আলোচিত নুসরাত হত্যার দুই বছর

রায় কার্যকর হয়নি দেড় বছরেও

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ফেনী

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফী হত্যার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মামলার রায় ঘোষণা করা হলেও প্রায় দেড় বছরেও তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত মামলার রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।

গতকাল নুসরাত হত্যার দুই বছর উপলক্ষে সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া এলাকায় মিলাদ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এদিন নুসরাতের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান পরিদর্শক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলমের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি দল পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে কবর জিয়ারতে অংশ নেন তারা।

জানা যায়, সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় ২০১৯ সালের এপ্রিল গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে নুসরাতকে হত্যার চেষ্টা করে তার সহপাঠীরা। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২৪ অক্টোবর ফেনীতে নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ বহুল আলোচিত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন। রায় প্রকাশের পর তা কার্যকরের জন্য ডেথ রেফারেন্স উচ্চ আদালতে শুনানির জন্য নথিভুক্ত হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা আটকে আছে। দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন নুসরাতের পরিবার, স্বজন সহপাঠীরা।

নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এখনো পুলিশ ওই বাড়িতে পাহারা বসিয়ে নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। বাড়িতে এখনো প্রাণ ফেরেনি। নুসরাতের বাবা, মা দুই ভাই দুঃসহ স্মৃতির কথা বর্ণনা করতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।

নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। রায় দ্রুত কার্যকরের মাধ্যমে নুসরাতের আত্মা শান্তি পাবে। অপরাধীদের জন্য এটি হবে একটি নিদর্শন। রায় কার্যকর বিলম্বিত হওয়া অপ্রত্যাশিত। জরুরি ভিত্তিতে উচ্চ আদালতের আপিল শুনানি শেষে দ্রুত সাজা কার্যকরের দাবি জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার হন নুসরাত জাহান রাফি। ওই ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন। একই দিন পুলিশ সিরাজকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। ওই মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের অনুসারী নুসরাতের সহপাঠীরা তার পরিবারের সদস্যদের চাপ দিতে থাকে। ২০১৯ সালের এপ্রিল খুনিরা সিরাজের সঙ্গে কারাগারে পরামর্শ করে। এপ্রিল মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে নুসরাতকে খুন করার পরিকল্পনা নেয় তারা। এপ্রিল নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে সহপাঠীরা সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে তার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যা করে। ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ১৬ জন আসামিকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয়। ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরে ৬১ কার্যদিবসের মধ্যে ৮৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২৪ অক্টোবর রায় ঘোষণা করা হয়। মামলার সব আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন বিচারক মামুনুর রশীদ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন