টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রান তাড়ায় শেষ বলের ‘থ্রিলার’

ক্রীড়া ডেস্ক

২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ বলে জয়ের পর উচ্ছ্বাস বাঁধ ভাঙে কোহলির ছবি: আইসিসি
Default Image

আজ ভোরে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়ে যাচ্ছে নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আসর থেকে শুরু করে ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অষ্টম আসর পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সাক্ষী হয়ে আছে বহু স্মরণীয় ঘটনার, মুহূর্তের। ২০০৭ বিশ্বকাপ আসরেই যেমন ভারত-পাকিস্তান স্নায়ুক্ষয়ী ফাইনাল হলো। শেষ ওভারে একেবারে তীরে গিয়ে তরী ডুবল পাকিস্তানের। এ রকম বহু জমজমাট ম্যাচের জন্ম হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। পাশাপাশি কিছু ম্যাচের নিষ্পত্তি ঘটেছিল একেবারে শেষ বলে। যেসব দল রান তাড়া করে শেষ বলে জয় পেয়েছিল তাদের নিয়েই আজকের আয়োজন।

নেদারল্যান্ডস-ইংল্যান্ড (২০০৯): ২০০৯ সালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বসেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর। সেবার পাকিস্তান শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরেছিল। ওই আসরে নেদারল্যান্ডস-ইংল্যান্ড ম্যাচটি আজও ক্রিকেট অনুরাগীদের মনে গেঁথে আছে। প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপে শেষ বলে জয় তুলে নিয়েছিল ডাচরা। 

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার রবি বোপারা (৩৪ বলে ৪৬) ও লুক রাইটের (৪৯ বলে ৭১) ব্যাটে ভর করে দারুণ সূচনা করে ইংল্যান্ড। তবে অভিজ্ঞতা দিয়ে এই দুই ওপেনারকেই ফেরান রায়ান টেন ডেসকাট। তাতে ২০ ওভার শেষে ইংলিশদের স্কোর দাঁড়ায় ১৬২/৫।

১৬৩ রান তাড়া করতে নেমে জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রডের সামনে সুবিধা করতে পারেননি ডাচ ওপেনাররা। প্রথম চার ওভারের মধ্যেই ওপেনার আলেক্সি কারভেজ্জি ও ড্যারন রিকার্সকে সাজঘরে ফেরান তারা। এরপর দ্রুতই বাস জুইডেরান্টও সাজঘরের পথ ধরেন। যখন ম্যাচে ডাচদের পরাজয় আসন্ন তখনই দারুণ এক নকে (৩০ বলে ৪৯) দলের আশা বাঁচিয়ে রাখলেন টম ডি গ্রুথ। নাটকীয়তার পর শেষ বলে ডাচদের প্রয়োজন পড়ে দুই রানের। তখনই স্টুয়ার্ট ব্রডের ওভার থ্রোতে লর্ডসে ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত হয়ে গেল ডাচদের।

শ্রীলংকা-ভারত (২০১০) : রান তাড়ায় শেষ বলে জয় পাওয়ার পরের নজিরটা ২০১০ সালের বিশ্বকাপে ভারত-শ্রীলংকা ম্যাচে। গৌতম গম্ভীর (৩২ বলে ৪১) ও সুরেশ রায়নার (৪৭ বলে ৬৩) ব্যাটে ভর করে শ্রীলংকাকে ১৬৪ রানের টার্গেট দেয় ভারত। ডানহাতি ফাস্ট বোলার লাসিথ মালিঙ্গা এ ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিংয়ে চার ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে তুলে নেন দুটি উইকেট। রান তাড়া করতে নেমে প্রথম দুই ওভারেই দুই ওপেনারকে হারায় শ্রীলংকা। এরপর তিলকারত্নে দিলশান (২৬ বলে ৩৩) ও কুমার সাঙ্গাকারা (৩৩ বলে ৪৬) ও অ্যাঞ্জলো ম্যাথুসের (৩৭ বলে ৪৬) ব্যাটে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে শ্রীলংকা। এর পরও ম্যাচটি যখন তাদের হাত থেকে ছিটকে পড়ছিল তখন চামারা কাপুগেদারার ঝড়ো ইনিংস (১৬ বলে ৩৭) শ্রীলংকাকে শেষ বলে এনে দিল অবিস্মরণীয় এক জয়। 

আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে (২০১৪): ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বসেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসর। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের দর্শক সেবার সাক্ষী হয় অবিশ্বাস্য জমে ওঠা একটি ম্যাচের। আগে ব্যাট করে ব্রেন্ডন টেইলরের ফিফটিতে (৪৬ বলে ৫৯) ভর করে ৫ উইকেটে ১৬৩ রানের পুঁজি গড়ে জিম্বাবুয়ে। জবাব দিতে নেমে পল স্টার্লিংয়ের ঝড়ো ফিফটিতে (৩৪ বলে ৬০) সেই ম্যাচে শেষ বলে জয় পায় আয়ারল্যান্ড। শেষ ওভারে মাত্র চার রানের প্রয়োজন পড়লেও শেষ বলে আসে আইরিশদের জয়। এই হারে তিনাশে পানিয়াঙ্গারার দুর্দান্ত বোলিং প্রচেষ্টা (৪/৩৭) সেদিন বিফলেই যায়।

নেদারল্যান্ডস-জিম্বাবুয়ে (২০১৪): সেই একই মাঠে দুদিন পর আরেক ক্ল্যাসিক ম্যাচের জন্ম দিল জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডস। এবার তীরে এসে তরী ডুবল না জিম্বাবুয়ের। তারাই হাসল শেষ হাসি। আগে ব্যাট করে টম কুপারের ফিফটিতে (৫৮ বলে ৭২) নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪০ রান তোলে ডাচরা। প্রোসপার উৎসেয়া ২৪ রানে নেন দুই উইকেট। রান তাড়া করতে নেমে ব্রেন্ডন টেইলরের লড়াকু ইনিংস (৩৯ বলে ৪৯) শেষ বলে জয় এনে দেয় জিম্বাবুয়েকে। পিটার সিলার ৯ রানে ২ উইকেট নিয়েও জেতাতে পারেননি ডাচদের।  

ভারত-পাকিস্তান (২০২২): ২০ ওভারের বৈশ্বিক আসরে শেষ বলে পাওয়া অবিস্মরণীয় জয়গুলোর মধ্যে সর্বশেষটি এসেছে সর্বশেষ বিশ্বকাপে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শান মাসুদের ব্যাটে ভর দিয়ে ৮ উইকেটে ১৫৯ রান তুলেছিল পাকিস্তান। ভারতের সমীহ জাগানো পেস ব্রিগেড এ রানকে পুঁজি করেই দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। যদিও লড়াকু খেলোয়াড় বিরাট কোহলি ছিলেন বলে পাকিস্তানের আর জেতা হলো না। ৫৩ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলে তিনিই রোমাঞ্চকর এক জয় এনে দেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিপক্ষে। 

রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা হয় শেষ ওভারে। ভারতকে জিততে করতে হতো ১৬ রান। পাকিস্তান দলনায়ক বাবর আজম বল তুলে দিলেন স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজের হাতে। প্রথম বলেই হার্দিক পান্ডিয়া আউট হয়ে গেলে আরো চাপে পড়ে ভারত। নতুন ব্যাটার দিনেশ কার্তিক এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দেন কোহলিকে। পরের বলে দুই রান নেন কোহলি। সমীকরণ তখন ৩ বলে ১৩। চতুর্থ বলে ‘নো’ হলে ছক্কা হাঁকান কোহলি। সমীকরণ এক লাফে নেমে এল ৩ বলে ৬। এরপর টানা ‘ওয়াইড’ ও ‘বাই’ থেকে চার রান পেল ভারত। পঞ্চম বলে দিনেশ কার্তিক রানআউট! এরপর শেষ বলে লাগে দুই রান। আবারো ‘ওয়াইড’! এরপর শেষ বলটি থেকে রবিচন্দ্রন অশ্বিন এক রান তুলে নিতে সমর্থ হন। এর মধ্য দিয়ে ভারত-পাকিস্তান ক্ল্যাসিকেরও সমাপ্তি ঘটে শেষ বলে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন