বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ওয়ারেন বাফেট।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ৯০ বছর বয়সী এই বিলিয়নেয়ার বিনিয়োগকারী এ ঘোষণা দেন।
পাশাপাশি তিনি আবারো অনুদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
এর মাধ্যমে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের এ চেয়ারম্যান সংস্থায় থাকা তার অর্ধেক সম্পদ অনুদান দিলেন।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়ারেন বাফেট এক বিবৃতিতে গেটস ফাউন্ডেশনে বছরের পর বছর ধরে নিষ্ক্রিয় ট্রাস্টি থাকার কথা বলেছেন।
তবে এ সময়ে তিনি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক সুজমানকে পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছেন এবং তাদের লক্ষ্য শতভাগ পূরণের কথা জানিয়েছেন।
তবে তিনি ঠিক কী কারণে পদত্যাগ করছেন, তা ব্যাখ্যা করেননি।
তিনি জানান, বার্কশায়ার ছাড়া তিনি অন্য সংস্থাগুলোর পরিচালক পদ ছেড়ে দিয়েছেন এবং কাজের চাপ কমিয়েছেন।
বাফেট নতুন করে ৪১০ কোটি ডলারেরও বেশি অনুদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
গেটস ফাউন্ডেশন ও চারটি পারিবারিক দাতব্য প্রতিষ্ঠানে বার্কশায়ারের প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ ক্লাস বি শেয়ার অনুদান দিচ্ছেন তিনি।
সর্বশেষ এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি তার মোট সম্পদের ৯৯ শতাংশ অনুদান দেয়ার প্রতিশ্রুতির অর্ধেকটা পূরণ করলেন।
২০০৬ সাল থেকে বাফেট বার্কশায়ার শেয়ারের ৪ হাজার ১৫০ কোটি ডলারেরও বেশি অনুদান দিয়েছেন।
এর মধ্যে কেবল গেটস ফাউন্ডেশনেই দিয়েছেন ৩ হাজার ২৭০ কোটি ডলার।
তবে বার্কশায়ারের শেয়ারের দাম বাড়ায় সামগ্রিক এ অনুদান এখন প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলারের সমতুল্য।
বাফেট বলেন, বেশ কয়েক দশক ধরে আমি যা করতে পছন্দ করি, কেবল তা করেই বিপুল পরিমাণ জমা করেছি।
সমাজে আমার অর্থের প্রয়োজন রয়েছে, আমার নেই।
২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত গেটস ফাউন্ডেশন দারিদ্র্য, রোগ ও বৈষম্য নিরসনে কাজ করছে।
দুই দশকেই দাতব্য সংস্থাটি ৫ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে।
তবে সম্প্রতি দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা ২৭ বছরের বিবাহিত জীবনের সমাপ্তি টানায় ফাউন্ডেশনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
বিল ও মেলিন্ডা গেটসের এ বিচ্ছেদের পর ফাউন্ডেশন কীভাবে চলবে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়েই আলোচনা চলছে।
এমন পরিস্থিতিতেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন বাফেট।
বাফেটের অনুদানগুলো তার প্রয়াত স্ত্রীর নামে করা সুসান থম্পসন বাফেট ফাউন্ডেশন এবং তার সন্তান হাওয়ার্ড, সুসান ও পিটারের পরিচালিত দাতব্য সংস্থা হাওয়ার্ড জি বাফেট ফাউন্ডেশন, দ্য শেরউড ফাউন্ডেশন ও নোভো ফাউন্ডেশনেও যায়।
বাফেট অনুদান না দিলে তার সম্পদ ফোর্বস ম্যাগাজিন অনুসারে বিশ্বের শীর্ষ ধনী অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের সমান হয়ে উঠবে।
বিল গেটস ও বাফেট বিশ্বের অতিধনীদের অনুদান দিতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও নিয়েছিলেন।
যেখানে মাইকেল ব্লুমবার্গ, ল্যারি এলিসন, কার্ল ইকাহান, ইলোন মাস্ক, মার্ক জাকারবার্গ ও সৌদি যুবরাজ আওয়ালিদ বিন তালালের মতো দুই শতাধিক অতিধনী তাদের অন্তত অর্ধেক সম্পদ অনুদান দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন।
বাফেট ১৯৬৫ সাল থেকে বার্কশায়ারকে ৬০ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
সংস্থাটি বর্তমানে বিএনএসএফ রেলপথ, জিকো অটো ইন্স্যুরেন্স ও অ্যাপল ইনকের মতো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মালিক।
সর্বশেষ এ অনুদান দেয়ার পরও বাফেটের হাতে বার্কশায়ারের ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটিং ক্ষমতা রয়ে গেছে।