এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) আরো দুই সহযোগীকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আটক করেন দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান। আটকের পর তাদের রমনা থানায় রাখা হয়েছে।
আটক করা ব্যক্তিরা হলেন পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএল) চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক। পিকে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। অনুসন্ধানে এ দুজনের নামে ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। অর্থ আত্মসাতের এ অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার পিকে হালদারের ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাকে পিকে হালদারের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার করে দুদক।
গ্রেফতার প্রসঙ্গে সেদিন দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, পিকে হালদার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করতেন সুকুমার ও অনিন্দিতা মৃধা। পিকে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানও করেন সুকুমার মৃধা। পিকে হালদার ভুয়া ঋণ দেখিয়ে অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় ১০০ কোটি টাকা তার মা লীলাবতী হালদারের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে রাখেন। পরে লীলাবতী হালদারের ব্যাংক হিসাব থেকে সুকুমার মৃধা, অবন্তিকা বড়াল ও অনিন্দিতা মৃধার মাধ্যমে আবার পিকে হালদারের কাছে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করা হয়। এভাবে তারা মানিলন্ডারিং করেছেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তথ্য পেয়েছেন। এছাড়া সুকুমার মৃধার প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদ ও তার মেয়ে অনিন্দিতার প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব আসলে পিকে হালদারের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বলে উল্লেখ করেন দুদক সচিব।
এর আগে ১৩ জানুয়ারি পিকে হালদারের আরেক সহযোগী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয় দুদক। মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় ৪ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয় পিকে হালদারের আরেক সহযোগী শংখ ব্যাপারীকে।
পিকে হালদার অবৈধ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত সম্পদের বেশির ভাগই বিদেশে, বিশেষ করে কানাডায় পাচার করেছেন। বর্তমানে নিজেও বিদেশে অবস্থান করছেন তিনি। তবে ঢাকায় তার নামে একাধিক বাড়ি, প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে এবং নামে-বেনামে একাধিক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ক্যাসিনো-সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রথম যে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে, তাদের মধ্যে পিকে হালদার ছিলেন একজন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ও গত বছরের ১০ আগস্ট হাজির হতে নোটিস পাঠিয়েছিল দুদক। ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। সেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই তিনি দেশ ছাড়েন।
এর আগে গত বছরের ৮ জানুয়ারি প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার এজাহারে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা পাচারেরও অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। মামলাটির তদন্ত করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন। পিকে হালদারকে গ্রেফতারে এরই মধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। এছাড়া তার মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।