মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীর সংখ্যায় গরমিল

দূতাবাসের হিসাবে ৫৫ হাজার, ৩১ হাজার বলছে বিএমইটি

শফিকুল ইসলাম

ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

ছাড়পত্র ও ভিসা পাওয়ার পরও উড়োজাহাজের টিকিট না পাওয়ায় শেষ দিনে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি হাজার হাজার বাংলাদেশী কর্মী। তবে যেতে না পারা কর্মীর সংখ্যা ঠিক কত, সে হিসাবে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী এ সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার। কিন্তু বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বলছে, এ সংখ্যা ৩১ হাজারের মতো। অর্থাৎ দূতাবাস ও বিএমইটির হিসাবে ব্যবধান ২৪ হাজারের মতো। 

নতুন করে অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশী কর্মীদের গত শুক্রবার ছিল মালয়েশিয়া যাওয়ার শেষ দিন। এদিন সকাল থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় জড়ো হতে থাকেন উড়োজাহাজের টিকিটি না পাওয়া কর্মীরাও। কিন্তু রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তাদের সিংহভাগই মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হতে পারেননি।

ভুক্তভোগীরা জানান, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ভিসা ও কাগজপত্র সরবরাহ করলেও উড়োজাহাজের টিকিট দেয়নি। যদিও টিকিটের কথা বলে কারো কারো কাছ থেকে লাখ টাকাও নিয়েছে তারা। 

শেষ দিন সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ১২টি ফ্লাইটে দুই হাজারের বেশি যাত্রী মালয়েশিয়ায় গেছেন। গত মার্চে বিদেশী কর্মী প্রবেশের জন্য ৩১ মে সময়সীমা বেঁধে দেয় মালয়েশিয়া সরকার। 

মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ১৫ দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার সাইফুল ইসলাম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সোল ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস লিমিটেডের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চুক্তি হয় তার। গত ২৯ মে ফ্লাইট হওয়ার কথা জানায় এজেন্সি। বিমানবন্দরে গিয়েও টিকিট না পাওয়ায় সেদিন থেকেই ৩১ মে পর্যন্ত বিমানবন্দরেই অপেক্ষা করেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত আর টিকিটে মেলেনি তার। এজেন্সি থেকে জানানো হয় শুক্রবার-শনিবার ফ্লাইট বন্ধ। কোম্পানিকে মেইল করা হয়েছে যাতে রোববার বিশেষভাবে কর্মীদের নেয়া হয়।’

কর্মী ভিসায় মালয়েশিয়া যেতে বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। বিএমইটির তথ্যমতে, গত ২১ মে পর্যন্ত ৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত ছিল ২১ মের পর বিএমইটি আর কোনো ছাড়পত্র দেবে না। তবে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ছাড়পত্র দেয় বিএমইটি। ২১-৩০ মে পর্যন্ত আরো ১ হাজার ১১২ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। এ হিসাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন পান ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ জন। এর মধ্যে ৩০ মে পর্যন্ত দেশটিতে ৪ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৫ জন কর্মী গেছেন বলে জানায় বিএমইটি। আর ৩১ মে পর্যন্ত ১২টি ফ্লাইটে গেছেন আরো প্রায় ২ হাজার। সে হিসাবে প্রায় ৩১ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি।

তবে কর্মী যাওয়ার শেষ দিন গত শুক্রবার মধ্যরাতে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামীম আহসান বলেন, ‘৫ লাখ ২৭ হাজারের বেশি চাহিদাপত্র সত্যায়ন করেছে হাইকমিশন। শুক্রবার পর্যন্ত পৌঁছেছে ৪ লাখ ৭২ হাজারের বেশি কর্মী। এ হিসাবে প্রায় ৫৫ হাজার কর্মী নির্ধারিত সময়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারেননি।’

শামীম আহসান জানান, যারা ভিসা পেয়েও আসতে পারেননি, তারা যেন পরবর্তী সময়ে অগ্রাধিকার পান, সে ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। 

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনারের প্রেস উইংয়ের সঙ্গে বণিক বার্তা থেকে যোগাযোগ করা হলে প্রথম সচিব সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ জানান, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় ৪ লাখ ৭২ হাজার কর্মী প্রবেশ করেছেন। তবে বিএমইটির তথ্যমতে ৩১ হাজার কর্মী দেশটিতে প্রবেশ করতে পারেনি। যে তথ্যের কথা শুনেছি তা বিএমইটি ভালো বলতে পারবে। 

এদিকে নিয়োগদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথা জানিয়েছে দূতাবাস। ভিসা পাওয়ার পরও যেসব বাংলাদেশী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তাদের দ্রুত সেখানে পাঠানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়।

মালয়েশিয়ায় কর্মী যেতে না পারার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। গতকাল সিলেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে দূতাবাস ও মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছিলে কোটাভিত্তিক। কোটা পূরণের লক্ষ্যে আমাদের মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি আছে, তাদের সঙ্গে আমরা বসেছি। বায়রার সঙ্গেও কয়েকবার বসেছি, আলাপ-আলোচনা করেছি। গত মাসের ১৫ তারিখ সর্বশেষ মিটিংয়ে তাদের বলেছি কতজন বাকি আছে তার চূড়ান্ত তালিকা করার জন্য। কতজন যাবে বা না যাবে, ভিসা কতজনের বাকি, এসবের তালিকা দাখিল করার জন্য বলেছি। কিন্তু তারা আমাদের কিছুই জানায়নি।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন