টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু

গ্রুপে গ্রুপে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস

ক্রীড়া ডেস্ক

ছবি: আইসিসি
Default Image

টেক্সাসের ডালাস শহরে আজ স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠছে নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরের। এ আসরের মধ্য দিয়ে ক্রিকেটের পুরনো দ্বৈরথও ফিরছে। ক্রিকেটের চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর লড়াইয়ের দেখা মেলে এখন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে, তারও আগে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে। বিশেষ করে, অ্যাশেজ সিরিজে দেখা মেলে সাদা পোশাকের ক্রিকেটও কতটা উত্তাপ ছড়াতে পারে। তবে এ দুটি দ্বৈরথেরও অনেক আগে ক্রিকেটের লড়াই হতো যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার। অন্যান্য খেলা জনপ্রিয়তা লাভ করায় দুটি দেশে এ খেলা যেন হারিয়েই যায়। অবশেষে নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে আমেরিকান প্রতিবেশী দুই দেশের ক্রিকেট দ্বৈরথ ফিরছে। ১৮৪৪ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিল এই দুটি দেশ। আজ সকালে ২০ দলের নবম টি-টোয়েন্টি আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা, ডালাসে ফিরে আসছে ১৮০ বছর আগের পুরনো দ্বৈরথ। উত্তর আমেরিকায় ক্রিকেট ক্রমে হারিয়ে যেতে বসলেও কোথাও কোথাও আবার ফিরছে কিংবা জমছেও। এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে ছোট-বড় ২০টি দল। এ আসরে পরিষ্কার কোনো ফেভারিট নেই। দুবারের সাবেক চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঐতিহ্যবহুল কিছু ক্রিকেট ভেন্যুতে সেমিফাইনাল ও ফাইনালসহ অধিকাংশ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। তবে ডালাস, নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডার পিচও কতিপয় দলের নকআউট পর্বের ভাগ্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে। 

গ্রুপ-এ

সদ্যই টেস্ট খেলুড়ে দেশ র‍্যাংকিংয়ে দশ ধাপ এগিয়ে থাকা দল বাংলাদেশকে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১-এ হারিয়ে দেয়ায় দারুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামছে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশকে হারানোর পরই হুংকার দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পেস বোলার আলী খান। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষুধার্ত এবং সামনে যাকে পাই তাকেই শিকার করব। আমি নিশ্চিত, যুক্তরাষ্ট্র কিছু অঘটন ঘটাবে।’

তবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত, বড় কোনো অঘটন না হলেও এ গ্রুপ থেকে ভারত ও পাকিস্তানই উঠবে সুপার এইট পর্বে। এ গ্রুপের পঞ্চম দল আয়ারল্যান্ড।  

ভারতীয় দলটি অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটার। প্রথম আটটি বিশ্বকাপ খেলে নবম বিশ্বকাপে নামবেন মাত্র দুজন ক্রিকেটার। এই দুই খেলোয়াড়ের একজন রোহিত, অন্যজন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। ২০০৭ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয় করা ভারত এবার আমেরিকার দুই দেশে দ্বিতীয় শিরোপার স্বপ্নে খেলতে নামছে। রোহিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলেও কোহলির জন্য এটাই হতে পারে প্রথম। হয়তো এবার, নয়তো কখনই নয়। সদ্যই বিশ্বকাপ ফাইনালে পরাজিত হওয়ার যন্ত্রণা এখনো দগদগে তাদের মনে। গত বছর নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে তারা হেরে যায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে। সেই কষ্ট নিয়েই দলটি বিশ্বকাপ খেলতে মাঠে নামছে। 

ফাইনালে ওঠা কিংবা শিরোপা জয়ের ব্যাপারটি একটু পরের হিসাব। আপাতত ক্রিকেট বিশ্ব বুঁদ হয়ে আছে ভারত-পাকিস্তান মহাদ্বৈরথ নিয়ে। ৯ জুন নিউইয়র্কের নবনির্মিত নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ৩৪ হাজার দর্শক ধারণক্ষম এ স্টেডিয়ামে একটি সিটও যে খালি থাকবে না, সেটি চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায়। 

সদ্যই আইপিএল খেলে যাওয়া ভারতীয় তারকারা বিশ্বকাপের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে। গতকাল রাতে তারা মুখোমুখি হয় বাংলাদেশের। এই এক ম্যাচের প্রস্তুতি দিয়েই তাদের বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে নামতে হচ্ছে। এদিকে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে বৃষ্টি। ইংল্যান্ডের মাঠে চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের দুটিই বৃষ্টিতে ভেসে যায়। বাকি দুটি তারা হেরে গেছে স্বাগতিকদের কাছে। তবু ২০০৯ আসরের চ্যাম্পিয়নরা আশাবাদী, ২০২২ আসরের রানার্সআপ ট্রফিটা এবার চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে রূপ দিতে পারবে তারা।

গ্রুপ-বি

‘বি’ গ্রুপে অপেক্ষাকৃত স্বস্তিদায়ক অবস্থানে রয়েছে ২০২১ সালের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও ২০২২ সালের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। গ্রুপের বাকি তিন দল যে নামিবিয়া, ওমান ও স্কটল্যান্ড। 

২০২২ সালে বিশ্বকাপ জেতার পর এ ফরম্যাটে খুব কম ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ড। যদিও তাদের তারকারা বিশ্বের শীর্ষ টি-টোয়েন্টি লিগে খেলে নিজেদের তৈরি করেছেন। অধিনায়ক জস বাটলার আইপিএলের প্লে-অফ না খেলেই দুটি সেঞ্চুরি করেছেন এবার। মঈন আলী, জনি বেয়ারস্টো, ফিল সল্ট, স্যাম কারানও আইপিএলে এবার দারুণ টুর্নামেন্ট কাটিয়েছেন।

আইপিএলে ঝড় তোলা তরুণ জ্যাক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ককে ১৫ জনের স্কোয়াডে রাখেনি অস্ট্রেলিয়া। পরে অবশ্য ট্রাভেলিং রিজার্ভ হিসেবে তাকে দলে যুক্ত করা হয়েছে। কেউ চোটে পড়লে তার ভাগ্য খুলতেও পারে। এর পরও মিচেল মার্শ, ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের নিয়ে গড়া সমীহ জাগানো ব্যাটিং ইউনিট তাদের। আবার বোলিং আক্রমণও ঈর্ষণীয়। সদ্যই কলকাতাকে আইপিএল শিরোপা জেতানো মিচেল স্টার্ক একটি ভালো স্পেলে যেকোনো দলের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিতে পারেন। তার সঙ্গে জস হ্যাজেলউড, প্যাট কামিন্স তো আছেনই। 

আফ্রিকান অঞ্চলের বাছাইপর্বে ছয় ম্যাচে অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে নামিবিয়া। বাছাইপর্বে তারা হারিয়েছে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয়া উগান্ডা ও টেস্ট দল জিম্বাবুয়েকে। ২০২২ সালের আসরে শ্রীলংকার বিপক্ষে জয় এখন পর্যন্ত নামিবিয়ার ক্রিকেটে স্মরণীয় সাফল্য। 

ওমান তৃতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে চলেছে। তারা দুবার নামিবিয়াকে হারিয়েছে। এবার আকিব ইলিয়াসের নেতৃত্বে খেলবে দলটি। টপ অর্ডার ব্যাটার আকিব ইলিয়াস ৪২.৫০ গড়ে ও ১৫৮.৩৮ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন।

গ্রুপ-সি

কেউ কেউ এটাকে বলছেন ‘গ্রুপ অব ডেথ’। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘরের মাঠে শিরোপা জিততে মরিয়া। নিউজিল্যান্ড ২০১৫ ও ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরেছে। বারবার শিরোপার এতটা কাছাকাছি গিয়েও নাগাল না পাওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে আরেকটি বিশ্বকাপ খেলতে নামছে কিউইরা। শিরোপা স্বপ্ন নিয়ে নামা কিউইদের জন্য নিশ্চিতভাবেই গ্রুপ পর্ব বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। তবে কাজটা এবার সহজও হবে না। উইন্ডিজ কিংবা কিউই উভয় দলকেই পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারে আফগানিস্তান। দুটি বড় দলকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মতো ব্যাটিং ও বোলিং ব্রিগেড রয়েছে রশিদ খানের দলে। 

রভম্যান পাওয়েলের নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে আছে টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বের অন্যতম সেরা সব খেলোয়াড়। নিকোলাস পুরান, জনসন চার্লস, ব্র্যান্ডন কিং, আন্দ্রে রাসেল, রোমারিও শেফার্ডরা প্রত্যেকেই ম্যাচ উইনার।

৪৯টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে ৪১টি জয় পাওয়া উগান্ডা কি কোনো চমক দেখাবে এবার? দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অংশগ্রহণটা স্মরণীয় করে রাখতে চাইবে পাপুয়া নিউগিনিও।

গ্রুপ-ডি

বাংলাদেশের গ্রুপ-ডি। নাজমুল হোসেন শান্তর দল আছে বলেই শুরু থেকেই বাংলাদেশী সমর্থকদের কাছে আলোচনায় থাকবে গ্রুপটি। শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা, সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা, ইউরোপের জায়ান্ট কিলার নেদারল্যান্ডস আর এশিয়ার উদীয়মান ক্রিকেট দল নেপাল খেলবে এ গ্রুপে। বিশ্বকাপের ‘চোকার্স’ নাম পেলেও অন্তত গ্রুপ পর্বে প্রোটিয়ারা কোনো সমস্যায় হয়তো পড়বে না। তবে বাংলাদেশের জন্য কাজটি কঠিন হতে পারে শ্রীলংকা আছে বলে। সেই সঙ্গে ডাচরাও অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকা দলে পাওয়ার হিটারের ছড়াছড়ি। কুইন্টন ডি কক, হাইনরিখ ক্লাসেন, এইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলার ও রিজা হেনড্রিক্সরা প্রত্যেকেই প্রতিপক্ষ বোলারদের ধ্বংস করার সামর্থ্য রাখেন। কাগিসো রাবাদা, এনরিখ নরকিয়া, কেশব মহারাজ ও তাবরাইজ শামসিকে নিয়ে গড়া বোলিং অ্যাটাকও বেশ শক্তিশালী। 

২০১৪ আসরের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকার বোলিং অ্যাটাকে রয়েছেন স্পিনার হাসারাঙ্গা ডি সিলভা, মাহিশ থিকসানা, মাথিসা পাথিরানা। আর ব্যাটিং অর্ডারে কুশল মেন্ডিস, চারিথ আসালঙ্কা, দাসুন শানাকারা দেশকে শিরোপা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন