মাদারীপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ গেল ব্যবসায়ীর

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, মাদারীপুর

ছবি : বণিক বার্তা

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বোমা বিস্ফোরণে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। সময় দুটি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ, ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর লুটপাটের ঘটনা ঘটে। গতকাল শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে শহরের চরমুগরিয়া বাজারে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটে।

সংঘর্ষে নিহত ব্যবসায়ীর নাম ইকবাল বেপারী (৩০) তিনি চরমুগরিয়া মাস্টারকোলনী এলাকার সোলেমান বেপারীর ছেলে ও পেশায় একজন কসমেটিক ব্যবসায়ী। ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

পুলিশ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালে নিহত ইকবাল বেপারীর মোটরসাইকেলের সঙ্গে পাশ্ববর্তী হাওলাদার বাড়ির জিহাদ হাওলাদারের (১৬) ধাক্কা লাগে। ঘটনার জের ধরে ইকবালের দোকানে শুক্রবার সন্ধ্যায় হামলা চালায় হাওলাদার বাড়ির লোকজন। সময় ইকবালের সমর্থকদের সঙ্গে হাওলাদার বাড়ির লোকজনের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার সূত্র ধরেই শনিবার সন্ধ্যায় হাওলাদার, সরদার, মৃধা, বেপারী বংশের লোকজন একজোট হয়ে চরমুগরিয়া বাজারে নিজেদের আধিপত্য দেখাতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সময় ইকবালের সঙ্গে খান বংশের লোকজন এই হামলা প্রতিরোধ করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপ হাত বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার আঘাতে ইকবালসহ গুরুতর আহত হন অন্তত ১০ জন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ইকবালকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইকবালকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ঢাকায় নেয়ার পথেই মারা যান ইকবাল।


এর আগেই চরমুগরিয়া বাজারের নিহত ইকবালের দোকানসহ ২০টি দোকান, যুবলীগ নেতা জেলা পরিষদের  সদস্য নাঈম খানের বসত ঘর অফিস কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর লুটপাট চালানো হয়। ছাড়াও দুটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা।


খবর পেয়ে পুলিশ সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকাতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


এদিকে নিহতের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবি করেছেন নিহতের স্বজনরা। তাদের দাবি, মাদারীপুর পৌরসভার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাশার বেপারী, বিএনপি নেতা খলিল বেপারী, কালু মৃধা, সুলতান বেপারীর নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে। তারা ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার বিচার দাবি করেন।


নিহতের বড়ভাই বায়েজিদ বেপারী বলেন, আমরা সাত ভাইর মধ্যে ইকবাল আমার সপ্তম ভাই। সামান্য একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওরা আমার ভাইটারে বোমা মেরে খুন করলো। এই ঘটনার সঙ্গে হাওলাদার, সরদার, মৃধা, বেপারী বংশের লোকজন জড়িত। তাদের বিচার চাই।


অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে মাদারীপুর পৌরসভার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাশার বেপারী বলেন, সংঘাতের বিষয় আমাদের কোনো ইন্ধন নেই। কীভাবে কি হয়েছে, তাও বলতে পারবো না। আমরা সব সময়ই এলাকায় শান্তি-সম্প্রতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে এসেছি। তবুও একটি পক্ষ অন্য পক্ষকে ফাঁসাতে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে বারবার সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।

মাদারীপুর সদর মডেল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম সালাউদ্দিন বলেনআধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে বোমার আঘাতে আহত এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়েছে। এর আগেও চরমুগরিয়া বাজারে এই পক্ষগুলো সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে গামলার সময় ভাংচুর ওলটপালট করা হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান। আগুন দেয়া হয়েছে ঘরবাড়িতে। এ সময় আতাউর রহমান টিটু খানের দুটি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ এবং জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের সদস্য নাঈম খানের বসতঘর অফিস কক্ষের ব্যাপক ভাঙচুর লুটপাট করা হয়।


ক্ষতিগ্রস্ত আতাউর রহমান টিটু খান লেন, ৪০ বছর চরমুগরিয়াতে এই ধরনের তাণ্ডবের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের বংশের লোকজন হাওলাদার, সরদার, মৃধা, বেপারী বংশের লোকজনের হামলা ঠেকাতে গেলে ওরা আমাদের টার্গেট করে হামলা করে। আশেপাশের গ্রাম থেকে লোক ভাড়া করে এনে ওরা হামলা চালায়। ওরা আমার দুটি ঘরে ভাংচুর, লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। কোনোমতে প্রাণ নিয়ে আমরা বেঁচে আছি। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।


আরেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী নাদিম খান বলেন, আমাদের বাসায়  আমার ভাই নাঈম খানের অফিস কক্ষের তালা ভেঙে ভাংচুর লুটপাট চালায় একদল সন্ত্রাসী। অফিস কক্ষে থাকা ২২ লাখ টাকাও ওরা লুট করে নিয়ে যায়।


স্থানীয় গিয়াসউদ্দিন খান বলেন, এই সংঘর্ষ, লুটপাট ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলতে থাকলেও পুলিশ, সেনা সদস্যরা এগিয়ে আসেনি। তাদের বারবার ফোন করা হলেও তারা সংঘর্ষের একদম শেষে এসেছে। দ্রুত পুলিশ, সেনারা চলে আসলে এমন রক্তক্ষয়ী সংঘাত হতো না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন