলেক্সটো বন্দরে বিপুল পরিমাণ কনটেইনার আটকে রয়েছে। বন্দরটি দেশটির পণ্যবাহী কনটেইনারের ৩৬ শতাংশ পরিচালনা করে। কনটেইনার জটের কারণ হিসেবে ট্রাকচালক ঘাটতিকে দায়ী করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি বিশ্বের বৃহত্তম শিপিং কোম্পানি মেয়ার্সকে তার কিছু বড় জাহাজ ইউরোপীয় বন্দরে সরিয়ে নিতে প্ররোচিত করেছে।

ঝুঁকি মডেলিং কোম্পানি রাসেল গ্রুপের একটি সমীক্ষা বলছে, ফেলিক্সটোয় জটের কারণে ক্রিসমাস পর্যন্ত ১৫০ কোটি পাউন্ডের পণ্য সরবরাহে বিলম্বের সৃষ্টি হবে। জটের কারণে সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পোশাক আমদানি। ক্ষতির মুখে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে এশিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে পোশাক আমদানি করা হাই স্ট্রিটের কিছু নামি ব্র্যান্ড।

আসদা, টেসকো, জন লুইস মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের (এমঅ্যান্ডএস) মতো খুচরা বিক্রেতারা বন্দর ব্যাঘাতের সবচেয়ে বেশি বাধার মুখে পড়বে। প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণ পোশাক আমদানি করে থাকে।

রাসেল গ্রুপ জানিয়েছে, সুপার মার্কেট চেইন আসদার আমদানি করা কোটি ৬২ লাখ পাউন্ডের পোশাকে বন্দর বিলম্বের প্রভাব পড়তে পারে। টেস্কোর ক্ষেত্রে হিসাব কোটি ৩৭ লাখ পাউন্ড এবং জন লুইস এমঅ্যান্ডএসের প্রত্যেকের কোটি ৯৩ লাখ পাউন্ডের পোশাক সরবরাহে বিলম্বের প্রভাব পড়বে।

লন্ডনভিত্তিক ডিজিটাল পণ্য পরিবহন লজিস্টিক কোম্পানি জেনকার্গোর প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স হার্শাম বলেন, ফিলেক্সটো বন্দরে কনটেইনারজট যুক্তরাজ্যের সরবরাহ চেইনে আরো ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ক্রিসমাসের আগে পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের জন্য ভয়ংকর হতে পারে। এখন খুচরা বিক্রেতা ভোক্তাদের সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাতের জন্য প্রস্তুতি নেয়া অপরিহার্য। পাশাপাশি ক্রিসমাসে বিষয়গুলো ব্যাপকভাগে প্রভাব ফেলবেএটা ধরে নিয়েই পরিকল্পনা সাজাতে হবে।

যদিও বিশ্বের অন্য দেশগুলোও একই ধরনের ব্যাঘাতের মুখোমুখি হয়েছে। ট্রাকচালকের ঘাটতি ব্রিটেনের সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এগুলোর পেছনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া এবং কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়ামের খাদ্য টেকসই-বিষয়ক পরিচালক অ্যান্ড্র অপি বলেন, চালক ঘাটতির কারণে সৃষ্ট ফেলিক্সটোয় পণ্যজট আরেকটি অযাচিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। পরিস্থিতি আগামীতে আরো খারাপ হতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

যদিও সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। আরো দেশীয় ট্রাকচালককে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এবং বিদেশী চালকদের টানতে কয়েক হাজার স্বল্পমেয়াদি ভিসার ঘোষণা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার। তবে ভিসাগুলো কয়েক মাসের জন্য হওয়ায় কতজন কর্মী এতে আকৃষ্ট হবেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। এছাড়া পণ্য চালকদের ঘাটতি এমন একসময়ে আসছে, যখন সরবরাহ চেইনের সমস্যাগুলোর কারণে ব্রিটিশ অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এরই মধ্যে গতি হারাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন