এমবাপ্পের সমান বেতন পাবেন বেলিংহ্যাম ও ভিনিসিয়ুস!

ক্রীড়া ডেস্ক

কিলিয়ান এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র

২১ বছর বয়সী জুড বেলিংহ্যাম ও ২৪ বছর বয়সী ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের পারিশ্রমিক বাড়িয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পের সমান করে দিল স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। খবর ওকে দিয়ারিও।

ফরাসি সুপারস্টার কিলিয়ান এমবাপ্পে চলতি গ্রীষ্মকালীন দলবদলে প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) ছেড়ে যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে। রিয়াল মাদ্রিদে তিনি সাইনিং বোনাস পাচ্ছেন ১০ কোটি ইউরো। এছাড়া তার বার্ষিক মূল বেতন ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ ইউরো, যা ক্লাবের সর্বোচ্চ। তখন তিনি ইংলিশ তারকা জুড বেলিংহ্যাম ও ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে টপকে যান।

বোনাসের হিসাবটা বাদ দিলে এমবাপ্পের যে বেতন ধরা তা রিয়ালের সাবেক সতীর্থ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, গ্যারেথ বেল ও এডেন হ্যাজার্ডের সমান। তাদের কেউই এখন আর ক্লাবটিতে নেই। 

এমবাপ্পে যোগ দেয়ার আগ পর্যন্ত বার্নাব্যুতে সর্বোচ্চ ১ কোটি ইউরো বেতন পেতেন ভিনিসিয়ুস। বেলিংহ্যামও তাই। সেই বেতনে তারা অসন্তুষ্ট ছিলেন না। যদিও এমবাপ্পের আগমনের পর সংকট তৈরির আশঙ্কা করা হয়। তাই এ দুজনের বেতন ৫০ লাখ ইউরো বাড়িয়ে দেড় কোটি ইউরো করা হয়েছে। 

‘ক্যাপোলোজি’র হিসাবে, এখন তিনজনেরই প্রত্যেকের বার্ষিক মোট বেতন দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার ইউরো। এতে রিয়ালের আক্রমণভাগের ‘ত্রয়ী’র মধ্যে অস্বস্তি দূর হয়ে যাবে।

তিনজনই সুপারস্টার ও রিয়ালের আক্রমণভাগের প্রাণ। কাজেই তাদের মধ্যে কোনো ধরনের অস্বস্তি কিংবা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হোক সেটা চাইবে না রিয়াল ম্যানেজমেন্ট। তাই ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ দ্রুতই বিষয়টির মীমাংসায় এগিয়ে এলেন এবং তিনজনের বেতন সমান করে দিলেন। 

এমবাপ্পে, বেলিংহ্যাম ও ভিনিসিয়ুস—তিনজনেরই বেতন সমান ৩ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার ইউরো (২ কোটি ৬৩ লাখ ১৬ হাজার পাউন্ড)। এরপর ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবা। তাকে বছরে ২ কোটি ২৫ লাখ ইউরো দেয় রিয়াল (১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৭ হাজার পাউন্ড)। এছাড়া উরুগুয়ান মিডফিল্ডার ফেদেরিকো ভালভার্দে বছরে ১ কোটি ৬৬ লাখ ইউরো, বেলজিয়ান গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া বছরে ১ কোটি ৫০ লাখ ইউরো, জার্মান ডিফেন্ডার আন্তোনিও রুডিগার বছরে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ইউরো, ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার এদের মিলিতাও বছরে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ইউরো, ফরোয়ার্ড রদ্রিগো ১ কোটি ২৫ লাখ ইউরো, লুকা মডরিচ ১ কোটি ৪ লাখ ইউরো, এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা ও অরেলিন চুয়ামেনি উভয়ই ১ কোটি ২৫ লাখ ইউরো বেতন পান। 

বেলিংহ্যাম ও ভিনিসিয়ুসের বেতন বৃদ্ধির আগে বর্তমান স্প্যানিশ ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের ২২ জনের স্কোয়াডের জন্য ২০২৪-২৫ মৌসুমে মোট ২৭ কোটি ১২ লাখ ৭০ হাজার ইউরো পরিশোধ করার কথা ছিল শুধু বেতন বাবদ। সপ্তাহে খরচ ৫২ লাখ ১৬ হাজার ইউরোর বেশি। সর্বোচ্চ বেতন আগে ছিল এমবাপ্পের, এখন তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বেলিংহ্যাম ও ভিনিসিয়ুস। এর বেতন বাবদ ক্লাবের মোট ব্যয় এখন বাড়বে।

এদিকে, গত ৩০ আগস্ট শেষ হয় দলবদল। পরের মাসে লা লিগা প্রকাশ করে স্যালারি ক্যাপ বা বেতনসীমা। মৌসুমজুড়ে একটি ক্লাব সর্বোচ্চ কত টাকা খরচ করতে পারবে, সেটা ঠিক করে দেয় বেতনসীমা। সাধারণত একটি ক্লাবের আয়-ব্যয় এবং অর্থনৈতিক শক্তির ওপর ভিত্তি করে এ বেতনসীমা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ক্লাবগুলোর অতিরিক্ত ব্যয় কমাতে মূলত এ বিষয়টি আরোপ করা হয়। বেতনের এ সীমা মূল দল, একাডেমি পর্যায়ের সব খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের ওপরই মূলত আরোপ করা হয়। পাশাপাশি গ্রীষ্মে নিজেদের দলবদলের কার্যক্রম পরিচালনার সময়েও ক্লাবগুলোকে বিষয়টি নিয়ে সচেতন থাকতে হয়।

অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ট্রান্সফার মার্কেট’ ও ইয়াহু স্পোর্টের মতে, ২০২৪-২৫ মৌসুমের রিয়ালের সম্মিলিত ‘স্যালারি ক্যাপ’ ৭২ কোটি ৮০ লাখ ইউরো থেকে বাড়িয়ে ৭৫ কোটি ৫০ লাখ ইউরো করা হয়েছে, যা কিনা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার চেয়ে ৩০ কোটি ইউরো বেশি! বার্সার স্যালারি ক্যাপ ৫৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২৭ কোটি থেকে করা হয়েছে ৪৬ কোটি ৬০ লাখ ইউরো। এ পথে তারা টপকে এসেছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে, যাদের মোট স্যালারি ক্যাপ ৩১ কোটি ১০ লাখ ইউরো। 

এছাড়া রিয়াল সোসিয়েদাদ ১৬ কোটি, ভিয়ারিয়াল ১৩ কোটি ৬০ লাখ, রিয়াল বেতিস ১০ কোটি ৯ লাখ, জিরোনা ৯ কোটি ৪০ লাখ, সেল্টা ভিগো ৭ কোটি ৮০ লাখ, ভ্যালেন্সিয়া ৭ কোটি ৫০ লাখ, মায়োর্কা ৫ কোটি ৯০ লাখ, ওসাসুনা ৫ কোটি ২০ লাখ, ভায়েকানো ৪ কোটি ৫০ লাখ, ভায়াদোলিদ ৪ কোটি ২০ লাখ, লাস পালমাস ৪ কোটি, গেতাফে ৩ কোটি ৯০ লাখ, আলাভেস ৩ কোটি ৯০ লাখ, লেগানেস ৩ কোটি ৭০ লাখ, এস্পানিওল ৮৮ লাখ ও ঐতিহ্যবহুল দল সেভিয়ার বেতনসীমা ১৬ কোটি ৯০ লাখ ইউরো থেকে নেমে এখন ২৫ লাখ ইউরো!

বেলিংহ্যাম ও ভিনিসিয়ুসের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত খুবই যৌক্তিক। কেননা গত মৌসুমে রিয়ালের ১৫তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ে এ দুজন বড় অবদান রেখেছেন। এছাড়া চলতি মৌসুমে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেও স্টুটগার্টের বিপক্ষে রিয়ালের জয়ে অবদান রাখেন তারা। তাকে নিয়ে সাবেক ইংলিশ ফরোয়ার্ড মাইকেল ওয়েন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, ‘জুড দ্রুতই নিজেকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের কাতারে নিয়ে এসেছে। রিয়াল মাদ্রিদের মতো একটি দলে খেলা সহজ কথা নয়, কেননা সবার চোখ তোমার ওপর থাকবে এবং যেখানে খারাপ পারফর্ম করলেই তোপের মুখে পড়বে। আমরা দেখছি, জুড এ পরিস্থিতিকে দারুণভাবে জবাব দিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সেরা মান নিয়ে খেলে যাচ্ছে বিশ্বসেরাদের সঙ্গে। অবিশ্বাস্য। রিয়াল মাদ্রিদে সে বড় ম্যাচের এনার্জি, ক্ষুধা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিজের মধ্যে তৈরি করতে পেরেছে।’

ডেইলি মেইল, ইয়াহু স্পোর্ট, ট্রান্সফার মার্কেট, ক্যাপোলোজি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন