করোনা মহামারীতে ব্যবসায় ধস নামায় বিকল্প আয়ের আশায় হাঁস পালন শুরু করেন বেকারি ব্যবসায়ী অনোক কুমার পাল। মাত্র ২ লাখ টাকা পুঁজিতে আট মাসের মাথায় তার মাসিক আয় এখন অর্ধলক্ষ টাকা। সবকিছু ঠিক থাকলে খামার থেকে মাসে আয় ৬০ থেকে ৭০ হাজারে পৌঁছাবে তার।
অনোক কুমার পাল বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা। পাঁচ বছর আগে রঙ মিস্ত্রির কাজ ছেড়ে বেকারির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। চানাচুর, বিস্কুট, চিড়াসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য তৈরি ও বিক্রি করে ভালোই চলছিল তার সংসার। কিন্তু গত বছরের জুনে করোনা অতিমারীর কারণে ব্যবসায় ধস নামে। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে অনোকের। এক পর্যায়ে ইউটিউবে বিভিন্ন হাঁসের খামারের ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত নেন খামার করার। এজন্য বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে শুরু করেন হাঁস পালন। জামানো টাকা দিয়ে ঘেরের পাশে হাঁসের জন্য গোলপাতার ছাউনিতে কাঠের শেড তৈরি করেন। বাগেরহাট আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার থেকে ২০ টাকা দরে ১ হাজার ৫০টি হাঁসের বাচ্চা নিয়ে খামারের যাত্রা করেন। মাত্র ৩ মাস ২৬ দিনে অনোকের খামারের হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। খামার থেকে এখন প্রতিদিন ৪০০-৪৫০টি ডিম সংগ্রহ করেন তিনি। খাবারের দাম ও একজন কর্মচারীর বেতনসহ সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয় তার। করোনার সংকটে এ হাঁসের খামারই হাসি ফুটিয়েছে অনোক ও তার পরিবারের মুখে।
অনোক বলেন, ৩৩ শতাংশ জমির ওপর আমার মৎস্য ঘের ও হাঁসের খামার। খামারে বাচ্চা ওঠানোর মাত্র ৩ মাস ২৬ দিনে হাঁস ডিম দেয়া শুরু করে। এটা ছিল আমার জন্য খুবই আনন্দের। বর্তমানে খামার থেকে ভালোই আয় হচ্ছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও আঞ্চলিক হাঁস খামারের লোকজন আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এ আয় ৬০ থেকে ৭০ হাজারে পৌঁছাবে বলে আশা করছি। এভাবে মাস ছয়েক চলতে পারলে আরো একটি খামার করার ইচ্ছা আছে আমার।
বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুত্ফর রহমান বলেন, অনোক খামার করার আগে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা তাকে সব ধরনের কারিগরি পরামর্শ দিয়েছি। বর্তমানে তাকে একজন সফল হাঁস খামারি বলা যায়। হাঁস পালন খুবই লাভজনক। হাঁসের মৃত্যুহার খুবই কম। রোগব্যাধিও কম। তাই নিয়ম মেনে হাঁস পালন করতে পারলে খুব সহজে সচ্ছলতা আনা যায়।