নাগরিক প্লাটফর্মের ভার্চুয়াল আলোচনা

করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিয়ে সংশয় প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে করোনা সংক্রমণের ১০ মাস পর আগামী জানুয়ারিতে ভ্যাকসিন আনা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এমনটিই জানানো হচ্ছে। তবে ভ্যাকসিন প্রয়োগের বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা ভ্যাকসিনের তথ্যের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশের আয়োজনে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন বাংলাদেশ: কে কখন কীভাবে পাবে শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সভায় এমন মন্তব্য করেন তারা। 

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো . দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক অধ্যাপক . মুশতাক চৌধুরী বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সম্ভাবনা তুলে ধরেন। 

পরে আলোচনায় ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ . বিজন কুমার শীল বলেন, ভ্যাকসিনস্বল্পতায় সবাইকে তা দেয়া যাবে না। যাদের শরীরে অ্যান্টিবডি নেই তাদের ভ্যাকসিন দেয়া উচিত। ভ্যাকসিন ভালো কি খারাপ তা ১০ মাসে বোঝা যাবে না। একটা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বুঝতে পাঁচ বছর পর্যন্ত লেগে যায়। সবার প্রথমে দেখা উচিত, যাকে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে সে পাওয়ার যোগ্য কিনা। সঠিক পাত্রকে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে কিনা। একই সঙ্গে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর তার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো কিনা, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।

দেশে ট্রায়াল ছাড়াই ভ্যাকসিন প্রয়োগ ঝুঁকি তৈরি করবে কিনা এমন মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক . রুমানা হক বলেন, ট্রায়াল ছাড়াই বাংলাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ হচ্ছে। যেসব দেশ বিভিন্ন ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে অংশ নিয়েছে, তারা ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। বাংলাদেশ সেসবে অংশ নিলে বাংলাদেশও অগ্রাধিকার পেত। ভ্যাকসিন সংরক্ষণে আমাদের কোল্ড চেইনের সক্ষমতা বিবেচনা করতে হবে। করোনার ভ্যাকসিন শুধু এক বছরের বিষয় নয়। দীর্ঘমেয়াদি একটা পরিকল্পনা দরকার।

ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তথ্যের স্বল্পতা রয়েছে উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো . রওনক জাহান বলেন, সাধারণ মানুষ যেন ভ্যাকসিন নিয়ে সঠিক তথ্য পায় তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। মানুষ যেন তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারা ভ্যাকসিন পাবে, কাকে দেয়া হবে, কীভাবে দেয়া হবে, তা জানানো গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কীভাবে ভ্যাকসিন বিতরণের ব্যবস্থা করেছে তা দেখতে হবে।

ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্বৃত্তায়ন হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ মাহবুব। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন ক্ষমতাসীনরা পাবে। যাদের পাওয়ার কথা তারা ভ্যাকসিন পাবে বলে মনে হয় না। সরকার ভ্যাকসিন বিতরণ প্রয়োগ বাস্তবায়নের জন্য যে কমিটি করেছে তা কাজ করবে না। এখানে চিকিৎসকদের কিছু করার থাকলেও তারা তা পারছেন না। কারণ তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন আমলারা।

ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে একটি পাইলট ট্রায়াল খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ (জনস্বাস্থ্য) বিভাগের সভাপতি . মো. তাজুদ্দিন শিকদার বলেন, রকম মনে করার কারণ নেই যে ভ্যাকসিন নিতে লাইন পড়ে যাবে। এমন নাও হতে পারে। তবে এটার বিপণন বিতরণ সঠিক পদ্ধতিতে করতে হবে। ভ্যাকসিন বেসরকারি খাতের মাধ্যমে বিতরণ এতে সরকারি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ের গুরুত্ব আরোপের কথা বলেন বক্তারা। 

ভ্যাকসিন বিতরণ প্রয়োগ বাস্তবায়ন নিয়ে জেলা পর্যায়ের কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. এএফএম রুহুল হক। ভ্যাকসিনের বিষয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বিবেচনা করতে হবে বলে মনে করেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত। 

আলোচনা সভার আয়োজনে সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিল অ্যাকশনএইড, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, ওয়াটারএইড, কো-অপারেশন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন