যশোরে ১ শতাংশও এগোয়নি এক পণ্য এক পল্লী প্রকল্প

আব্দুল কাদের, যশোর

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)। পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশে-বিদেশে বাজার সৃষ্টির জন্য ‘এক পণ্য এক পল্লী’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বিআরডিবির। তবে যশোরের ছয় উপজেলায় প্রকল্পের কাজ ১ শতাংশও এগোয়নি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সব উপজেলায় পণ্যভিত্তিক জীবিকায়ন পল্লী গঠন করার কথা থাকলেও গত দুই বছরে মাত্র দুটি উপজেলায় এ পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে। প্রকল্পটি সফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতি উপজেলায় একটি করে পল্লী গড়তে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল কিন্তু চলতি অর্থবছরে কোনো অগ্রগতিই হয়নি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিআরডিবির আওতায় সারা দেশে পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্পের অধীনে এক পণ্য এক পল্লী প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রথমে পণ্যভিত্তিক একটি এলাকা নির্বাচন করা হয়। সেই এলাকায় একটি শিল্প পল্লী প্রতিষ্ঠা করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সব ধরনের প্রমোশনাল সুবিধা দিয়ে স্বাবলম্বী করাই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো ও দেশে-বিদেশে বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে উন্নত পল্লী গঠন করা। দুই বছর আগে যশোরের মাত্র দুটি উপজেলায় এক পণ্য এক পল্লী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মধ্যে টায়ার-টিউবজাত পণ্য নিয়ে একটি পল্লী গঠন করা হয়েছে মণিরামপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গায়। অন্যটি কেশবপুর উপজেলার আলতাপোলে কাঠশিল্প পল্লী। এছাড়া প্রকল্পের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২১ এপ্রিল যশোর কালেক্টরেট সভাকক্ষে প্রকল্পের জেলা সমন্বয়ন কমিটির সভায়ও এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জেলার আটটি উপজেলায় একটি করে পল্লী গঠনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে কোনো উপজেলায় সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। অথচ যশোর সদরসহ অন্যান্য অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদিত হয়।

যশোরের উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে কথা বলেন কলামিস্ট আমিরুল ইসলাম রন্টু। এ প্রসঙ্গে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শহরের বকচরে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, রূপদিয়ায় ক্রিকেট ব্যাটের গ্রাম, সাতমাইল-হৈবতপুরের সবজি জোন, খাজুরার গুড়-পাটালি, বিভিন্ন উপজেলায় কুমাররা মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেন। এছাড়াও জেলার নকশিকাঁথা, গদখালীর ফুল, নওদাগ্রামে তাঁত শিল্প নিয়ে এমন পল্লী করার সুযোগ রয়েছে।’

এ ব্যাপারে বিআরডিবি যশোরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কেশবপুর ও মণিরামপুর ছাড়া অন্য কোনো উপজেলায় এক পণ্য এক পল্লী প্রতিষ্ঠা করা যায়নি ঠিকই, তবে চেষ্টা চলছে। এমন পল্লী গঠন করা গেলে সেই জনপদের অর্থনীতির গতি পাল্টে যাবে। প্রকল্প এলাকার উদ্যোক্তাদের একত্র করে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এছাড়া মূলধন গঠন, স্বল্পসুদে ঋণ, পণ্য উৎপাদনে সহযোগিতা ও আধুনিকায়ন এবং বাজার সৃষ্টিতেও সহযোগিতা করা হবে। এতে প্রকল্প এলাকায় অর্থনৈতিক গতিশীলতা আসে। তারা স্বাবলম্বী হবে। আবার মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যও থেমে যাবে।’

সরকারের এমন একটি সম্ভাবনাময় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু তারা কেন সফল হচ্ছেন না তার সঠিক উত্তর মেলেনি।

এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা এসএম শাখির হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌শার্শায় এখনো ‍এক পণ্য এক পল্লী প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। কেন যায়নি সেটা আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলতে পারবেন। আমি এ উপজেলায় নতুন এসেছি। কোন গ্রামে বা অঞ্চলে কী পণ্য উৎপাদন হয় সেটা খোঁজ নেয়া শুরু করেছি মাত্র।’

মণিরামপুর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার ঘোষ বলেন, ‘২০২২ সালের ১ এপ্রিল মণিরামপুরের খানপুর ও বালিয়াডাঙ্গা ঋষিপল্লীতে টায়ার-টিউবজাত পণ্য নিয়ে এক পণ্য এক পল্লী যাত্রা শুরু করে। পণ্য উৎপাদনে তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতাও করা হচ্ছে। পল্লীর উদ্যোক্তাদের ৪ শতাংশ সুদে ৭০ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এতে তাদের উৎপাদন আরো বেড়েছে। উপার্জনও বেড়েছে।’

একই কথা বলেন, কেশবপুর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সুজন কুমার চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘আলতাপোলের কাঠশিল্প পল্লীতে ৪ শতাংশ সুদে ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছি। এ টাকা থেকে কেউ মেশিন, কেউ কাঠ ক্রয় করেছেন। এ থেকে তারা ফুলদানি, প্লেট, চায়ের কাপসহ কাঠের সামগ্রী তৈরি করে বিক্রি করছেন। এতে দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। উপজেলায় কীভাবে আরো অন্য পণ্যের শিল্প গড়ে তোলা যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন