‘চীনের পথ’ নিয়ে সংশয়

আনু মুহাম্মদ

পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্র। ইরান, ভারত, ইনকা, মায়ার মতো প্রাচীন চীনের সভ্যতা। ১৯৪৯ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে বিপ্লবের পর এক নতুন চীনের যাত্রা হয়। নানা রকম সংস্কার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান বিশ্বে চীন অন্যতম এক পরাশক্তি। জিডিপির হিসাবে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ফসল নয়া চীন এখন পুঁজিবাদী বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র। ঐতিহাসিক বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে চীনের শক্তি-দুর্বলতা, সাফল্য-ব্যর্থতা ধারাবাহিক পরিবর্তনগুলো নিয়ে লিখেছেন আনু মুহাম্মদ

১৯৭০ সালের মধ্যে চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের উচ্ছ্বাস অনেক কমে যায়। পার্টি সরকার তখন একদিকে উৎপাদন জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বন্ধু সংযোগে বেশি মনোযোগী। ১৯৭০ সালের এপ্রিলে চীন তাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে প্রেরণের মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসীকে নিজেদের বিজ্ঞান প্রযুক্তিগত ক্ষমতার জানান দেয়। সে সময় তারা ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং নিউক্লিয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন বানায়। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় বিশেষজ্ঞবিরোধী বৈরী মনোভাব সময় কমে আসে এবং সরকারি প্রকাশনায় বিশেষায়ণ, বিশেষ প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি জ্ঞান, বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেয়া হতে থাকে।

উৎপাদন ক্ষেত্রে সুস্থিরভাবও ক্রমে ফিরে আসতে থাকে। চীনের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের ভাষ্যমতে, বছর চীনে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিমাণ সুতিবস্ত্র উৎপাদন হয়, তেল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। স্টিল উৎপাদনেও ঘাটতি কমিয়ে আনা হয়। রাসায়নিক সার উৎপাদন আবার বাড়তে থাকে, কৃষি উৎপাদনও বিপ্লব-পরবর্তী সর্বোচ্চ উৎপাদন বছর ১৯৫৭ সালের উৎপাদন সীমা অতিক্রম করে। রেশনিং ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহের পাশাপাশি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য দেশ থেকে গম আমদানি করে খাদ্য মজুদ চার কোটি টনে উন্নীত করা হয়।

সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় মাও সে তুং শুধু চেয়ারম্যান মাও বলে অভিহিত হতেন না। তার নাম চিত্রের ব্যাপক ব্যবহার, তার অবিরাম গুণকীর্তন ছিল পার্টি সরকারের সব পর্যায়ে সব কথা কাজের অংশ। কে কত বেশি বলতে পারে তা নিয়ে প্রতিযোগিতার অবস্থাও তৈরি হতো অনেক সময়। মাও সে তুং নিজে এর অতি ব্যবহারে অনেকবার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। ১৯৭০ সালে পার্টি বিবরণীতে বিষয়ে বলা হয়েছে, ১৮ ডিসেম্বর মাও এডগার স্নোর সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ব্যক্তিত্বের প্রতিমূর্তি দাঁড় করানোর প্রয়োজন কিছুটা আছে। কিন্তু সমস্যা হলো এখন এর খুবই বাড়াবাড়ি হচ্ছে। খুব বেশি আনুষ্ঠানিকতা যেমন চার মহান (মহান শিক্ষক, মহান নেতা, মহান কমান্ডার, মহান কাণ্ডারি) খুবই বিরক্তিকর। তিনি আরো বলেন, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের দুটো বিষয় তার খুবই অপছন্দমিথ্যা কথা বলা এবং বন্দিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার।

আগেই বলেছি, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীনের মতাদর্শগত বিরোধকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের কমিউনিস্ট পার্টি বিপ্লবী বিভিন্ন সংগঠন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবও সময়েই সংগঠিত হয়, যা বিভিন্ন দেশের বহু পার্টিকে বিশ্ববিপ্লবের প্রধান দিশারি হিসেবে চীনকে গ্রহণে উদ্দীপ্ত করেছিল। সময়ের চীনের চর্চা অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের চীনপন্থী বিপ্লবী দল গ্রুপও মাও সে তুংয়ের নামে উচ্ছ্বাস ভক্তি প্রকাশ করেই নিজেদের রাজনৈতিক লাইন নির্ধারণ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত ভারতে ১৯৬৭-পরবর্তী নকশালবাড়ি অভ্যুত্থান সশস্ত্র সংগ্রাম।

ভারতে চীনপন্থী ধারার অনুসারী ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) বা (সিপিআই-এমএল) নেতৃত্বে নকশালবাড়ি আন্দোলন নামে পরিচিত সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন শুরু হয়। চারু মজুমদার, কানু সান্যাল, জঙ্গল সাঁওতাল এর প্রধান নেতা ছিলেন। আন্দোলনে মূল স্লোগানই ছিল চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান তারা দাবি করতেন চীনের জনযুদ্ধের পথেই তারা ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করবেন। শ্রেণীশত্রু খতম শ্রেণীসংগ্রামের একটি প্রধান উপায় হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। অসংখ্য তরুণ আন্দোলনে যুক্ত হন, হতাহত হন অনেকে। আন্দোলন স্বল্পস্থায়ী হলেও ব্যাপক দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে যায়। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের চীনপন্থী ধারার উল্লেখযোগ্য অংশ পথ অনুসরণ করতে গিয়ে মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।

নকশালবাড়ি অভ্যুত্থানের পরপর এর প্রতি চীনা পার্টির স্পষ্ট সমর্থনই প্রকাশিত হয়েছিল। চীনে তখন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জোয়ার। রেডিও পিকিংয়ে, পিকিং রিভিউ পত্রিকায় বলা হয়, আন্দোলন ভারতের বুকে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ এর কিছুদিন পরই পার্টি (সিপিআই-এমএল) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কানু সান্যাল সৌরেন বসুর নেতৃত্বে একটি দল চীন সফর করে। তারা মাও সে তুংসহ পার্টি নেতাদের সঙ্গে কথা বলতেও সক্ষম হন। কিন্তু যতটুকু জানা যায়, মাও সে তুং তাদের চীনকে অন্ধ অনুসরণ না করে দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী শিক্ষার প্রয়োগ করতে পরামর্শ দেন। এর পরবর্তীকালে ধারার প্রতি চীনের কোনো সমর্থন বা পৃষ্ঠপোষকতার খবর পাওয়া যায় না।

আগেও বলেছি, বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলন দ্বিধাবিভক্ত হওয়ার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশে দেশে তাদের অনুসারী দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করত, তাদের দেখাশোনা, তদারকি তাত্ত্বিক পথনির্দেশনা দিত। প্রয়োজনীয় বস্তুগত সমর্থন, শিক্ষা প্রশিক্ষণে সহযোগিতাও দান করত। তার ফলে মস্কোপন্থী পার্টিগুলোর রাজনৈতিক লাইন নির্ধারণে জটিলতা ছিল কম, বিভক্তিও হয়েছে কম। কিন্তু চীনের পক্ষ থেকে সমর্থন বা তার আন্তর্জাতিক ভূমিকা খুব কমই পালন করতে দেখা গেছে। এর ফলে চীনপন্থী দলগুলো কোথাও একক বা ঐক্যবদ্ধ পার্টি হিসেবে কাজ করতে পারেনি। বিভিন্ন গ্রুপ চীন মাও সে তুংয়ের পথ নিয়ে নিজ নিজ ব্যাখ্যা দাঁড় করেছে। তার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বৈরী ভিন্ন অবস্থান তৈরি করেছে। বারবার পার্টি ভাঙনের শিকার হয়েছে। চীনা পথ নিয়ে বহুভাবে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি সংশয়।

১৯৭১: চীনের নতুন যাত্রা

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে কয়েকজন সাংবাদিকসহ মার্কিন টেবিল টেনিস দল চীন সফর করে। স্বয়ং চৌ এন লাই দলকে অভ্যর্থনা জানান এবং দুদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। বছরেরই জুলাইয়ের থেকে ১১ তারিখে চৌ এন লাই কিসিঞ্জার বেইজিংয়ে সভায় মিলিত হন। ১৬ জুলাই ঘোষণা করা হয়, প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে ১৯৭২ সালের মে মাসের আগেই চীন সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ১৯৭১ সালের মে জুনে রুমানিয়া যুগোস্লাভিয়ার নেতারা চীন সফরে এসে বিপুল সংবর্ধনা লাভ করেন। একই বছরের অক্টোবরে আলবেনিয়ার ষষ্ঠ পার্টি কংগ্রেসে চীন কোনো প্রতিনিধি পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। ২৫ অক্টোবর চীন জাতিসংঘভুক্ত হয়। সময়েই হেনরি কিসিঞ্জার প্রথমবারের মতো চীন সফর করেন। ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রিচার্ড নিক্সন চীন সফরে গিয়ে বিপুল সংবর্ধনা পান। কয়েক মাসের মধ্যে কিসিঞ্জার আবারো চীন সফর করেন।

চীন নিয়ে লেখা গ্রন্থে হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৫৬ সালে মস্কোতে মাও সে তুংয়ের দেয়া বক্তৃতার কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে মাও বলেছিলেন,

এখনো কেউ কেউ রকম আছেন যারা চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন একসঙ্গে দাঁড়াচ্ছে রকম একটি অবস্থা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তারা বলেন, চীনের উচিত একটি মধ্যপন্থা গ্রহণ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করা। যদি চীন সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দাঁড়ায়, তার অবস্থান সুবিধাজনক স্বাধীন মনে হলেও আসলে চীন স্বাধীন থাকতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র নির্ভরযোগ্য নয়, সে কোনোভাবেই বেশি কিছু দেবে না। কী করে সাম্রাজ্যবাদ আপনাকে পুরো খাবার দিতে পারে? দেবে না।

উদ্ধৃতি দিয়ে কিসিঞ্জার লিখছেন,

কিন্তু যদি যুক্তরাষ্ট্র, মাও যাকে বলছেন সেই পুরো খাবার, দিতে রাজি থাকে, তাহলে? প্রশ্নের উত্তর ১৯৭২ সালের আগে পাওয়া সম্ভব ছিল না, যখন প্রেসিডেন্ট নিক্সন চীনের দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন।

আগের পর্বগুলোর আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা দেখেছি, আসলে চীন-মার্কিন ঘনিষ্ঠতার শুরু হয়েছিল আরো দুবছর আগে থেকেই। যে সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের দূরত্ব এবং বৈরিতা বাড়তে থাকল, সে সময়েই চীনের যোগাযোগ বাড়তে থাকল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। অঞ্চলে আমরা দেখি, যে সময় ভারতের সঙ্গে চীনের দূরত্ব এবং বৈরিতা বাড়তে থাকল, সে সময়ই চীনের যোগাযোগ বাড়তে থাকল পাকিস্তানের সঙ্গে। বস্তুত চীন-মার্কিন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের দূতিয়ালির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চীনের ভূমিকা দেখতে হবে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ তা ঘোষণায় চীনা পার্টির কোনো সভার কার্যবিবরণী পাওয়া যায় না। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা যুদ্ধকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এটি অভ্যন্তরীণভাবেই সমাধান হবে। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) পলিটব্যুরোর সদস্য সত্যমৈত্র এক সাক্ষাতে আমাকে জানিয়েছেন, সে সময় পার্টি থেকে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, চীনা পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও হয়। প্রতিনিধি দলকে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পাকিস্তান সরকারের দমনমূলক পদক্ষেপ সমর্থন না করলেও তারা পরিস্থিতিকে সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেই মনে করেন এবং আশা করেন, পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।

এর বাইরে বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে চীন সরকার বা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আনুষ্ঠানিক কোনো নিন্দা বা প্রতিবাদ পাওয়া যায় না, বাংলাদেশের চীনপন্থী রাজনৈতিক দল গ্রুপগুলোর প্রতি চীনের রাজনৈতিক দায় দায়িত্ব সম্পর্কে কোনো মনোযোগেরও খবর পাওয়া যায় না। অথচ চীনপন্থী ধারা থেকেই আরো আগে স্বাধীনতার আওয়াজ তোলা হয়েছিল। এমনকি ১৯৭০ সালে প্রকাশ্য জনসভায় স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘটনাপ্রবাহ থেকে মনে হয়, চীনের নেতাদের কাছে তখন তাদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করাই ছিল প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

সাম্রাজ্যবাদের প্রতি নমনীয় অবস্থান এবং বিভিন্ন দেশে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে যথাযথ ভূমিকা পালন না করার অভিযোগ নিয়েই চীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমালোচনা করছিল, তার বিরুদ্ধে মতাদর্শিক সংগ্রাম পরিচালনা করেছিল। কিন্তু এর কয়েক বছরের মধ্যেই চীনের ভূমিকা সেই পথই গ্রহণ করল আরো খোলামেলাভাবে। (চলবে)

আনু মুহাম্মদ: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন