সিপিডি ও অক্সফাম আয়োজিত সংলাপ

বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রণোদনা ঋণের ৭০% ব্যবহার হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় বিশ্বের অনেক দেশের মতোই বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। তবে বাংলাদেশে যাদের লক্ষ্য করে ঘোষণা করা হয়েছিল, তাদের সবার কাছে প্রণোদনা প্যাকেজ পৌঁছেনি। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। বাস্তবায়নের বর্তমান স্থিতি অনুযায়ী প্রণোদনা প্যাকেজ পৌঁছেছে বা প্রভাব ফেলতে পেরেছে মোট কর্মসংস্থানের মাত্র শতাংশের হাতে। তবে প্যাকেজের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলেও তা পৌঁছাত মাত্র ১২ শতাংশের হাতে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অক্সফাম বাংলাদেশ আয়োজিত এক জাতীয় ভার্চুয়াল সংলাপে গতকাল এক গবেষণাসংক্রান্ত উপস্থাপনায় বক্তব্য উঠে আসে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সিপিডি অক্সফাম যৌথভাবে এনহ্যান্সিং দ্য পার্টিসিপেশন অব কমিউনিটি-বেজড অর্গানাইজেশনস অ্যান্ড সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনস ইন ডেমোক্রেটিক গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় গতকাল এমপ্লয়মেন্ট ইমপ্লিকেশনস অব স্টিমুলাস প্যাকেজেস: চ্যালেঞ্জেস ফর রিকভারি শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করা হয়।

সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আবদুস সালাম। সংলাপে অংশ নেন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি কামরান টি রহমান, সোস্যালিস্ট লেবার ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো . নাজনীন আহমেদ, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো . দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক . ফাহমিদা খাতুন, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান এবং অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর . দ্বীপঙ্কর দত্ত। 

সংলাপে তৌফিকুল ইসলাম খান তার উপস্থাপনায় বলেন, চারটি ভাগে আমরা দেখানোর চেষ্টা করেছি কতখানি কর্মসংস্থানকে সুরক্ষা দিয়ে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কোনো বিশেষ খাতকে প্রাধিকার দিয়ে করা হয়েছে কিনা, তা- দেখার চেষ্টা করেছি। যতগুলো প্যাকেজ এসেছে, তার অর্ধেকই সরাসরি কর্মসংস্থানকে সুরক্ষার লক্ষ্যে করা হয়নি।

তিনি বলেন, বড় সমস্যার ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়টি বলার চেষ্টা করেছি, সেটি হলো ক্ষুদ্র-মাঝারি-কটেজ সংশ্লিষ্টদের জন্য ঋণ ব্যবস্থা খুব ভালো ফল দিচ্ছে না। এখন পর্যন্ত বাস্তবায়নের হার পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য যে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেয়া হয়েছে, তার ৭০ শতাংশের মতো ব্যবহার হয়েছে। রফতানিমুখীদের জন্য যেটা দেয়া হয়েছে, তার ৮০ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে। অন্যদিকে ছোটদের প্রণোদনা প্যাকেজের ২৮ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে, যা পেয়েছে ৩২ হাজার প্রতিষ্ঠান। এছাড়া কৃষির জন্য ঘোষিত ঋণের প্রণোদনা প্যাকেজের ৪৫ শতাংশ, ছোট ট্রেডার পেশাদার কৃষকদের ঋণের মাত্র ২১ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ ছোটদের জন্য ঘোষিত ঋণ ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ খুব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

উপস্থাপনায় বিভিন্ন দেশে কভিড মোকাবেলায় ঘোষিত প্যাকেজের সঙ্গে বাংলাদেশে ঘোষিত প্যাকেজের আকার জিডিপিতে এর অংশের তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেখানো হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, জিডিপিতে প্রণোদনা প্যাকেজের অংশ বিবেচনায় এশিয়ার মোট ৩১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২২তম। আবার মাথাপিছু আয় হিসেবে ৩১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৩তম।

সংলাপের আলোচনায় বলা হয়, করোনাকালে সরকারের দেয়া প্রণোদনা প্যাকেজ কর্মসংস্থান তৈরি করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারেনি। সময় বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষার তথ্য-উপাত্তও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে আইএলওর বরাতে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছর করোনার কারণে বাংলাদেশে ১১ থেকে ১৭ লাখ মানুষ চাকরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছে।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার করোনাকালে যে প্রণোদনা দিয়েছে, তা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যথেষ্ট নয়। সরাসরি জনগণকে পরিবারপ্রতি অর্থ দেয়ার যে প্রস্তাব ছিল, তাতে বাজারে চাহিদা তৈরি হতো। এতে উৎপাদন কর্মসংস্থানও গতিশীল থাকত।

সংলাপে আলোচনায় বক্তারা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে চাকরি বা কাজের সুযোগ কমছে, বেকারত্ব বাড়ছে। সেখানে নতুন কর্মসংস্থান দুরূহ কাজ বলেই মনে করছি। বেশি শ্রমঘন কৃষি, এসএমইর মতো খাতে প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন প্রত্যাশানুযায়ী হচ্ছে না। ঋণ নিতে চাইলেও কাঠামো নীতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে তারা পাচ্ছেন না। তাই প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকারিতা নিয়ে আরো পর্যালোচনা করতে হবে।

সময় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যোগ দেয়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও প্রায় একই মতামত তুলে ধরেন। তারা বলেন, প্রণোদনা ত্রাণ সহায়তা চর, হাওড়ের মতো প্রান্তিক তৃণমূল পর্যায়ে অনেক জায়গায় তেমন একটা পৌঁছেনি। যতটুকু পৌঁছেছে তার বিতরণেও স্বচ্ছতার ঘাটতি দেখা গিয়েছে, যার কারণে স্থানীয় সরকারের শতাধিক প্রতিনিধি বরখাস্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন