ভারতকে বাদ দিয়ে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্কের বিস্তার সম্ভব নয়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের জায়গাও ভারত। গতকাল ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০ এবং এশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন আলোচকরা। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি) এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ যৌথভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
আলোচনায় মার্কিন নির্বাচন-২০২০-এর গতি-প্রকৃতি, বাংলাদেশ ও আমেরিকার সম্পর্ক এবং এশিয়ার ভূরাজনীতির ওপর এর প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়। এতে সূচনা বক্তব্য রাখেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. হারিছুর রহমান। এসআইপিজির পরিচালক ও এনএসইউর রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শেখ তৌফিকের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম।
ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাজ কুমার কোঠারি বলেন, জো বাইডেন ক্ষমতায় এলেও ভারত-মার্কিন সম্পর্ক গভীর হবে। কারণ ভারতকে বাদ দিয়ে আমেরিকার পক্ষে এশিয়ায় সুসম্পর্কের বিস্তৃতি সম্ভব নয়।
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির ওপর মার্কিন নির্বাচনের প্রভাব বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে এনএসইউর এসআইপিজির সিনিয়র ফেলো ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের জায়গা হলো ভারত। ভারত ও চীনের মধ্যকার সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব ভারতকে আরো বেশি যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক নীতি গ্রহণ করতে উৎসাহ জোগাচ্ছে।
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ মার্কিন নির্বাচন এবং পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে বলেন, চীনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক আধিপত্যকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ট্রাম্প ও বাইডেন উভয়ই একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশই মূলত নির্বাচনে জো বাইডেন আসুক সেই প্রত্যাশায় রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, ট্রাম্পই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন কেবল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, পুরো বিশ্বের জন্য নয়।
এশিয়ায় মার্কিন নির্বাচনের প্রভাব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, ভূরাজনীতির পাশাপাশি এশিয়া ক্রমাগত অর্থনৈতিক ভরকেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। সে প্রেক্ষাপটে চীনের উত্থান ট্রাম্প ও বাইডেন উভয়কেই একটি চিন্তার মধ্যে রেখেছে। আমেরিকা ট্রাম্পের সময়ে যুদ্ধ করেনি ঠিক। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় লোক মেরেছে। আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। অথচ বৈশ্বিক গণতন্ত্রের ধারক হিসেবে আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র ভূমিকা না নিলে বিশ্বজুড়ে পপুলিস্ট ও টোটালিটারিয়ান রেজিম তৈরি হয়।
অনুষ্ঠানে জো বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও এসআইপিজির সিনিয়র ফেলো এম শহীদুল হক বলেন, জো বাইডেন জয়ী হলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে গণতন্ত্র, শরণার্থী ও মানবাধিকারবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গিতে এক ধরনের মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, বর্ণবাদমুক্ত ও ঘৃণা ছড়ানোর প্রবণতামুক্ত একটি বৈশ্বিক সমাজ গঠনে সঠিক নেতৃত্ব জরুরি। বিশ্বজুড়েই যে পপুলিস্ট রাজনীতির উত্থান, এক ডোনাল্ড ট্রাম্পের চলে যাওয়ার মধ্যে যদিও এর সুরাহা হবে না। তবে এ প্রেক্ষাপটে জো বাইডেনের ভূমিকা আশাব্যঞ্জক হবে বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মার্কিন নির্বাচন সম্পর্কে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে সামাজিক সহিংসতার একটি আশঙ্কা তৈরি করতে পারে।
বক্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যা যেমন বর্ণবাদ, চরম ডানপন্থা ও শ্বেতাঙ্গ চরমপন্থীবাদের উত্থান, ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার আন্দোলন, করোনা সমস্যার অব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আন্দোলন, তর্ক-বিতর্ক চলছে। বিশ্বায়নবিরোধী আমেরিকার কর্মকাণ্ড, আমেরিকার একলা চলো নীতি, বাণিজ্যযুদ্ধ, অভিবাসনবিরোধী নীতিমালা দেশে ও বিদেশে জনমতকে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় দ্বিধাবিভক্ত করছে।