অস্ত্রোপচার করা আঙুল নিয়েই কি খেলছেন সাকিব

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সাকিব আল হাসান

বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা তো বটেই, অনেকের চোখে সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান মাঠে নামা মানেই কোনো না কোনো রেকর্ডের জন্ম হওয়া। ভারতের সঙ্গে চলমান টেস্ট সিরিজেই তিনি দারুণ এক রেকর্ডের সামনে। পঞ্চম অলরাউন্ডার হিসেবে চার হাজার রান ও ২৫০ উইকেটের মাইলফলক থেকে তিনি মাত্র ৮ উইকেট দূরে। এ চেন্নাই টেস্টেই তাকে নিয়ে জানা গেল চমকপ্রদ একটি তথ্য। নখদন্তহীন বোলিংয়ের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, আঙুলে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন সাকিব। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন চেন্নাইয়ে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করা তামিম ইকবাল।

সাকিব দীর্ঘদিন ধরেই টেস্টে বাংলাদেশের সেরা বোলার। তবে এখন আগের মতো চাপ নিতে পারছেন না। চেন্নাই টেস্টে তো আরো কম। চিপকে প্রথম ইনিংসে বোলিংয়েই এসেছেন তিনি ৫৩তম ওভারে। আর দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ে আসেন দশম ওভারে। যদিও সাকিব ছিলেন অচেনা এক বোলার। ১৩ ওভার বোলিং করে ৭৯ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। পাকিস্তান সফরে এবং তারপর কাউন্টি ক্রিকেটে ভালো বোলিং করে এলেও চেন্নাইয়ে চেনা যাচ্ছিল না সাকিবকে। এরপর উত্তর খুঁজতে গিয়েই বেরিয়ে এল চমকপ্রদ তথ্য। 

সাকিবের দেরিতে বোলিং করতে আসা, অনেক কম বোলিং করা ও বোলিংয়ের ধার কমে যাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল ধারাভাষ্যকারদের মধ্যে। এর মধ্যেই ভারতের সাবেক স্পিনার মুরালি কার্তিক জানালেন বিস্ফোরক এক তথ্য, যা নতুন প্রশ্ন ও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

চেন্নাই টেস্টের তৃতীয় দিন সকালে মাঠে সাকিবের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় ধারাভাষ্যকার কার্তিককে। পরে ধারাভাষ্যের এক পর্যায়ে কার্তিকের কাছে তামিম জানতে চান, সাকিবের সঙ্গে তার কী কথা হলো এবং এত পরে বোলিংয়ে আসা বা কম বোলিং করা নিয়ে কিছু জানা গেল কিনা। কার্তিক তখন জানালেন চমকে ওঠার মতো তথ্য। তাকে সাকিব জানিয়েছেন যে তার তর্জনিতে অস্ত্রোপচার করানো হয়েছে এবং সেই আঙুল তিনি ঠিকভাবে নাড়াতে পারছেন না এখনো। কিছুটা ফুলে আছে সেখানে, তাই বল গ্রিপ করার সময় সেভাবে ‘ফিল’ পাচ্ছেন না। এছাড়া তার কাঁধেও একটু সমস্যা আছে। তাই এত কম বোলিং করছেন সাকিব।

পরে ধারাভাষ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন টিম ম্যানেজমেন্টের দিকে ছুড়ে দিলেন তামিম। তিনি বলেন, ‘মুরালি কার্তিক যা বললেন, সত্যিই যদি সাকিবের আঙুলে সমস্যা থাকে, তাহলে তো টিম ম্যানেজমেন্টের আগে থেকেই তা জানার কথা। তিনি ঠিকমতো বল করতে পারছেন না, মানে বাংলাদেশ চারজন প্রথম সারির বোলার নিয়ে খেলছে। টিম ম্যানেজমেন্টের তো এটা জানার কথা! অবশ্যই এ ব্যাপারটি তাদের দেখা উচিত।’

বাংলাদেশের স্কোয়াডে দুই বিশেষজ্ঞ স্পিনার আছেন—তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। সাকিবের আঙুলে সমস্যা থাকলে বিকল্প বেছে নেয়ার সুযোগ ছিলই।

চেন্নাই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৮ ওভারে দিয়েছেন ৫০ রান (৬.২৫)। দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি ছিলেন ব্যয়বহুল। ১৩ ওভারে খরচ করেন ৭৯ রান। অর্থাৎ দুই ইনিংস মিলিয়ে ২১ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছেন ১২৯! ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৬.১৪ করে। উইকেট পাননি একটিও। ব্যাট হাতে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩২ রান করলেও তিনি রবীন্দ্র জাদেজার স্পিনের বিপরীতে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে যেভাবে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন, তাও সমালোচনার জন্ম দেয়। 

তবে সাকিবের সেই অস্ত্রোপচার ঠিক কোন সময়ে হয়েছে, সেটি জানাননি কার্তিক। তার আঙুলে অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে তথ্যটা একেবারেই নতুন। সেটি হয়ে থাকলেও কীভাবে তা সম্ভব, এটাও একটা প্রশ্ন। দেশের এক শীর্ষ দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কিছুদিন সাকিব খেলার মধ্যেই আছেন। পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ শেষ হয়েছে ৩ সেপ্টেম্বর। এরপর সাকিব যান ইংল্যান্ডে। সারের হয়ে ১২ সেপ্টেম্বর মাঠে নামেন সমারসেটের বিপক্ষে। সেই ম্যাচ শেষ হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর। ওই ম্যাচে সাকিব দুই ইনিংস মিলিয়ে বোলিং করেছেন প্রায় ৬৪ ওভার। উইকেট নিয়েছেন নয়টি। ম্যাচ শেষ করেই উঠে পড়েন বিমানে, ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে চেন্নাইয়ে দলের সঙ্গে যোগ দেন তিনি। পাকিস্তান থেকে ইংল্যান্ড গিয়ে ম্যাচ খেলতে নামার আগে সময় পেয়েছেন ৫ থেকে ৬ দিন। এত অল্প সময়ের মধ্যে আঙুলে অস্ত্রোপচার করিয়ে কোনোভাবেই খেলা সম্ভব নয়।

কোনো খেলোয়াড়ের অস্ত্রোপচার হলে তা জানেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী। যদিও তিনি সাকিবের আঙুলে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে কিছু জানেন না। এক শীর্ষ দৈনিককে তিনি বলেন, ‘সাকিব কিন্তু আমাদের কাছে আঙুল নিয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। এটা ঠিক, ওর ওখানে (আঙুলে) চিড় ছিল। তখন আঙুল বেঁধে রেখেছিল কিছুদিন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হলো। সেখানে তো আঙুল নিয়ে তার কোনো অভিযোগ শুনিনি। এরপর সার্জারি হলে তো আমরা জানতাম। তার সর্বশেষ সার্জারি হয়েছিল সেই এশিয়া কাপের সময় (২০২৩ সালে)। এরপর সার্জারি হয়নি, ফ্র্যাকচার হয়েছে, ২০২৩ বিশ্বকাপে ভারতে।’

গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচে বাম হাতের তর্জনী ভেঙে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ না খেলে দেশে ফিরে আসেন সাকিব। ভেঙে যাওয়া সেই আঙুলে এখনো অস্বস্তি থেকে যেতে পারে বলে ধারণা দেবাশীষের। তিনি বলেন, ‘সে তো মোটামুটি খেলছেই। এমন হতে পারে, ওর হয়তো এখন কিছুটা অস্বস্তি লাগছে। এটা থাকতে পারে। একটা আঙুল যদি ভেঙে যায়, তখন কিন্তু সেটা আর আগের জায়গায় আসে না। এটা তো ভাঙা জিনিস। একদমই আগের মতো হবে না। সে ওটাকে ম্যানেজ করে খেলছে। আমাদের হয়তো জানায়নি। কিন্তু অস্বস্তি থাকতেও পারে।’

৩৭ বছর বয়সী সাকিব বাংলাদেশের হয়ে ৬৯ টেস্টে নিয়েছেন সর্বোচ্চ ২৪২ উইকেট, রান করেছেন ৪,৫৪৩। সেঞ্চুরি করেছেন ৫টি। এছাড়া ওয়ানডেতে ৭,৫৭০ রান ও ৩১৭ উইকেট এবং টি-টোয়েন্টিতে ২,৫৫১ রান ও ১৪৯ উইকেট নিয়েছেন। 

টেস্টে বাংলাদেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সাকিব উইকেট শিকারে আছেন শীর্ষে। ১৯৫ উইকেট নিয়ে দুইয়ে তাইজুল ইসলাম ও মিরাজের শিকার ১৭৭টি। ওয়ানডেতে রানে তিনে ও টি-টোয়েন্টিতে শীর্ষে সাকিব। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডটা তারই দখলে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন