মেধাস্বত্ব মওকুফ, না টিকার সরবরাহ বাড়ানো জরুরি?

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ ভ্যাকসিন থেকে মেধাস্বত্ব তুলে নিতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। যদি এতে তারা সফল হয়ও শিগগিরই হয়তো জীবন রক্ষাকারী টিকাগুলো নিয়ে সংকট সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। কয়েক সপ্তাহ ধরেই মেধাস্বত্ব তুলে নেয়া প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং ফার্মাসিউটিক্যাল খাতটি এর তীব্র বিরোধিতা করছে। টিকা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এটা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পক্ষ থেকে অনুমোদিত হয় তাহলেও টিকার সরবরাহ বাড়াতে এক বছরের বেশি সময় লাগবে। খবর ব্লুমবার্গ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা ক্লাউস স্টোহর বলেন, মেধাস্বত্ব তুলে নিলে এমন বড় কোনো পার্থক্য তৈরি হবে না। কারণ আমি মনে করি, মেধাস্বত্ব থাকা বা না-থাকা আসল বাধা নয়। মূল সমস্যা হলো জটিল প্রযুক্তি বুঝতে না পারা।

টিকার জন্য সবাই সমান অধিকার পাওয়ার বিষয়ে এমন পদক্ষেপ নেয়ায় স্বাস্থ্য পরামর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে বাইডেন প্রশাসন। কারণ টিকা বিশ্বের অনেক দেশেই এখনো দুষ্প্রাপ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীন এখনো মেধাস্বত্ব বিতর্কে অংশ নিতে আগ্রহী। যদিও জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল প্রস্তাবটির বিপক্ষে মত দিয়েছেন।

জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, টিকা উৎপাদনকে সীমাবদ্ধ করে কারখানাগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা উচ্চমান বজায় রাখা জরুরি। মেধাস্বত্ব এখানে তেমন ভূমিকা রাখে না।

তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির প্রধান রাজিব ভেনকায়া বলেন, টিকার উৎপাদন বাড়াতে কাঁচামাল বা মূল উপাদানের অভাব মোকাবেলা করতে হবে, উৎপাদনের জন্য ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সম্ভব হলে প্রযুক্তি স্থানান্তরের কাজ জানেন এমন বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করতে হবে। মেধাস্বত্বের দিকে মনোযোগ না দিয়ে বিশ্বের এখন উচিত কীভাবে টিকার উৎপাদন বাড়ানো যায় সেদিকে লক্ষ রাখা। অতীতেও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির ব্যবহার নিয়ে মতভেদের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধে অন্যদের প্রবেশাধিকার ছিল না।

নিল ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল অ্যান্ড গ্লোবাল হেলথ পরিচালক লরেন্স গস্টিন বলেন, আইপি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলে তা দীর্ঘমেয়াদের জন্য হয়তো ভালো। কিন্তু অনেক দেশের এখনই টিকা প্রয়োজন। এসব দেশকে অবিলম্বে টিকা সরবরাহ করা উচিত এবং মেধাস্বত্ব মওকুফ করে সেখানেও টিকা উৎপাদনের ব্যবস্থা করে দেয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যা করছে তা এক ধরনের কপটতা। দেশটি বিশ্বের এক নম্বর টিকার মজুদদার এবং সফলভাবে টিকাদান কর্মসূচি চালিয়েও যাচ্ছে তারা।

সুইডেনের ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক স্টিফেন সোয়ার্টলিং পিটারসন বলেন, নিরাপদ কার্যকর টিকার দ্রুত অনুমোদন পেতে সাহায্য করেছে দশকের পর দশক ধরে জনগণের টাকায় চলা বিজ্ঞান গবেষণা। নিজেদের উৎপাদিত টিকার মাধ্যমে ফার্মাসিউটিক্যালসগুলো যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করেছে। সংকটটি তখনই তৈরি হয়েছে যখন মেধাস্বত্ব ভাগ করে অন্য দেশগুলোকে টিকা উৎপাদনে সহায়তা করার প্রসঙ্গ এসেছে। তিনি বলেন, এখন একটি জরুরি অবস্থা বিরাজ করছে। এখন যদি অন্যদের পাশে না দাঁড়াই তো কখন? ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট জটিল টিকা উৎপাদন করছে উল্লেখ করে অধ্যাপক বলেন, ব্রাজিল, ভারত দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশকে সুযোগ দেয়া হলে তারাও টিকা উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোয় দ্রুত টিকা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।

বেসরকারি সংস্থা ডক্টর উইথ আউট বর্ডার বলছে, অনেক স্বল্প আয়ের দেশে বৈশ্বিক টিকার খুব সামান্য অংশ পৌঁছেছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার প্রতিটি নাগরিকের জন্য টিকা সংরক্ষিত আছে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত টিকাও সংরক্ষণ করে রেখেছে দেশটি। তবে সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

মেধাস্বত্ব তুলে নিলে বৈশ্বিক টিকার উৎপাদন খুব বেড়ে যাবে এমনটা বলা যায় না। উল্টো করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ধরন নিয়ে গবেষণা করতে হয়তো স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। সে কারণে বুঝে-শুনে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন