করোনাভাইরাসের পুনঃসংক্রমণ নিয়ে আমরা যা জানি

বণিক বার্তা ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তিনি কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে ইমিউন। তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুনঃসংক্রমণের বিচ্ছিন্ন রিপোর্টগুলো সামনে এসেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে ইমিউনিটির সত্যতা আসলে কী?

এখন পর্যন্ত কভিড-১৯-এর ছয়টি পুনঃসংক্রমণের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে যাচাই না করা আরো অনেকগুলো এমন সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী দেখা গেছে। যদিও এটা তুলনামূলকভাবে লাখো সংক্রমণের খুবই সামান্য অংশ, তার পরও কি আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। ধাঁধা সমাধানের আগে আমাদের অবশ্য ইমিউনিটি বলতে কী বোঝায় তা বুঝতে হবে।

কীভাবে ইমিউনিটি কাজ করে

যখনই আমরা কোনো রোগজীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হই, আমাদের ইমিউন সিস্টেম দ্রুত চেষ্টা করে হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে এবং ক্ষতি হ্রাস করতে। আমাদের প্রথম সুরক্ষা লাইনটি আসে ইমিউন কোষ থেকে, যা সহজাত কোষ নামে পরিচিত। সচরাচর কোষগুলো হুমকি দূর করার জন্য যথেষ্ট হয় না। যেখানে আরো নমনীয় অভিযোজিত ইমিউন প্রতিক্রিয়া কার্যকর হয়, আমাদের লিম্ফোসাইটস।

লিম্ফোসাইটস আসে দুটি বৈচিত্র্য নিয়ে: বি লিম্ফোসাইটস, যা কিনা অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং টি লিম্ফোসাইটস, যেখানে কোষকে অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা সরাসরি জীবাণু আক্রমণকারীদের হত্যা করে।

যেহেতু অ্যান্টিবডিগুলো রক্তে পরিমাপ করা যায়, তারা প্রায়ই ভালো অভিযোজিত ইমিউন প্রতিক্রিয়া নির্দেশ করতে ব্যবহূত হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে আমাদের রক্তে অ্যান্টিবডির স্তর হ্রাস পেতে থাকে। অবশ্য এর মানে এই নয় যে সুরক্ষা হারিয়ে যায়। আমরা কিছু লিম্ফোসাইটস ধরে রাখতে পারি যা কিনা জানে কীভাবে হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়আমাদের মেমোরি কোষ। মেমোরি কোষ উল্লেখযোগ্যভাবে দীর্ঘস্থায়ী, আমাদের শরীরের চারপাশে অবস্থান নেয় এবং প্রয়োজনের সময় কার্যকর হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।

ভ্যাকসিন কাজ করে সম্ভাব্য মারাত্মক সংক্রমণের ঝুঁকি এড়িয়ে মেমোরি কোষ সৃষ্টির জন্য। এর ফলে ইমিউনিটি সৃষ্টি করা তুলনামূলকভাবে সহজ, যদিও সব সময় সহজ নাও হতে পারে।

যদিও আমাদের ইমিউন সিস্টেম বিবর্তিত হয়েছে বৈচিত্র্যময় বিশাল রোগজীবাণু মোকাবেলার জন্য। পাশাপাশি জীবাণু বিবর্তিত হয় ইমিউন সিস্টেম থেকে নিজেদের আড়াল করার জন্য।

কভিড-১৯-এর কারণ হচ্ছে ব্যাক্টোকরোনাভাইরাস, অনেকগুলো ব্যাক্টোকরোনাভাইরাস এরই মধ্যে মানবসমাজে দেখা যায়। যা মূলত সাধারণ সর্দি-জ্বরের কারণ হিসেবে পরিচিত। সর্দি-জ্বরের ভাইরাসের ইমিউনিটি ততটা শক্তিশালী নয় কিন্তু মারাত্মক অবস্থা যেমন মার্স বা সার্সের ক্ষেত্রে এটি অনেক বেশি স্থিতিশীল।

পরিসংখ্যান বলছে, সংক্রমণের তিন মাস পরও অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা সম্ভব, যদিও সার্স মার্সের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডিগুলো ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে হ্রাস পায়।

অবশ্যই অ্যান্টিবডি স্তর ইমিউনিটির একমাত্র নিদের্শক নয়। কভিড-১৯-এর ভাইরাস গাঠনিকভাবে সার্সের মতো। তাই স্থিতিশীল সুরক্ষা প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী হতে পরি।

আমরা কতটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হব?

কভিড-১৯-এর পুনঃসংক্রমণের মুষ্টিমেয় কয়েকটি কেস সামনে আসা মানেই কিন্তু ইমিউনিটি ঘটছে না এমন নয়। টেস্টিংয়ের সমস্যা কিছু ঘটনার জন্য দায়ী হতে পারে। কারণ সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পরও অনেক সময় ভাইরাস শনাক্ত হতে পারে। টেস্ট ভাইরাস আরএনএর সন্ধান করে এবং সেটি সংক্রমণের কারণ নয়।

বিপরীতভাবে আবার পরীক্ষার ফলস নেগেটিভ ফলও আসতে পারে, যখন পর্যাপ্ত ভাইরাল উপাদান চিহ্নিত না হয়। কারণ সে সময় শরীরে ভাইরাসের স্তর খুবই নিম্ন হতে পারে। আপাত নেগেটিভ ফল প্রথম দ্বিতীয় সংক্রমণের মাঝে ভাইরাসের নিম্নস্তরও দায়ী হতে পরে। আবার ইমিউনিটির সময়েও পুনঃসংক্রমণ ঘটতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ থাকতে পারে কিংবা উপসর্গ নাও থাকতে পারে। কারণ ইমিউনিটি মারাত্মক অবস্থা থেকে বাঁচিয়ে দেয়। তবে কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে কী ঘটছে তা জানতে আরো সময়ের প্রয়োজন হতে পারে।

দ্য কনভারসেশন থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন